মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
উত্তর : ইবাদতের বাহ্যিক ত্রুটি হল, তা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী না হওয়া, ইবাদতের পূর্বশর্ত পূরণ না করা। আর অভ্যন্তরীণ ত্রুটি হল, নিয়তের অশুদ্ধতা। তা হল- আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। যেমন মানুষের প্রশংসা, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি, কারো দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় একে রিয়া তথা প্রদর্শন, আত্মপ্রদর্শন, লোক দেখানো বলা হয়। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ। এমন ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং পরকালে এসব ইবাদত ব্যক্তির জন্য বোঝা ও আক্ষেপের কারণ হবে (সূরা আল-মাঊন : ৪-৭)।

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বান্দার আমলে রিয়া যদি ইচ্ছাকৃত হয়, তবে তা যত গৌণই হোক না কেন, সে আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি শরীককারীদের শিরক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি কোন লোক কোন কাজ করে এবং এতে আমি ছাড়া অপর কাউকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫)। পক্ষান্তরে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি রিয়ার ওয়াসওয়াসা অন্তরে প্রবেশ করে যায়, সেক্ষেত্রে বান্দা যদি তাত্থেকে বিরত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং এ জন্য অনুতপ্ত হয়, তবে তার জন্য সুসংবাদ। কেননা যে প্রচেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সুপথে পরিচালিত করবেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন’ (সূরা আল-আনকাবূত : ৬৯)। সুতরাং ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, অবশ্যই আল্লাহ সাহায্য করবেন এবং কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ইবনে বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, https://binbay.org.sa/fatwas/18697/%D9%)।

যারা সত্যিকার অর্থে রিয়ার ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাদের উচিত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা। যথা :
১- ইবাদতের সময় আল্লাহ তা‘আলার উপস্থিতি ও অবলোকন গভীরভাবে স্মরণ করা : যাকে হাদীছে জিবরীলের ভাষায় ‘ইহসান’ বলা হয়। এটা চিন্তা করা যে, আল্লাহ আমার মনের খবর জানেন। আমি কেন করছি, কী করছি সবই তিনি দেখছেন। যেমন নবী করীম (ﷺ) বলেন, أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০২)।
২- ‘রিয়া’ নামক শিরক থেকে নিজেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা সাক্ষ্য দেয় যে, اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ‘আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (সূরা আল-ফাতিহা : ৫)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব যার উপর আমল করলে তোমার থেকে ছোট-বড় সব ধরনের শিরক দূরীভূত হবে। তুমি বলবে, اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ مِمَّا تَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ ‘হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শিরক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞতাসারে (শিরক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামি‘, হা/৩৭৩১)।
৩- রিয়ার ভয়াবহতা ও পরকালের শাস্তির কথা স্মরণ করা : কেননা এ সম্পর্কে উদাসীনতা মানুষকে বিভ্রান্ত করে দিবে। প্রদর্শনপ্রিয়তা আল্লাহর ক্রোধের কারণ, তা সবসময় মনে রাখা। কেননা রিয়া শিরক, যার পরিণতি জাহান্নাম (ছহীহ বুখারী হা/৫০৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৫; তিরমিযী, হা/২৩৮২; নাসাঈ, হা/৩১৩৭)।
৪- রিয়ার দুনিয়াবী শাস্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া : প্রদর্শনপ্রিয়তার যেমন পরকালে শাস্তি রয়েছে, ঠিক তেমনি দুনিয়াবী শাস্তিও রয়েছে। আর তা হল লোকের সামনে তার অন্তরের কালিমা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেয়া। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জনসম্মুখে প্রচারের ইচ্ছায় নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলাও তার কৃতকর্মের অভিপ্রায়ের কথা লোকেদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লৌকিকতার উদ্দেশ্যে কোন নেক কাজ করে, আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকেদের মাঝে ফাঁস করে দিবেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৯৯, ৭১৫২)‌।
৫- সাধ্যানুসারে গোপনে ইবাদত করা : যেগুলো প্রকাশ্যে করা যরূরী সেগুলো ব্যতীত বাকি সমস্ত ইবাদত গোপনে নির্জনে করা।
৬- রিয়ামুক্ত আমলের পুরস্কারের কথা স্মরণ করা এবং তা অর্জনের প্রত্যয় গ্রহণ করা। কেননা আল্লাহর জন্য নিবেদিত আমলের প্রতিদান জান্নাত (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৪৯৬)।
৭- সকল প্রকার অহংকার বর্জন করা। কেননা অহংকার হতেই রিয়া জন্মলাভ করে থাকে। আর অহংকারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৫৭৮)।

প্রশ্নকারী : ইমরান, রাঙ্গামাটি।




প্রশ্ন (২৮) : একদিন স্বামীর সাথে ঝগড়ার একপর্যায়ে প্রচণ্ড রাগের বশবর্তী হয়ে কুরআন হাতে নিয়ে যদি কেউ বলে যে, এই কুরআন ছুয়ে বলছি জীবনে কোনদিন তোমার টাকায় হাত দিব না, তোমার টাকা দিয়ে কিছু করব না, যত টাকা নিয়েছি সব ফেরত দিয়ে দিব। অতঃপর পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পারে যে, তার এমন কাজ করা ঠিক হইনি। এমতাবস্থায় করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : হিজড়ারা জিনের সন্তান। এ দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : নূহ (আলাইহিস সালাম) ও হূদ (আলাইহিস সালাম) উভয়ের স্ত্রী কাফের, না-কি শুধু কাবীরা গুনাহের জন্য উভয়ে জাহান্নামে যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : আমার স্ত্রী ২০২২ এর মার্চ মাসে সন্তান প্রসব করেন, সে জন্য এপ্রিলে ছিয়াম রাখতে পারেননি। পরের বছর সন্তানের বয়স কম থাকায় এবং বাচ্চা যথেষ্ট বুকের দুধ পাবে না, এই জন্য ২০২৩ এর ছিয়াম ও রাখেননি বা রাখতে পারেননি। এমতাবস্থায় আবার সে কনসেপ করে এবং এই রামাযানের (২০২৪) পরেই ডেলিভারি সম্ভব্য সময়। সে জন্য এই বছরের (২০২৪) ছিয়াম রাখতেও পারবে না। তাহলে তার মোট ৩ বারের ছিয়াম ক্বাযা হচ্ছে। এই অবস্থায় শারঈ বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৬) : যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে সূরা কাহ্ফ পাঠ করবে, সে ৮ দিন পর্যন্ত সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে, যদিও তার মাঝে দাজ্জাল এসে যায়। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : বিয়ের সময় মোহরানা আদায় করেননি। পরবর্তীতে স্ত্রীও স্বামীর কাছে মোহরানা চাইনি। এমন অবস্থায় স্বামী মারা গেলে কি মোহরানা আদায় করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : মুমিন ও‌ মুসলিমের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : মাজার সংশ্লিষ্ট মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : উঠাবাসা করতে সমস্যা হয় কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে ও হাঁটতে কোন সমস্যা হয় না। বাজারেও হেঁটে বেড়ানো যায় কিন্তু মসজিদে ছালাতের সময় চেয়ার কিংবা টুলে বসে ছালাত আদায় করতে হয়। এ অবস্থায় করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : জনৈক ব্যক্তি স্ত্রীর প্রতি রাগান্বিত হয়ে স্ত্রীর সামনে স্ত্রীর নাম উল্লেখ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থাক, আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথে (স্ত্রী) আর কখনো মিলন করব না’। এরূপ কসমের জন্য করণীয় কী? এজন্য কি বিবাহ বিচ্ছিদ ঘটবে, না-কি কসমের কাফ্ফারা স্বরূপ তিনটি ছিয়াম রাখলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত্য করা, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের উলিল আমরের আনুগত্য কর’ (সূরা আন-নিসা : ৫৯)। উক্ত আয়াতে وَ اُولِی الۡاَمۡرِ দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : জনৈক আলেম বলেন, কুরবানী দিতে অক্ষম ব্যক্তিগণ কুরবানীর খালেছ নিয়তে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর নখ ও চুল না কাটলে সে আল্লাহর নিকটে তা পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে। তিনি দলীল হিসাবে মিশকাত হা/১৪৭৯ পেশ করেছেন। সেই সাথে এটাও বলেছেন যে, শু‘আইব আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) অত্র হাদীছটিকে হাসান বলেছেন। তবে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) অত্র হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। এখন আমরা দুই শায়খের মধ্যে কার তাহক্বীক্বকে প্রাধান্য দিব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ