সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৩:১৮ অপরাহ্ন
উত্তর : প্রথমতঃ শারীরিক অক্ষমতা, প্রাণনাশের সম্ভাবনা বা মারাত্মক দুর্বলতার কারণে অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি সন্তান গ্রহণ থেকে সাময়িক বিরত থাকতে বলেন তবে সর্বসম্মতভাবে তা জায়েয। তবে স্থায়ীভাবে করা যাবে না। ছাহাবীদের যুগে আযল করার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। তখন অহী নাযিল হলেও তা নিষিদ্ধ করা হয়নি। যেমন জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ ‘আমরা ‘আযল করতাম। সে সময় কুরআন অবতীর্ণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২০৮, ৫২০৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪০; তিরমিযী, হা/১১৩৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৯২৭)। সুতরাং আযল পদ্ধতির অনুপাতে কনডম ব্যবহার, ইনজেকশন, পিল ইত্যাদি ব্যবহার করে সাময়িকভাবে গর্ভনিরোধ করা জায়েয। আল্লাহু আলাম।
উল্লেখ্য, আযল হল, স্ত্রীমিলনের সময় বাইরে বীর্যপাত করা। যার উদ্দেশ্য স্ত্রীকে গর্ভধারণ থেকে বিরত রাখা। শারীরিক অসুস্থতা অথবা দুই সন্তানের মাঝে প্রয়োজনীয় ব্যবধান রাখার ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে আযল করা শরী‘আতে বৈধ। জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি একটি কৌশল মাত্র। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ চাইলে এর পরেও গর্ভে সন্তান আসতে পারে। জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, আমার দাসীর সাথে আমি মিলিত হলেও তার গর্ভধারণ আমি পসন্দ করি না। তিনি বললেন, তুমি চাইলে আযল করতে পার, তবে আল্লাহ তা‘আলা যা তাক্বদীরে লিখেছেন তা হবেই’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৯; মিশকাত, হা/৩১৮৫)।

দ্বিতীয়তঃ শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে এমন করা দোষনীয় নয়। অন্যথা বিরত থাকাই অপরিহার্য। কেননা রাসূল (ﷺ) বংশবৃদ্ধির ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন এবং উম্মাতের সংখ্যাধিক্যের প্রতি আহ্বান করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তাকীদে শরী‘আতসম্মত কারণে সাময়িক গর্ভনিরোধক মাধ্যম গ্রহণ করা জায়েয। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টিমূলক কাজ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৯/৪৩৪; ২১/১৯৭-১৯৮ পৃ.)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যদি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ডাক্তারগণ বিপদের আশঙ্কা করেন, তবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী এবং স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দোষনীয় নয়’ (ফাতাওয়া আল-মারআতুল মুসলিমাহ, ৫/৯৭৮ পৃ.)।

শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের জানা যরূরী যে, ইসলাম বংশবৃদ্ধির ব্যাপারে উৎসাহ দান করেছে এবং উম্মতের সংখ্যাধিক্যের প্রতি আহ্বান করেছে। যেমন রাসূল (ﷺ) মুসলিম সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধকরণার্থে বলেন, ‘তোমরা এমন নারীকে বিবাহ কর যে, প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করব’ (আবূ দাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭, সনদ হাসান)। আর নিঃসন্দেহে উম্মতের আধিক্য জাতির জন্য গর্বের বিষয়। যদিও দুষ্টু ও আগ্রাসী মনোভাবা সম্পূর্ণ মানুষগুলো এটিকে দূর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের কারণ মনে করে।  যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর স্মরণ করুন, তোমরা যখন সংখ্যায় কম ছিলে, আল্লাহ‌ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কিরূপ ছিল, তা লক্ষ্য কর’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৮৬)। তবে কোন নারী যদি বেশি সন্তান প্রসব করার ফলে শারীরিকভাবে বিদ্ধস্ত হয়ে যায়, অথবা সে গ্রহস্থালির আবশ্যিক কাজ-কর্মসমূহ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে সক্ষম না হয়, অথবা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয় কিংবা প্রাণনাশের ভয় থাকে। সেক্ষেত্রে সৎ অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভধারণের বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সীমাবদ্ধ করা দোষনীয় নয়। যেমন প্রতি দু’বছর পর একবার গর্ভধারণ। স্বামীর অনুমতিক্রমে এমন সাময়িক নিয়ন্ত্রণ অনুমোদিত। এটি ছাহাবায়ে কিরামের যুগের ‘আযল’ করার অনুরূপ। তিনি আরো বলেন, ‘সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্রণ দু’টি শর্তসাপেক্ষে জায়েয। যথা :
(ক) এটি যেন প্রয়োজনের তাকীদে হয়, যেমন অসুস্থতার কারণে প্রত্যেক বছর সন্তান ধারণে সক্ষম না হওয়া অথবা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া অথবা প্রত্যেক বছর সন্তান ধারণে অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(খ) এটি স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে হতে হবে। কেননা স্বামীও সন্তানের অধিকারী। পিল বা কাঠি গ্রহণের মাধ্যমে সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি লাভদায়ক হবে না-কি ক্ষতিকারক সেটি অবশ্যই কোন সুদক্ষ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে। কেননা জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসাবে মৌখিক ঔষধ, প্যাচ, যোনি আংটি এবং ইনজেকশনসহ হরমোন ঘটিত গর্ভনিরোধক ব্যবহারে সীমাহীন ক্ষতি রয়েছে।
অথচ রাসূল (ﷺ) বলেছেন,  لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ ‘নিজের কোন অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং পরস্পরে কারোর ক্ষতি করা যাবে না’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৩৪০, ২৩৪১; ছহীহুল জামে‘, হা/৭৫১৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৫০)। উক্ত শর্ত দু’টি কার্যকর হলে তবেই সাময়িক গর্ভনিরোধক মাধ্যম গ্রহণ করা জায়েয হবে (ফাতাওয়া আল-মারআতুল মুসলিমাহ, ২/৬৫৭-৬৫৮ পৃ.; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, প্রশ্ন নং-১১৪৭)।

প্রশ্নকারী : সুলতানা, ঢাকা।





প্রশ্ন (২৪) : কোন রোগের কারণে চিকিৎসক যদি অল্প পরিমাণে মদ্যপান বা অন্য কোন হারাম বস্তু খাওয়ার নির্দেশনা দেয়, তবে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৯) : যাকাতের অর্থ দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : সহশিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষকতা করে জীবিকা নির্বাহ কি হালাল? এই রকম শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : ওযূ করার পর ছালাত চলাকালীন যদি জানতে পারি যে, আমার দাঁতে সামান্য খাবার অবশিষ্ট আছে। এখন উক্ত ছালাত কি ওযূ করে আবার পড়তে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : জনৈক আলেম বলেন, জোড় রাতেও ক্বদর হতে পারে। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : ছাদাক্বাহ ও ওছিয়তের মধ্যে পার্থক্য কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : ‘হজ্জ ওমরাহকারী কিংবা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধকারী ছাড়া কেউ যেন সমুদ্রে ভ্রমণ না করে। কারণ সাগরের নীচে আগুন আছে। আর আগুনের নীচে সাগর আছে’। উক্ত হাদীছ কি ছহীহ? সফর করা সম্পর্কে ইসলামে কী বলা হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : ‘যে উত্তমরূপে ওযূ করে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে তার কোন মুসলিম ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম হতে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে’। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : বাড়ির চাকর থেকে কি পর্দা করতে হবে? কেউ কেউ বলে, মাথায় কাপড় থাকলে সমস্যা নেই। এমতাবস্থায় করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : আমাদের এলাকায় একটি হাদীছ প্রচলিত রয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে তার কোন মুসলিম ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম হতে ষাট বছরের পথ দূরে রাখা হবে’ (আবুদাঊদ, হা/৩০৯৭, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭)। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : জন্ম সনদে বয়স কমিয়ে দেয়া কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : মূর্তি পূজার হুকুম কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ