উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘স্মরণ করুন সে দিনকে, যখন আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমামসহ ডাকব। অতঃপর যাদের ডান হাতে তাদের আমলনামা দেয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পড়বে এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি এখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং সবচেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট। আর আমরা আপনার প্রতি যা ওহী করেছি তা থেকে ওরা আপনাকে পদস্খলন ঘটাবার চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করেছিল, যাতে আপনি আমাদের উপর সেটার বিপরীত মিথ্যা রটাতে পারেন; আর নিঃসন্দেহে তখন তারা আপনাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত’ (সূরা বানী ইসরাইল : ৭১-৭৩)। এখানে ‘অন্ধ’ বলে বাহ্যিক অন্ধদের বুঝানো হয়নি। বরং যাদের মন হক্ব বুঝার ক্ষেত্রে, আল্লাহর নিদর্শনাবলী দেখার ক্ষেত্রে অন্ধত্ব গ্রহণ করেছে। হক্ব মানতে চায় না এবং নিদর্শনাবলী দেখতে চায় না এমন প্রকৃত অন্ধদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়’ (সূরা আল-হজ্জ : ৪৬)।
পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবনে যারা অন্ধ তারা যদি ঈমানদার হয় এবং সৎকাজ করে ও ধৈর্যধারণ করে তবে তাদের ব্যাপারে আল-কুরআন ও হাদীছে প্রশংসা বাণী এসেছে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি ভ্রুকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি আসল। আপনি কেমন করে জানবেন সে হয়ত পরিশুদ্ধ হত অথবা উপদেশ গ্রহণ করত, ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত’ (সূরা আল-আবাসা : ১৩)। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীছেও ঐ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ জানানো হয়েছে যারা অন্ধ হয়ে যাবার পর ধৈর্যধারণ করেছে। অতঃপর বলা হয়েছে যে, ‘তারা আখেরাতে অন্ধ হবে’। অর্থাৎ আখেরাতে তাদের অন্ধত্বের ধরন সম্পর্কে দু’টি মত রয়েছে। ১- তারা বাস্তবিকই শারীরিকভাবে অন্ধ হিসাবে হাশরের মাঠে উঠবে। এ অর্থের সমর্থনে কুরআনের অন্যত্র এসেছে, ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়’ (সূরা ত্বো-হা : ১২৪)। আরো এসেছে, ‘ক্বিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, মূক ও বধির করে’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৯৭)। ২- এ ছাড়া আয়াতের আরেক অর্থ করা হয়ে থাকে যে, তারা ক্বিয়ামতের দিন তাদের দুনিয়ার জীবনে যে সমস্ত দলীল প্রমাণাদি ব্যবহার করে হক্ব পথ থেকে দূরে থাকে, সে সব থেকে তাদেরকে অন্ধ করে উঠানো হবে। মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) এ অর্থ গ্রহণ করেছেন (তাফসীরে ইবনু কাছীর)।
প্রশ্নকারী : মতিয়ার রহমান, দিনাজপুর।