উত্তর : ছালাতের মধ্যে মহিলাদের পদদ্বয় আবৃত করা বা উন্মুক্ত রাখার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতানুযায়ী ছালাতের মধ্যে মহিলাদের পদযুগলকে আবৃত করা অপরিহার্য। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোন স্বাধীন নারীর উপর ছালাতে তার সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ওয়াজিব, শুধু মুখমণ্ডল ও কব্জিদ্বয় ব্যতীত। কেননা নারীর গোটা দেহ-ই সতর (আচ্ছাদনযোগ্য)। যদি কোন নারী এমন অবস্থায় ছালাত আদায় করে যে, তার সতরের কোন একটি অংশ, যেমন পায়ের গোছা, পায়ের পাতা, মাথা বা মাথার কিয়দাংশ প্রকাশ হয়ে গেছে, তাহলে তার ছালাত বিশুদ্ধ হবে না। যেহেতু নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘খিমার পরিধান ছাড়া আল্লাহ কোন প্রাপ্তবয়স্কা নারীর ছালাত ক্ববুল করেন না’। মুখমণ্ডলের ব্যাপারে সুন্নাহ হল- ছালাতে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত রাখা, যদি সেখানে কোন পরপুরুষ উপস্থিত না থাকে। হাতের কব্জিদ্বয়ের বিষয়ে প্রশস্ততা রয়েছে। যদি হাতের কব্জিদ্বয় খোলা রাখে তাতে কোন অসুবিধা নেই। আর যদি ঢেকে রাখে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে কোন কোন আলিমের মতে, কব্জিদ্বয় ঢেকে রাখাই উত্তম। আর পায়ের পাতাদ্বয় ঢাকা অধিকাংশ আলেমের মতানুযায়ী ওয়াজিব। তবে কোন কোন আলিম পায়ের পাতা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু জামহূর আলেম খোলা রাখাকে হারাম মনে করেছেন এবং ঢেকে রাখাকে ওয়াজিব বলেছেন (ফাতাওয়া আল-মার’আতুল মুসলিমাহ ইবনে বায, পৃ. ৫৭)।
শায়খ আল্লামা শামসুল হক্ব আযীমাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম মালিক ইবনু আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যদি কোন নারী মাথার চুল অথবা পায়ের গোছা খোলা অবস্থায় ছালাত আদায় করে, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ওয়াক্তের মধ্যে আছে, তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে’ (‘আওনুল মা‘বূদ, ২/২৪২ পৃ.)। শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) এবং সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘নারীর উপর ছালাতে তার সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ওয়াজিব। অনুরূপভাবে পদযুগলকেও আবৃত করা অপরিহার্য। তবে তার আশেপাশে কোন পরপুরুষ উপস্থিত না থাকলে, ছালাতে মুখমণ্ডল উন্মুক্ত রাখতে হবে। সুতরাং যে নারী এর বিধান সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে পা উন্মুক্ত করে ছালাত আদায় করেছে তাকে পুনরায় ক্বাযা তুলতে হবে না। আর যে নারী বিধান জানা সত্ত্বেও উন্মুক্ত করে ছালাত আদায় করেছে, তার উপর ক্বাযা আদায় করা অপরিহার্য (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৫/১৪৩ পৃ.; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব ইবনে বায)।
দলীল হল, মুহাম্মাদ ইবনু যায়েদ উম্মু সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সূত্রে অনুরূপ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি নবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেন যে, মহিলারা ইযার অর্থাৎ দেহের নিম্নাংশের বস্ত্র বা লুঙ্গি ছাড়া শুধু একটি জামা ও একটি ওড়না পরিধান করে ছালাত আদায় করতে পারবে কি? উত্তরে তিনি বললেন, জামাটি যদি এরূপ লম্বা হয়, যা দিয়ে পায়ের পাতা ঢেকে যায় (তাহলে সেটা পরে ছালাত আদায় করতে পারবে)’ (আবূ দাঊদ, হা/৬৪০; মিশকাত, হা/৭৬৩; হাকিম, ১/২৫০ পৃ.)।
তবে উক্ত হাদীছের ব্যাপারে সমালোচনা আছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) নিজে হাদীছটি বর্ণনা করার পর বলেন, ‘হাদীছটি মালিক ইবনু আনাস, বাকর ইবনু মুদার, হাফস ইবনু গিয়াস, ইসমাঈল ইবনু জা‘ফর, ইবনু আবূ যি’ব এবং আবূ ইসহাক-মুহাম্মাদ ইবনু যায়িদ হতে তার মাতা থেকে উম্মু সালামাহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তাদের কেউই নবী (ﷺ)-এর নাম উল্লেখ করেননি (যঈফ আবূ দাঊদ, হা/৬৪০; মিশকাত, হা/৭৬৩)। তাই অনেকেই বলেছেন, ছালাতের সময় পায়ের পাতা ঢাকা অপরিহার্য নয়। আর এই মতটিকে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্, শায়খ আলবানী ও শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) গ্রহণ করেছেন।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতানুযায়ী স্বাধীন নারীর সমস্ত দেহই আওরাত অর্থাৎ লজ্জাস্থান, শুধু ওইটুকু ছাড়া যতটুকু সাধারণত বাড়িতে থাকাবস্থায় উন্মুক্ত থাকে। আর তা হল- মুখমণ্ডল, কব্জিদ্বয় এবং পদযুগল এবং তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর যুগে নারীরা গৃহে অবস্থানকালে কামিজ, গাউন, জামা পরিধান করতেন। প্রত্যেকের কাছে দু’জোড়া কাপড় থাকত না। সেই জন্য কাপড়ে হায়েযের রক্ত লেগে গেলে তা ধৌত করে পরিধান করতেন এবং ছালাত আদায় করতেন। সাধারণত সে সময় কব্জিদ্বয় এবং পদযুগল ঢাকা থাকত না। এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট দলীল না থাকায় আমি আমি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতকেই গ্রহণ করেছি’ (আশ-শারহুল মুমতি, ২/১৬১ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মাইমূনা, রাজশাহী।