উত্তর : কোন মুসলিমের জন্য কুকুর রাখা জায়েয নয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে শিকার, পশু পাহারা অথবা ক্ষেত-খামার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুকুর রাখা জায়েয। আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শস্য ক্ষেতের পাহারা কিংবা পশুর হিফাযতের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল হতে এক ক্বীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৩২২, ৩৩২৪)। ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষেত কিংবা বকরীর পাল পাহারার কুকুর অথবা শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর রাখবে, প্রতিদিন তার ছাওয়াব থেকে এক ক্বীরাত করে কমতে থাকবে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৭৪)। ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, শিকার, পশু পাহারা এবং কৃষিকাজের জন্য কুকুর পালন করা জায়েয। আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) বলেন, ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সেই ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না’ (ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৫০)।
উক্ত হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে, রাসূল (ﷺ) যেসব ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন তা ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে কুকুর পালন করা হারাম। কোন হাদীছে এক ক্বীরাত কাটার কথা বলা হয়েছে আবার কোন হাদীছে দুই ক্বীরাত কাটার কথা বলা হয়েছে, উভয়ের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে আলিমদের মতভেদ রয়েছে। বলা হয়, কুকুর বেশি ক্ষতিকর হলে দুই ক্বীরাত কাটা হবে এবং কম ক্ষতিকর হলে এক ক্বীরাত কাটা হবে। আরো বলা হয় যে, প্রথমে নবী (ﷺ) বলেছেন যে, এক ক্বীরাত কাটা হবে, অতঃপর মানুষকে এই ব্যাপারে অধিক সতর্ক করণার্থে শাস্তি বৃদ্ধি করে তিনি দুই ক্বীরাত কাটার কথা বলেছেন। ক্বীরাত হল এমন একটি পরিমাণ যা আল্লাহ তা‘আলা জানেন’ (শারহু মুসলিম লিন নববী, ১০/৩৪২; ফাৎহুল বারী, ৫/৯ পৃ.)। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন মানুষের জন্য কুকুর লালন পালন করা হারাম, বরং এটি কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা শরী‘আত অনুমোদিত ক্ষেত্র ব্যতীত যে কুকুর পালন করবে, তার ছাওয়াব থেকে প্রতিদিন দুই ক্বীরাত কাটা হবে। এটি আল্লাহ তা‘আলার বিশাল বড় হিকমাত যে, মন্দ জিনিস মন্দ মানুষদের-ই আকৃষ্ট করে। বলা হয়ে থাকে, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কাফির, ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও কমিউনিস্টরা সবাই কুকুর পালন করে, আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি। প্রত্যেকে তার কুকুরকে সাথে নিয়ে ঘোরে এবং প্রতিদিন সাবান এবং অন্যান্য পরিষ্কারক ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে। অথচ পৃথিবীর সমস্ত সাগরের পানি এবং পৃথিবীর সমস্ত সাবান দিয়েও যদি তিনি কুকুরকে ধৌত বা পরিষ্কার করেন, তবুও তা কখনই বিশুদ্ধ হবে না! কেননা শূকরের মত কুকুরও সত্ত্বাগতভাবে নাপাক (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৭৪, ২১০৬)। এর অপবিত্রতা অন্তর্নিহিত, আর অন্তর্নিহিত অপবিত্রতা দূরীকরণের জন্য তাকে ধ্বংস করা কিংবা সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলা ব্যতীত পরিষ্কার করা যায় না (শারহু রিয়াযিছ ছলিহীন, ৪/২৪১ পৃ.)।
শুধু ঘরবাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য কুকুর রাখা জায়েয। তবে বাড়ি যদি শহরের মধ্যে হয়, সেক্ষেত্রে পাহারা দেয়ার জন্য কুকুরের প্রয়োজন নেই। এমতাবস্থায় কুকুর রাখা জায়েয নয়, এক্ষেত্রে প্রত্যেক দিন এক ক্বীরাত অথবা দুই ক্বীরাত নেকী কাটা হবে। পক্ষান্তরে যদি বাড়ি নির্জন জায়গায় হয়, সেক্ষেত্রে পাহারা দেয়ার জন্য কুকুর রাখা জায়েয। শিকারের ক্ষেত্রে উপকৃত হওয়ার জন্য যেমন কুকুর রাখা জায়েয, ঠিক তেমনি ক্ষতিকে প্রতিরোধ করার জন্য এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য কুকুর রাখা অধিক জায়েয (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল লিইবনি উছাইমীন, ৪/২৪৬ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৯৭৭৭, ৬৯৮৪০, ২৩৬৪৯৩)।
প্রশ্নকারী : আবু হুরায়রা সিফাত, মান্দা ,নওগাঁ।