উত্তর : যদি কেউ কাউকে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করে, উৎসাহিত করে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাধা প্রদান না করে, তবে অবশ্যই সে তার গুনাহের অংশীদার হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ (তাফসীর ইবনে কাছীর, ২/১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।
এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠচিত্তে তাওবাহ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা খালিছ তাওবার মাধ্যমে শিরকের মত ধ্বংসাত্মক পাপও ক্ষমা করে দেন (সূরা আল-ফুরক্বান : ৭০; গিযাউল আলবাব, ২/৫৮১; আল-ই‘তিছাম, ২/২৮১; মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, ১৪/১৮৩-১৮৫ পৃ.)। অতএব তাকে বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার, আমালে ছালিহাহ, ছালাত আদায়, ছাদাক্বাহ ইত্যাদি করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবাহ করে, ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে’ (সূরা ত্বো-হা : ৮২)। নবী (ﷺ) বলেছেন, التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ" ‘গুনাহ থেকে তাওবাহকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য (ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫০, সনদ হাসান)।
আর কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। আল্লাহ কারো উপর যুলম করবেন না। আর কেউ অন্য কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। আল্লাহ্ বলেন, প্রত্যেকেই স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৬৪)। উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আয়াত আরো রয়েছে। মূলত এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এই সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, ক্বিয়ামতের দিন যে শাস্তি দেয়া হবে তা নিপুণতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতেই হবে। আমলের প্রতিফল আমলকারীই পাবে। ভাল লোককে ভাল প্রতিদান এবং মন্দ লোককে মন্দ প্রতিদান দেয়া হবে। আর নিশ্চিতরূপে একজনের পাপের কারণে অপরজনকে শাস্তি দেয়া হবে না।
যেমন আল্লাহ বলেন, ‘কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না, কারো পাপের বোঝা গুরুভার হলে সে যদি অন্যকে তা বহন করতে আহ্বান করে, তবুও কেউ তা বহন করবে না, যদিও সে নিকটাত্মীয় হয়’ (সূরা আল-ফাত্বির : ১৮)। তবে যারা অন্যায়কে অন্যায় মনে করে প্রতিবাদ করে না তারা শাস্তি পাবে, বরং তাকে এজন্য শাস্তি দেয়া হবে যে, সে তার দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন। সে প্রতিবাদ না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। বাধা প্রদান তো করেই না, উপরন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং বোবা, বধির ও অন্ধ শয়তানের ন্যায় চোখ বুজে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করে। আর তাদের অবাধ বিচরণে ও তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করণার্থে সার্বিকভাবে সহযোগিতার হস্তদ্বয় প্রসারিত করে বলেই তারা অপরাধী (মির‘আতুল মাফাতীহ, ৬/২৩৯৯; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ২/৪৮ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৫১১০৪)।
প্রশ্নকারী : রিদুওয়ানুল কবির, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।