উত্তর : কোন পুরুষের জন্য চারের অধিক বিবাহ করা হারাম। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আলেমদের ঐকমত্যানুসারে চারের অধিক বিবাহ করা হারাম। এক্ষেত্রে অবশ্যই পঞ্চম বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এটি কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও ইজমা বিরোধী কার্যকলাপ’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২০/২১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৪২৯৮)। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যদি আশঙ্কা কর যে, তোমরা ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে (স্বাধীন) নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, তাদের মধ্যে হতে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করবে, আর যদি আশঙ্কা কর যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই (স্ত্রীরূপে) গ্রহণ কর। এটাই তোমাদের পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর নিকটবর্তী’ (সূরা আন-নিসা : ৩)। উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন পুরুষ একই সঙ্গে সর্বাধিক চারজন মহিলাকে বিবাহ করতে পারবে। কেননা এখানে বিবাহের সর্বোচ্চ সংখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে, আর তা হল, ‘চার’ (ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৪২৯৮)।
আবূ হাইয়ান আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘(দুই, তিন বা চার) এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের জন্য দু’টি, তিনটি অথবা চারটি পর্যন্ত বিবাহ করা বৈধ। আর আমাদের জন্য পাঁচটি বা এর বেশি বিবাহ করা জায়েয নয়’ (আল-বাহরুল মুহীত্ব, ৩/১৭১ পৃ.)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি এক সঙ্গে চারের অধিক স্ত্রী রাখা জায়েয হত, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা সেটা বর্ণনা করতেন’ (তাফসীরে ইবনু কাছীর, ২/২০৯ পৃ.)। হাদীছে এসেছে
عَنْ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ غَيْلَانَ بْنَ سَلَمَةَ الثَّقَفِيَّ أَسْلَمَ وَلَهُ عَشْرُ نِسْوَةٍ فِي الجَاهِلِيَّةِ فَأَسْلَمْنَ مَعَهُ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ ﷺ أَنْ يَتَخَيَّرَ أَرْبَعًا مِنْهُنَّ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘যে সময়ে গাইলান ইবনু সালামাহ আছ-ছাক্বাফী ইসলাম গ্রহণ করেন, সে সময়ে তাঁর দশজন স্ত্রী ছিল, যাদের তিনি জাহিলী যুগে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর সাথে সাথে তাঁরাও মুসলিম হয়। রাসূল (ﷺ) তাঁকে এদের মধ্যে হতে যে কোন চারজনকে বেছে নেয়ার নির্দেশ দেন’ (তিরমিযী, হা/১১২৮)।
হারিছ ইবনু ক্বায়িস ইবনু ‘উমাইর আল-আসাদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, أَسْلَمْتُ وَعِنْدِيْ ثَمَان نِسْوَةٍ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ اخْتَرْ مِنْهُنَّ أَرْبَعًا ‘আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিল। বিষয়টি আমি নবী (ﷺ)-কে জানালে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে হতে যে কোন চারজনকে বেছে নাও’ (আবূ দাঊদ, হা/২২৪১; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৫২)। ইমাম ইবনু হায্ম (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম বাগাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলেমগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, রাসূল (ﷺ)-এর পরে কোন পুরুষের জন্য চারের অধিক বিবাহ করা হালাল নয়। কেননা এটি রাসূল (ﷺ)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল’ (মারাতিবুল ইজমা, পৃ. ১১৫; তাফসীরে বাগাবী, ২/১৬১ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ছাহাবীদের ইজমা অনুযায়ী চারের অধিক বিবাহ করা হারাম’ (আল-ফাতাওয়াউল কুবরা, ৬/২৬৪ পৃ)।
যে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধানকে অমান্য করে চারের অধিক বিবাহ করেছে, নিঃসন্দেহে সে কাবীরা গুনাহ করেছে। আর বিধানকে অস্বীকার করলে সে কাফির হিসাবে বিবেচিত হবে (সূরা আন-নিসা : ৬৫ ও ১১৫)। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাহ্ওয়াইহ্, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম সূয়ুত্বী, ইমাম ইবনু দাক্বীক্ব আল-ঈদ, ইমাম ইবনু হায্ম, শায়খ আবূ বকর আল-আজুর্রী, শায়খ আব্দুল্লাহ্ ইবনু বায (রাহিমাহুমুল্লাহ) ও সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে তারা কাফির ও স্বধর্মত্যাগী। কেননা সুন্নাতকে অস্বীকার করা কুরআনকে অস্বীকার করার নামান্তর। যে কিতাব ও সুন্নাতকে অস্বীকার করে অথবা এর কোন একটিকে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। অবশ্যই তাকে এ সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করা দরকার’ (শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল-জামা‘আতি, ৩/৪৭৮ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ৪/১৯ পৃ., প্রশ্ন নং-১১৫১২৫; আল-ওয়াসিয়্যাতুল কুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১/৩১৫ পৃ.; মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজি বিস-সুন্নাহ, পৃ. ১৪; শারহুল ইলমাম, ২/১৭৭-১৭৮ পৃ.; আল-ইহ্কাম ফী উছূলিল আহকাম, ২/৮০ পৃ.; আশ-শারী‘আহ, ১/৪১২ পৃ.; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৩/১৯৪ ও ৫/১৯-২০ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২/৪০৩ ও ৯/১৭৬-১৭৮ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ বেলাল, ঢাকা।