উত্তর : কুরআনুল কারীমের আয়াত ও গ্রহণযোগ্য তাফসীরের ভিত্তিতে উক্ত কথাটি সঠিক হিসাবেই পরিচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য, আর সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য (উপযুক্ত)। এ (সচ্চরিত্র)দের সম্বন্ধে লোকে যা বলে এরা তা হতে পবিত্র। এদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা’ (সূরা আন-নূর : ২৬)। এই সূরার ২ নং আয়াতটিও এই আয়াতের অর্থকে সমর্থন করে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করবে’ (সূরা আন-নূর : ৩)।
ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম জারীর আত্ব-ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই আয়াত সম্পর্কে মুফাসসিরগণের ব্যাখ্যা থেকে দু’টি অর্থ প্রকাশিত হয়।
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, অপবিত্র নারীর কথাবার্তা অপবিত্র পুরুষদের জন্যই শোভা পায়, অনুরূপভাবে অপবিত্র পুরুষের কথাবার্তা অপবিত্র নারীর জন্য শোভনীয়। পক্ষান্তরে পবিত্র নারীর কথাবার্তা পবিত্র পুরুষদের জন্য, অনুরূপভাবে পবিত্র পুরুষের কথাবার্তা পবিত্র নারীর জন্য। অর্থাৎ অপবিত্র ও অশালীন কথাবার্তা সেই নর-নারী বলে থাকে, যারা নিজেরাই অপবিত্র ও নোংরা। আর পবিত্র ও উত্তম কথাবার্তা বলা পবিত্র ও উত্তম নর-নারীর অভ্যাস। আর মুনাফিক্বরা আয়েশা ছিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর উপর যে অপবাদ আরোপ করেছিল এবং তাঁর সম্পর্কে যে জঘন্য কথা উচ্চারণ করেছিল তার যোগ্য তো তারাই। কেননা তারাই অশ্লীল ও পাপিষ্ঠ ছিল। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সচ্চরিত্রা ও পবিত্র বলে তিনি পবিত্র কথারই যোগ্য। এ আয়াতটি মূলত তাঁর ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়।
(২) আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আয়াতটির পরিষ্কার অর্থ এই যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যেহেতু সবদিক থেকেই পবিত্র ছিলেন, তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিবাহ কোন অসতী ও অপবিত্র নারীর সঙ্গে ঘটাবেন এটা অসম্ভব। কেননা কলুষিতা নারীরা শুধু কলুষিত পুরুষের জন্যই শোভনীয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মত উত্তম ও উন্নত চরিত্রের মানুষের সঙ্গে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর মত সচ্চরিত্রা ও পবিত্র নারীর বিবাহ হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। এ আয়াতে একটি নীতিগত কথা বুঝানো হয়েছে। তা হল, আল্লাহ তা‘আলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে যোগসূত্র রেখেছেন। দুশ্চরিত্রা, ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষের প্রতি এবং দুশ্চরিত্র ও ব্যভিচারী পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমনিভাবে সচ্চরিত্রা নারীদের আগ্রহ সচ্চরিত্র পুরুষদের প্রতি এবং সচ্চরিত্র পুরুষদের আগ্রহ সচ্চরিত্রা নারীদের প্রতি হয়ে থাকে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সে সেরূপই পায় (তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৬/৩৪-৩৫ পৃ.; তাফসীরে ত্বাবারী, ৯/২৯৩ পৃ.; এছাড়াও তাফসীরে সা‘দী, কুরতুবী ও বাগাভী দ্র.)।
প্রশ্নকারী : সুমন, রাজশাহী।