শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন
উত্তর : ইবাদতের বাহ্যিক ত্রুটি হল, তা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী না হওয়া, ইবাদতের পূর্বশর্ত পূরণ না করা। আর অভ্যন্তরীণ ত্রুটি হল, নিয়তের অশুদ্ধতা। তা হল- আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। যেমন মানুষের প্রশংসা, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি, কারো দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় একে রিয়া তথা প্রদর্শন, আত্মপ্রদর্শন, লোক দেখানো বলা হয়। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ। এমন ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পরকালে এসব ইবাদত ব্যক্তির জন্য বোঝা ও আক্ষেপের কারণ হবে (সূরা আল-মাঊন : ৪-৭)।

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বান্দার আমলে রিয়া যদি ইচ্ছাকৃত হয়, তবে তা যত গৌণই হোক না কেন, সে আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি শরীককারীদের শিরক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি কোন লোক কোন কাজ করে এবং এতে আমি ছাড়া অপর কাউকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫)। পক্ষান্তরে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি রিয়ার ওয়াসওয়াসা অন্তরে প্রবেশ করে যায়, সেক্ষেত্রে বান্দা যদি তাত্থেকে বিরত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং এ জন্য অনুতপ্ত হয়, তবে তার জন্য সুসংবাদ। কেননা যে প্রচেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সুপথে পরিচালিত করবেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন’ (সূরা আল-আনকাবূত : ৬৯)। সুতরাং ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, অবশ্যই আল্লাহ সাহায্য করবেন এবং কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ইবনে বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, https://binbay.org.sa/fatwas/18697/%D9%)।

যারা সত্যিকার অর্থে রিয়ার ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাদের উচিত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা। যথা :
১- ইবাদতের সময় আল্লাহ তা‘আলার উপস্থিতি ও অবলোকন গভীরভাবে স্মরণ করা : যাকে হাদীছে জিবরীলের ভাষায় ‘ইহসান’ বলা হয়। এটা চিন্তা করা যে, আল্লাহ আমার মনের খবর জানেন। আমি কেন করছি, কী করছি সবই তিনি দেখছেন। যেমন নবী করীম (ﷺ) বলেন, أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০২)।
২- ‘রিয়া’ নামক শিরক থেকে নিজেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা সাক্ষ্য দেয় যে, اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ‘আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (সূরা আল-ফাতিহা : ৫)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব যার উপর আমল করলে তোমার থেকে ছোট-বড় সব ধরনের শিরক দূরীভূত হবে। তুমি বলবে, اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ مِمَّا تَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ ‘হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শিরক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞতাসারে (শিরক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামি‘, হা/৩৭৩১)।
৩- রিয়ার ভয়াবহতা ও পরকালের শাস্তির কথা স্মরণ করা : কেননা এ সম্পর্কে উদাসীনতা মানুষকে বিভ্রান্ত করে দিবে। প্রদর্শনপ্রিয়তা আল্লাহর ক্রোধের কারণ, তা সবসময় মনে রাখা। কেননা রিয়া শিরক, যার পরিণতি জাহান্নাম (ছহীহ বুখারী হা/৫০৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৫; তিরমিযী, হা/২৩৮২; নাসাঈ, হা/৩১৩৭)।
৪- রিয়ার দুনিয়াবী শাস্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া : প্রদর্শনপ্রিয়তার যেমন পরকালে শাস্তি রয়েছে, ঠিক তেমনি দুনিয়াবী শাস্তিও রয়েছে। আর তা হল লোকের সামনে তার অন্তরের কালিমা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেয়া। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জনসম্মুখে প্রচারের ইচ্ছায় নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলাও তার কৃতকর্মের অভিপ্রায়ের কথা লোকেদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লৌকিকতার উদ্দেশ্যে কোন নেক কাজ করে, আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকেদের মাঝে ফাঁস করে দিবেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৯৯, ৭১৫২)‌।
৫- সাধ্যানুসারে গোপনে ইবাদত করা : যেগুলো প্রকাশ্যে করা যরূরী সেগুলো ব্যতীত বাকি সমস্ত ইবাদত গোপনে নির্জনে করা।
৬- রিয়ামুক্ত আমলের পুরস্কারের কথা স্মরণ করা এবং তা অর্জনের প্রত্যয় গ্রহণ করা। কেননা আল্লাহর জন্য নিবেদিত আমলের প্রতিদান জান্নাত (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৯৬)।
৭- সকল প্রকার অহংকার বর্জন করা। কেননা অহংকার হতেই রিয়া জন্মলাভ করে থাকে। আর অহংকারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৫৭৮)।

প্রশ্নকারী : ইমরান, রাঙ্গামাটি।




প্রশ্ন (২৮) : জনৈক আলেম বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) ফজরের ছালাতের সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসে দু’হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছিলেন (ফাতাওয়া নাযীরিয়াহ, ১/৫৬৫ পৃ.; তুহফাতুল আহওয়াযী, ২/১৭১ পৃ., হা/২৯৯ এর ব্যাখ্যা দ্র.)। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে দরিদ্রতা আসে। এ কথা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : রামাযান মাসে জামা‘আতের সাথে তারাবীহ উত্তম, না একাকী তাহাজ্জুদ উত্তম? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : ছাহাবী ছা‘লাবা ভ সম্পর্কে যাকাত দিতে অস্বীকার করা এবং রাসূল ফ, আবুবকর, ওমর, ওছমান হ তারা কেউ তার যাকাত নেননি বলে যে ঘটনা প্রচলিত আছে, তা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : জানাযার ছালাতের ক্ষেত্রে ওযূ করতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : কোন ভবনের দ্বিতীয় তলায় মসজিদ। নিচতলায় রংয়ের গুদাম, মসজিদের টয়লেট এবং ওযূখানা। দ্বিতীয় তলায় মসজিদের মিম্বার বরাবর নিচ তলায় হাতের বায়ে দেয়াল ঘেষে একটি কবর। প্রশ্ন হল, উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৯) : কুরবানীর পশুর বয়স কত বছর হলে কুরবানী করা যায়? পশুর দুধের দাঁত পড়ার পর নতুন দাঁত উঠা কি শর্ত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ‘রাসূল (ﷺ)-এর আবির্ভাবের পূর্বে সমস্ত নবীর ক্বিবলাহ বাইতুল মাক্বদিছ ছিল’ এই কথাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৭) : মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করার দলীল জানতে চাই। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : মদীনা কামারের হাপরের ন্যায়। মদীনা মরিচা (দুষ্ট লোক) বিদূরিত করে এবং ভালকে আরও উজ্জ্বল করে (ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৮৫)। উক্ত হাদীছে ব্যাখ্যা কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : ‘আমি তখনও ছিলাম নবী; আদম (আলাইহিস সালাম) যখন রূহ এবং দেহের মধ্যে ছিলেন’ (আহমাদ, হা/১৭১৬৩; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৭৩) মর্মে হাদীছটি কি ছহীহ? এই হাদীছের সঠিক ব্যাখ্যা কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : ঋণ নিয়ে কুরবানী দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ