উত্তর : দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য কমপক্ষে পাঁচবার পৃথক পৃথকভাবে দুধপান করানো শর্ত (রাওযাতুত্ব ত্বালিবীন, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৭; আল-মুগনী আল-মুহতাজ, ৩/৪১৬ পৃ.; আল-ইক্বনা‘, ৪/১২৬ পৃ.; যাদুল মা‘আদ, ৫/৫১১ পৃ.; সুবুলুস সালাম, ২/৩১১পৃ.)। ইমাম ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা), ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা), ইবনু যুবাইর, ‘আত্বা, ত্বাউস প্রমুখ থেকে এরকমই বর্ণিত হয়েছে (আল-মুগনী, ৮/১৭১-১৭৩ পৃ.)। ইবনু হায্ম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পাঁচবারের কমে দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং একটি অপরটি থেকে পৃথক হতে হবে বা পাঁচবার পৃথক পৃথকভাবে পান করাতে হবে’ (আল-মুহাল্লা, ১০/১৮৯ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন বাচ্চা দু’বছর বয়সের মধ্যে কোন মহিলার স্তন থেকে পাঁচবার স্তন্যপান করে, তবেই ঐ মহিলা তার দুধমাতা হিসাবে সাব্যস্ত হবে (ফাতাওয়া আল-কুবরা, ৩/১৫৯-১৬৩ পৃ.; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩৪/৫৭ পৃ.)। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ছহীহ বুখারী, মুওয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদে পাঁচবারের কথাই বর্ণিত হয়েছে। অতএব পাঁচবারের কমে দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে না (নায়লুল আওত্বার, ৬/৩৬৭-৩৭৩; আস-সাইলুল জাররার, পৃ. ৪৭১)।
শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দুধপানের মাধ্যমে সম্পর্ক হারাম হওয়ার জন্য নির্দিষ্টভাবে পাঁচবার অথবা ততধিকবার দুধ পান করা শর্ত এবং সেটা দু’বছরের মধ্যে হতে হবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২২/২৩৭-২৭৩ পৃ.)। শায়খ ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী কমপক্ষে পাঁচবার দুধপান করা অপরিহার্য’ (আশ-শারহুল মুমতি’, ১২/১১২ পৃ.)।
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘কুরআনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার স্তন্যপানে হারাম সাব্যস্ত হয়’। অতঃপর তা মানসূখ বা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ -এর দ্বারা অর্থাৎ ‘পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৫২; নাসাঈ, হা/৩৩০৭; আবূ দাঊদ, হা/২০৬২; তিরমিযী, হা/১১৫০)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য স্পষ্টাকারে পৃথক পৃথকভাবে পাঁচবার দুধপান করা অপরিহার্য (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৩৪/৩৫ পৃ.; নায়লুল আওত্বার, ৬/৩৬৯ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ একজন নারী অথবা একজন পুরুষের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই দুধের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। অথবা শুধু দুধ পানকারিণীর সাক্ষ্য যথেষ্ট হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৮৮; কাশফুল কুনা‘, ৫/৪৫৬ পৃ.; মাত্বালিবু আওলান নূহা, ৫/৬১২ পৃ.; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২১/৫৬; মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২২/২৪০ পৃ.)।
তৃতীয়তঃ যে ছেলে বা মেয়ে দুধপান করেছে তার অন্যান্য ভাই অথবা বোনের সঙ্গে ঐ দুধমাতার ছেলে বা মেয়ের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হালাল। কেননা স্তন্যপানের কারণে শুধু তার সঙ্গে দুধমাতার পরিবারের লোকজনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু তার অন্যান্য ভাই-বোনের সঙ্গে দুধমাতার ছেলে মেয়ের কোন সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে একটি উপকারী মূলনীতি হল- যে ছেলে বা মেয়ে দুধপান করেছে তার পিতা-মাতা আছে, ভাই-বোন আছে, চাচা-ফুফু আছে, মামা-খালা আছে, এই সমস্ত সম্পর্কগুলো কিন্তু অবাধভাবে স্তন্যপানের কারণে প্রভাবিত হয় না। সুতরাং স্তন্যপানের প্রভাব শুধু তার এবং তার সন্তান-সন্ততিদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া তার মূল সম্পর্ক, যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ইত্যাদির উপর এর প্রভাব পড়বে না। অনুরূপভাবে তার পার্শ্বসম্পর্ক যেমন ভাই-বোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা ইত্যাদির উপরেও এর কোন প্রভাব পড়ে না। সেজন্য যদি কেউ কোন মহিলার স্তন্যপান করে, তাহলে ঐ মহিলার ছেলে-মেয়েরা শুধু তার জন্যই হারাম হবে। পক্ষান্তরে তার ভাই-বোনের জন্য হালাল। কেননা সাধারণভাবে তাদের মধ্যে আর আপনার ভাই-বোনদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৮/৩৬১-৩৬২, ২১/৬৫, ২১/১২৭-১২৮ পৃ.; আল-লিক্বাউশ শাহরী ইবনে উছাইমীন, লিক্বা নং-১৭; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২২তম, খণ্ড, পৃ. ২৮৭ পৃ.)।
চতুর্থতঃ নিজের স্বামীর সন্তান ব্যতীত অন্য কোন সন্তানকে দুধপান করানোর জন্য স্বামীর অনুমতি নেয়া যরূরী। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতি না নেয়াটাও দোষণীয় নয়। যেমন বাচ্চা ঐ মহিলার স্তন ছাড়া অন্য কোন মহিলার স্তন থেকে দুধপান করছে না (আশ-শারহুল মুমতি’, ১২/৪২৬ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং- ১৫১৬১৫)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ঈমানদার নারীর জন্য বাচ্চার পরিবার ও স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে স্তন্যপান করানো থেকে বিরত থাকাটাই উত্তম। কারণ এতে তার ছেলেরও ক্ষতি হতে পারে। তাই অনুমতি ছাড়া কাউকে স্তন্যপান না করানোটা তার জন্য অধিকতর উপযুক্ত এবং সতর্কতামূলক। তবে হ্যাঁ! যদি তার স্বামী এতে অসন্তুষ্ট না হন, সেক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেয়। অথবা তার স্তনে যদি প্রচুর পরিমাণে দুগ্ধ থাকে আর সেই দুগ্ধ প্রতিবেশীর কোন বাচ্চাকে খাওয়ানোটা যরূরী হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে অনুমতি না নিলেও কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ্ দারব ইবনে বায, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, https:/www.binbaz.org.sa/noor/11231)।
প্রশ্নকারী : নাছরুল্লাহ, পাবনা।