উত্তর : কোন মুসলিমকে যদি ভোট দিতে যেতে বাধ্য করা হয় সেক্ষেত্রে তিনি যেতে পারেন। অতঃপর অবশ্যই তিনি তুলনামূলকভাবে সৎ ব্যক্তির পক্ষে এবং অসৎ প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দিবেন অথবা চাইলে ভোট নষ্ট করেও দিতে পারেন। কিন্তু যদি এর কোনটাই তার পক্ষে করা সম্ভবপর না হয় এবং অসৎ ও আল্লাহদ্রোহী প্রার্থীকেই ভোট দিতে বাধ্য করা হয় অথবা তিনি যদি নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কা করেন, তাহলে আমরা আশা করছি এমতাবস্থায় তার কোন গুনাহ হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কেউ বিশ্বাস করার পরে আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং অবিশ্বাসের জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর ক্রোধ এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে অবিশ্বাসে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ তার চিত্ত বিশ্বাসে অবিচল’ (সূরা আন-নাহল : ১০৬)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জবরদস্তির গুনাহ হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে’ (ইবনু মাজাহ, হা/২০৪৩, ২০৪৪, ২০৪৫, সনদ ছহীহ)। দ্বিতীয়তঃ ঈমানদাররা সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম কোন আইন নেই। আল্লাহর আইন বিরোধী সকল বিধানই জাহিলী বিধান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তবে কি তারা প্রাগ-ইসলামী (জাহিলিয়্যাত) যুগের বিচার-ব্যবস্থা পেতে চায়? খাঁটি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা বিধান প্রদানে কে শ্রেষ্ঠতর’? (সূরা আল-মায়িদাহ : ৫০)।
আল্লাহর উপর ঈমান ও রাসূলগণের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন গ্রহণ করার প্রবণতাকে আল্লাহ তা‘আলা ‘বিস্ময়কর’ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা ধারণা (ও দাবী) করে যে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে? অথচ তারা ত্বাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে চায়’ (সূরা আন-নিসা : ৬০)। ইমাম শানক্বীত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন যে, যারা আল্লাহ্র আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করে, আল্লাহ তাদের ঈমানের দাবীর প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ ত্বগূতের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়ার পরেও ঈমানের দাবী- মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এমন মিথ্যা সত্যিই বিস্ময়কর’ (আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহুল কুরআন বিল কুরআন, ৩/২৫৯ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তার শপথ করে বলছেন, কোন ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ)-কে বিচারক হিসাবে না মানা পর্যন্ত ঈমানদার হবে না। রাসূল (ﷺ) যে বিধান দিয়েছেন সেটাই হক্ব, প্রকাশ্যে ও গোপনে উভয়াবস্থাতেই সেটাকে মেনে নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মুমিন) হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার আপনার উপর অর্পণ না করে। অতঃপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়’ (সূরা আন-নিসা : ৬৫)।
অতএব পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে না তাকে নির্বাচিত করা হারাম। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে হারামের প্রতি সন্তুষ্টি ও হারাম কাজে সহযোগিতা করা হল (বিস্তারিত দ্র. : ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১০৩০৪০; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৮/২০৭ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, রাজশাহী।