উত্তর : ‘হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দের অর্থ ‘শোধিত সন্ধ্যা’ বা ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। মূলত এই উৎসবটি এক অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার এবং ইসলাম বিরোধী ভ্রান্ত বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। গবেষকদের মতে, হ্যালোইনের রাত নিয়ে অনেক ধরনের মিথ্যা বা পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। যেমন: (ক) বলা হয়, প্রায় ২০০০ বছর আগে ‘কেল্টিক’ নামে এক জাতি বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করত। তাদের ধারণা ছিল, অক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ। যে রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই কেল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পড়ত। তারা নির্ঘুম রাত কাটাতে আগুন জ্বালিয়ে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরত ও মন্ত্র জপত। আর সময়ের পরিক্রমায় কেল্টিক জাতির ‘সাহ-উইন’ উৎসবই বর্তমানে ‘হ্যালোইন’ উৎসব হিসাবে পালিত হচ্ছে।
(খ) কারো কারো মতে, এই রাতে দেবতা সামান সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি উড়ে বেড়ায় আকাশ জুড়ে। কখনো বা তিনি কড়া নাড়েন বিভিন্ন বাড়ির দরজায় (লধমড়হবংি২৪)।
(গ) ‘বাংলা উইকিপিডিয়া’-তে বলা হয়েছে, ‘আইরিশ, যুক্তরাজ্য, ওয়েলস সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ্বাস করত যে, প্রত্যেক নতুন বছরের আগের রাতে (৩১শে অক্টোবর) সাহেইন, মৃত্যুর দেবতা, আঁধারের রাজপুত্র, সব মৃত আত্মা ডাক দেয়। এই দিন মহাশূন্য এবং সময়ের সমস্ত আইনকানুন মনে হয় স্থগিত করা হয় এবং জীবিতদের বিশ্ব যোগদান করতে মৃত আত্মাদের অনুমোদন করে। তারা আরও বিশ্বাস করত যে, মৃত্যুর কারণে তারা অমর যুবক হয়ে একটি জমিতে বসবাস করত এবং আনন্দে ডাকা হতো ‘ঞরৎ হধহ ঙমব’। মাঝে মাঝে বিশ্বাস করত যে, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড অঞ্চলের ছোট পাহাড়ে কখনো কখনো মৃতরা পরীদের সাথে থাকে। একটি লোককাহিনী থেকে বর্ণিত আছে যে, সমস্ত মৃত ব্যক্তিরা ৩১শে অক্টোবর রাত্রিতে জীবিতদের বিশ্বে আসে আগামী বছরের নতুন দেহ নেয়ার জন্য। এজন্য গ্রামবাসীরা এই খারাপ আত্মাদের থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা নেয়’।
(ঘ) ইধহমরহবংি-এ বলা হয়েছে, ‘আইরিশ ও স্কটিশ লোকসাহিত্যে হ্যালোইনকে বলা হয়েছে, সুপারন্যাচারাল এনকাউন্টারস হিসাবে। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাস ছিল যে, সামারের শেষ, শীতের শুরুতে হ্যালোইন সন্ধ্যায় সমস্ত মৃত আত্মীয়-স্বজনের আত্মারা নেমে আসে এই পৃথিবীর বুকে।
(ঙ) উক্ত সোর্সে আরও বলা হয়েছে, ‘অষ্টম শতাব্দীতে পোপ গ্রেগরীয় ১লা নভেম্বরকে ‘অল সেইন্টস ডে’ ঘোষণা করেন এবং আগের সন্ধ্যা মানে ৩১শে অক্টোবরকে ‘অল- হ্যালোস-ইভ’ বা হ্যালুইন নামে অভিহিত করেন। মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ছিল, অল-হ্যালোস-ইভ-এ প্রেতাত্মারা নেমে আসে। তারা আসে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে। আর তাই এই প্রেতাত্মাদেরকে প্রতিহত করার জন্য জীবিত স্বজনদের সকলে একসাথে জড়ো হয়ে আগুন জ্বালিয়ে নানা ভঙ্গিতে নৃত্য করত এবং মৃত স্বজনের রূপ ধরে আসা ভুতকে পালটা ভয় দেখাতো’ (ইধহমরহবংি)। বর্তমানে হ্যালোইন-এর রীতিনীতি কেল্টিক ভাষী দেশগুলোর লোকজ রীতিনীতি ও বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত বলে ধারণা করা হয়; সেসব দেশের কয়েকটি প্যাগান বা পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বী আর অন্যান্যগুলো কেল্টিক খ্রিস্টধর্ম অবলম্বন করে থাকে (উইকিপিডিয়া)।
কথিত হ্যালোইন বা ভূত উৎসব পালন করা মুসলিমদের জন্য হারাম। নিম্নে এর দশটি কারণ উল্লেখ করা হল:
(১) এটি বিধর্মীদের উৎসব। আর ইসলামে অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করা বা তাতে অংশ গ্রহণ করা হারাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি অন্য সম্প্রদায়ের (বিধর্মীদের) সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই দলভুক্ত’ (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; সনদ হাসান)।
(২) এটি অমুসলিমদের পৌত্তলিকতা ও জাহেলিয়াত পূর্ণ বিশ্বাস ও অপসংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ছাড়া কিছু নয় (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯)।
(৩) ইসলামে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ছাড়া জাতীয়ভাবে অন্য কোনও উৎসব পালন করা বৈধ নয় (আবূ দাউদ, হা/১১৩৬; নাসাঈ, হা/১৫৫, সনদ ছহীহ)।
(৪) মানুষ আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টি। কিন্তু এই কথিত উৎসবে মানুষ বীভৎস মুখোশ ও ভীতিকর পোশাক-পরিচ্ছদে সেজে আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে থাকে। আর আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতি করা হারাম (সূরা আন-নিসা: ১১৯; জামি‘ঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ৯ম খণ্ড, পৃ. ২১৫-২১৬)।
(৫) এটি মানুষের অসুস্থ মানসিকতা ও বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।
(৬) এটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের নাম।
(৭) কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই কথিত উৎসবের নামে রাত্রিতে জন-উপদ্রব সৃষ্টি এবং মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يُرَوِّعَ مُسْلِمًا ‘কোনও মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়’ (আবূ দাঊদ, হা/৫০০৪; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭৬৫৮)।
(৮) অনেক গবেষকের মতে, এই উৎসব মূলত শয়তান পূজা এবং শয়তানকে খুশি করার উদ্দেশ্যে করা হয়। আর আদতেই এ ধরণের কার্যক্রমে শয়তান খুশি হয়।
(৯) এ জাতীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা ঈমানী দুর্বলতা, তাওহীদী বিশ্বাসে ফাটল, দ্বীন এবং ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির ব্যাপারে অজ্ঞতার প্রমাণ।
(১০) মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় ফিরে আসার বিশ্বাস ইসলাম পরিপন্থী। কথিত আধুনিক সভ্যতার দাবীদার, ‘বিজ্ঞান মনস্ক’ ও ‘মুক্তমনা’রা কীভাবে এসব কুসংস্কার ও ভূঁত-প্রেত বিশ্বাস করে তা সত্যি অবাক করার মত।
সুতরাং কোন ইমানদারের জন্য ‘হ্যালোইন’ নামক পৌত্তলিক ও শয়তানী উৎসবে অংশগ্রহণ করা কিংবা এ উপলক্ষে কোনও ধরণের আয়োজন-অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রশ্নকারী : মামুন বিন হাশমত, কুষ্টিয়া।