উত্তর : শরী‘আতের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, তাহলে তারা নিশ্চয় বলবে যে, ‘আমরা তো শুধু আলাপ-আলোচনা ও হাসি-তামাশা করছিলাম’। তুমি বলে দাও, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং রাসূল (ﷺ)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করছিলে?’ তোমরা এখন (বাজে) অজুহাত পেশ করো না, তোমরা তো নিজেদের ঈমান প্রকাশ করার পর কুফরী করেছ’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৬৫-৬৬)। অনুরূপ এভাবে বলা যাবে না যে, ক্বিয়ামত এখান থেকেই আরম্ভ হবে। কারণ এটি অদৃশ্যের খবর, যার জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কারোর কাছে নেই। পরকাল কেন্দ্রিক বা গায়েবের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা গর্হিত অপরাধ। কারণ এই জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারো নেই (সূরা আন-নামল : ৬৫; সূরা আল-আন‘আম : ৫৯)।
এ কথা ঠিক যে, মসজিদ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, চাকচিক্যময় করা, কারুকার্য করা এবং তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে গৌরব ও অহঙ্কার প্রকাশ করা ক্বিয়ামতের ছোট নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি। এ ধরনের কার্যাদি শরী‘আতসম্মত নয়। ছহীহ হাদীছের আলোকে মসজিদ চাকচিক্য ও কারুকার্য করা নিষিদ্ধ। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ ‘লোকেরা মসজিদ নিয়ে পরস্পর গৌরব ও অহঙ্কারে মেতে না উঠা পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৪৯; নাসাঈ, হা/৬৮৯, সনদ ছহীহ)। ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَا أُمِرْتُ بِتَشْيِيْدِ الْمَسَاجِدِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَتُزَخْرِفُنَّهَا كَمَا زَخْرَفَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ‘আমাকে সুউচ্চ মসজিদ বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, তোমরা (অচিরেই) মসজিদসমূহকে এমনভাবে সুসজ্জিত ও কারুকার্যময় করবে যেরূপ ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা (তাদের উপাসনালয়কে) সুসজ্জিত করে থাকে। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে অথচ তারা একে কমই (‘ইবাদতের মাধ্যমে) আবাদ রাখবে (তা‘লীকুল বুখারী, হা/৪৪৬; আবূ দাঊদ, হা/৪৪৮; ইছলাহুল মসজিদ, পৃ. ৯৫; ফাৎহুল বারী, ১/৬৪৩ পৃ.; তাখরীজু শারহিস সুন্নাহ, পৃ.৪৬৩)।
বাদরুদ্দীন আল-আইনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা কারুকার্য খচিত মসজিদে বসে যিকির-আযকার, ছালাত আদায় ও কুরআন তিলাওয়াতে ব্যতিব্যস্ত না হয়ে মসজিদের প্রশংসা ও গুণগানে ব্যতিব্যস্ত থাকবে’ (ঊমদাতুল ক্বারী, ৪/২০৫ পৃ.)। আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, إذا زخرفتم مساجدكم وحليتم مصاحفكم فالدمار عليكم ‘যখন তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে চাকচিক্য ও রঙচঙে করবে এবং তোমরা তোমাদের পবিত্র গ্রন্থগুলোকে অর্থাৎ কুরআনকে অলংকৃত করবে। তখন তোমাদের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী’ (সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৩৫১; ছহীহুল জামে‘, হা/৫৮৫; নাওয়াদীরুল উছূল, ৩/২৫৬ পৃ.; কিতাবুয যুহুদ, পৃ. ৭৯৭, সনদ হাসান)।
এতে ছালাতের মধ্যে মুছল্লীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ফলস্বরূপ সে অমনোযোগী হয়ে কারুকার্য ও চাকচিক্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ৫/১৯১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৭৯৮৭)। ফক্বীহগণ বলেন, ‘হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বালী মাযহাবের মতানুযায়ী ওয়াক্বফের (দানের) অর্থ দ্বারা মাসজিদকে কারুকার্য ও চাকচিক্য করা হারাম। কেননা এর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই’ (ইসলামী ফিকাহ বিশ্বকোষ, ১১/২৭৫ ও ২৩/২১৭-২১৮ পৃ.)। ইমাম মুনাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মসজিদ কারুকার্য ও চাকচিক্য করা নিষিদ্ধ। কেননা এগুলো একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা বিনষ্ট করে, অন্তরকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে’ (ফাইযুল ক্বাদীর, ১/৩৬৭ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মাহবুবুল ইসলাম, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।