উত্তর : জমি-সম্পত্তির ওয়ারিছ হওয়ার জন্য মূল মালিকের মৃত্যু হওয়া অপরিহার্য। মৃত্যুর পূর্বে মালিক তার সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মধ্যে বণ্টন করতে পারেন না (সূরা আন-নিসা : ১১-১২,১৭৬)। আর এ বিষয়ে শারঈ নীতির অনুসরণ করা অপরিহার্য। কারণ কোন ওয়ারিছকে তার নির্ধারিত অংশ থেকে বিন্দুমাত্র কম দেয়াটাও যুলম হিসাবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন-নিসার ১১ ও ১২ নং আয়াতে ওয়ারিছদের অংশ সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করার পর বলেন, ‘এ সবই আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য করলে আল্লাহ তাঁকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, তাঁরা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে আর এটিই হল মহাসাফল্য। পক্ষান্তরে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা লংঘন করলে (অর্থাৎ ওয়ারিছী নীতির ব্যাপারে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা লঙ্ঘন করলে) তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আন-নিসা : ১৩-১৪)।
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমার পিতা আমাকে কিছু জিনিস দান করেছিলেন। তখন আমরাহ বিনতে রাওয়াহাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) অর্থাৎ আমার মাতা বলেন, এ বিষয়ে রাসূল (ﷺ)-কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত আমি সম্মত নই। তখন তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, আমি আমার ও আমরাহ বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তখন নবী (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞেস করে বললেন, তোমার সব ছেলেকেই কী এ রকম দান করেছ? তিনি বললেন, না। (তখন তিনি বললেন, তাহলে আমাকে সাক্ষী রেখো না। কারণ আমি যুলমের ব্যাপারে সাক্ষী থাকি না)। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, فَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর’। নু‘মান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তাঁর দান ফিরিয়ে নিলেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৫৮৬-২৫৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬২৩-১৬২৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সন্তানদের মধ্যে হিবা করার সময় সকলকেই সমানভাবে তাদের নির্ধারিত অংশ দিতে হবে। কাউকে প্রাধান্য দিয়ে অপরকে বঞ্চিত করা যাবে না (শারহুন নববী, ১১/৬৬ পৃ.)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী, ইবনুল ক্বাইয়্যিম, ইমাম ইবনু কুদামাহ, ইমাম বাহুতী, শায়খ ইবনু বায, শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘বণ্টনের সময় কোন ওয়ারিছকে পরিমাণে অথবা অর্থে অথবা এলাকা নির্দিষ্টকরণে ফাঁকি বা কম দেয়া যাবে না। অর্থ-সম্পত্তি, জমি-জায়গা ও পজিশন বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য। তবে হ্যাঁ, বিশেষ প্রয়োজনে সমস্যার নিষ্পত্তির জন্য পরস্পরের সম্মতিক্রমে ঊনিশ-বিশ করা যেতে পারে। কিন্তু এর জন্য কারোর উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে না এবং সজ্ঞানে কারোর ক্ষতি করা যাবে না। কেননা ইসলামের মূলনীতি হল لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَار ‘নিজের কোন অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং পরস্পরে কারোর ক্ষতি করা যাবে না’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৩৪০, ২৩৪১; ছহীহুল জামি‘, হা/৭৫১৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৫০)।
জমি-জায়গার মধ্যে সমতা রক্ষা করা সম্ভবপর না হলে, সেক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ (Valuation) করে সমানভাবে বণ্টন করা যেতে পারে। আলেমগণ বলেন, জমি বণ্টনের সময় দু’টি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমতঃ যদি সকল উত্তরাধিকারী কোন একটি ভাগ পদ্ধতিতে ঐকমত্য হয়, যেমন তাদের মধ্যে কেউ শহরের মহল, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট (Apartment) নেবে আর অন্যরা দোকান কিংবা গ্রামের বাড়ি নেবে এবং এক্ষেত্রে যার অংশ কম হবে তাকে ভ্যালুয়েশন (Valuation) হিসাবে অর্থ দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিবে। আর যদি সকলে সম্মত না হয়, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতি ব্যতীত কোন উপায় নেই, আর তা হল জমি-জায়গা বিক্রি করে দিয়ে মীরাছ অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে প্রাপ্ত মূল্য ভাগ করে নিবে। এক্ষেত্রে যদি তাদের মধ্যে কোন একজনও বিক্রয় করার পরামর্শ দেয়, তাহলে সকলের উচিত তার পরামর্শ মেনে বিক্রি করে দেয়া, অন্যথা ক্বাযী বা বিচারক নিজ দায়িত্বে বিক্রয় করে মূল্যটা সকলের মধ্যে অধিকার অনুযায়ী বণ্টন করে দেবেন (কাশ্শাফুল ক্বিনা‘, ৪/৩১০; আল-ইনছাফ, ৭/১৩৮-১৪৯; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩১/২৯৫; আল-মুগনী, ৫/৬৬৪-৬৬৬; আল-ফাতাওয়াল জামি‘আহ লিল মারআতিল মুসলিমাহ, ৩/১১১৫, ১১১৬; আশ-শারহুল মুমতি‘, ১৫/৩৬৯; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২৬৫৫৯)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম, দারুশা, রাজশাহী।