উত্তর : এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরী না করে হালাল পেশার চাকরী খুঁজতে হবে। কারণ সহশিক্ষা বা ছাত্র-ছাত্রীদের মিশ্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামে নিষিদ্ধ। মেয়েদের সাথে একত্রে একই স্থানে কিংবা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা একই বেঞ্চে বসে সহশিক্ষা নাজায়েয। এটি ফিতনার তথা নৈতিক পদস্খলনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সেজন্য কোন ছেলে কিংবা মেয়ের জন্য এ ধরণের সহশিক্ষা জায়েয নেই (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৬০৮)। এ প্রসঙ্গে সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা এটি ফিতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের শরীরের কোন অংশ উন্মুক্ত রাখে কিংবা অন্যের সামনে পাতলা পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক স্কিন-টাইট ও আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র অথবা শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে, যা অবৈধ প্রেম, যিনা-ব্যভিচার, সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৭/৫৩ পৃ.)।
ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের একসাথে পড়াশোনা করানো বা তাদের একসাথে প্রাইভেট পড়ানো সম্পূর্ণরূপে শরী‘আত বিরোধী কাজ। এছাড়াও এটি মানুষের স্বভাব ধর্মের বিরোধী এবং পারস্পরিক নীতিবোধের জন্য চরম ক্ষতিকর। আধুনিক বংশধরগণের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল প্রচলিত সহশিক্ষা। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘কোন পুরুষের জন্য মেয়েদেরকে পর্দাহীন অবস্থায় সরাসরি পাঠদান করা বৈধ নয়। কারণ এতে রয়েছে বিশাল বিপদ ও ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৪৯ পৃ.)। নারীদেরকে পড়িয়ে প্রাপ্ত বেতনের অর্থ হালাল হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে উক্ত ফাতাওয়া বোর্ড ঘোষণা করেছে যে, ‘এই কাজের বিনিময় স্বরূপ আপনি যে অর্থ উপার্জন করবেন, তার দ্বারা আপনার লাভবান বা উপকৃত হওয়া দোষনীয় নয়। কারণ আপনি যে বেতন নিয়েছেন তা পাঠদানের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করেছেন; এটি জায়েয। তবে পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হওয়ায় অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। তাই আপনার জন্য উচিত এই কাজটি ছেড়ে দেয়ার জন্য তাড়াহুড়া করা এবং অন্য একটি হালাল চাকরির সন্ধান করতে থাকা। যাতে আপনি হারাম ও ফিতনায় পড়া থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৫৬ পৃ.)। তারা আরো বলেছে,
فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
‘সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয নয় যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিভাবকদের জন্য জায়েয নয় তাকে এর জন্য অনুমতি দেয়া’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৫৬ পৃ.)। কিন্তু একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা বা করানো জায়েয আছে। কেননা ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে যে, الضرورات تبيح المحظورات ‘বিশেষ প্রয়োজন অবৈধ জিনিসকে বৈধতার অনুমতি প্রদান করে’ (আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর, ১/৭৮ পৃ.)। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা যরূরী, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়। মোটকথা সাধারণভাবে পুরুষ-নারীর সংমিশ্রণ রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা নারী-পুরুষ কারোর জন্যই জায়েয নয়। কারণ এতে অনেক ধরনের ফিতনার আশংকা রয়েছে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ ১৭/৫৩; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ইবনে উছাইমীন, ৩/১০৩ পৃ.)। তবে বিকল্প না থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় সাধ্যমত পর্দার বিধান মেনে পড়াশোনা বা চাকরী করতে পারে (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৩/২১৪; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ইবনে উছইমীন, ১/১০৩ ও ১৩/১২৭ পৃ.)। এক্ষেত্রে হালাল পন্থায় রিযিক্ব অন্বেষণ করা আপনার উপর অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন’। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ২-৪; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৯/৭৭ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : জাহিদুল হক আকন্দ, নান্দিনা, জামালপুর।