উত্তর : আদর্শ পাত্র-পাত্রীর যোগ্যতার মাপকাঠি তার দ্বীনদারিতা ও উত্তম চরিত্র। বিবাহের ক্ষেত্রে আল্লাহভীরুতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ধার্মিকতাই মূখ্য বিষয়। বাকী ধনসম্পদ, বংশ পরিচয়, বংশ মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এগুলো গৌণ বিষয় (উছয়ামীন, লিক্বা আশ-শাহরী, লিক্বা নং-৪৬)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘ব্যাংকে চাকুরী করা হালাল নয়। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ভক্ষণ করা হারাম। এই রকম ছেলের সঙ্গে বিবাহ দেয়া উচিত নয়। বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দেয়া দ্বীনি দায়িত্ব’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৮/১৯৫-১৯৬ পৃ.)।
শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘পাপিষ্ঠ ও কাবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব পাঠালে, তাওবাহ না করা পর্যন্ত তাকে বর্জন করতে হবে’ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২১/৪৮ পৃ.)। তিনি আরো বলেন, ‘অভিভাবকের উচিত দ্বীনদার ছেলেকে চয়ন করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক আল্লাহভীরু। (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩)। দ্বীন, আমানতদারী ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট না হলে তার সঙ্গে বিবাহ দেয়া জায়েয হবে না। প্রয়োজনে তাহাজ্জুদ ও ইস্তিখারার ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৮/২৯৮ পৃ.; ১৮/১৯১ পৃ.; ১৮/৪৬-৪৭ পৃ.; ১৮/১৮৫-১৮৮ পৃ.; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ইবনে বায, ২০/১৫১ পৃ., ২০/৪২৩-৪২৪ পৃ.)।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা যে লোকের দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্র দ্বারা সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট যদি সেই ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে বিবাহ দিয়ে দাও। অন্যথা পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ, বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তার মাঝে কিছু থাকলেও কি? (অর্থাৎ সে যদি অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র হয়?) তিনি বললেন, ‘তোমরা যে লোকের দ্বীনদারী ও নৈতিক চরিত্র দ্বারা সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট যদি সেই ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিবাহ দিয়ে দাও। রাবী বলেন, এ কথা তিনি তিনবার বললেন’ (তিরমিযী, হা/১০৮৪-১০৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৬৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০২২; ইরওয়াউল গালীল, ৬/২৬৭ পৃ.)। অতএব বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষ ও পাত্রীপক্ষ উভয়কেই দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিতে হবে (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩; ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৬)।
শিরককারী, ছালাত ত্যাগকারী, সূদখোর বা অন্য কোন কাবীরা গুনাহে লিপ্ত পুরুষ বা নারীর সঙ্গে তাওবার পূর্বে বিবাহ দেয়া নাজায়েয’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২০/১৪৯-১৫১, ১৫৪-১৫৭, ১৫৯-১৬০, ২০৯-২১১, ৩৮২-৩৮৪ পৃ.; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৮/১২৫-১২৬ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা ছালাতকে ‘ঈমান’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, وَ مَا کَانَ اللّٰہُ لِیُضِیۡعَ اِیۡمَانَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِالنَّاسِ لَرَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ‘আর আল্লাহ এরূপ নন যে, তিনি তোমাদের ঈমান (তথা ছালাত)-কে ব্যর্থ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৪৩)।
প্রশ্নকারী : তাসনীম, মিরপুর, ঢাকা।