উত্তর : একটি আদর্শ দম্পতির কর্তব্য হল, একে অপরের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা এবং অনুগত হওয়া। পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক ভালোবাসা ও মধুর সম্পর্ক হল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَمْ نَرَ لِلْمُتَحَابَّيْنِ مِثْلَ النِّكَاحِ ‘দু’জনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের বিকল্প নেই’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৮৪৭; আবূ ই‘আলা, হা/২৭৪৭; মুসনাদু বাযযার, হা/৪৮৩৬; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬২৪)। অথচ আজ সিংহভাগ পরিবারের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছে। নির্বুদ্ধিতা, নিয়ন্ত্রণহীন ক্রোধ, জিদ ও আকাশচুম্বী চাহিদাই এ জন্য দায়ী।
স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৭, ৫১৯৯, ৬১৩৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫৯)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে উৎকৃষ্ট পন্থায় বার্তালাপ করা এবং উত্তম আচরণ প্রদর্শন করা স্বামীর উপর অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘পুরুষদের যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি নারীদের রয়েছে পুরুষদের উপর ন্যায়-সঙ্গত অধিকার’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِيْ وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوْهُ ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ কর’ (তিরমিযী, হা/৩৮৯৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৯৭৭)।
শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লাহর হিফাযতে (তাওফীকে) তারা তা হিফাযত করে’ (সূরা আন-নিসা : ৩৪)। সুতরাং পুরোপুরিভাবে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য। যেমন সেবা-যত্নে, ভ্রমণে, শক্তিশালীকরণে এবং অন্যান্য বিষয়ে যা ছহীহ সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত। বিবাহের পূর্বে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য করা ওয়াজিব ছিল, বিবাহের পর ঠিক তেমনি স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য। পিতা-মাতার কাছ থেকে সমস্ত আনুগত্য স্বামীর কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। পিতা-মাতার আর কোন আনুগত্য অবশিষ্ট নেই’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩২তম খণ্ড, পৃ. ২৬০-২৬১)।
হুসাইন ইবনু মিহছান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ফুফু রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কোন কাজে এসে ছিলেন, প্রয়োজনীয় কাজ ও কথা সম্পন্ন করলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, হে অমুক! তোমার কি স্বামী আছে? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। তিনি বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? সে বলল, আমি অসমর্থ ও অপারগ হওয়া ব্যতীত তার আনুগত্য ও খিদমতে কমতি করি না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি লক্ষ্য করে দেখবে যে, তুমি তার হৃদয়ের কোথায় অবস্থান করছ? কেননা সেই তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০২৫; সনদ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬১২; আদাবুয যিফাফ, হা/২১৩; হাকিম, হা/২৭৬৯, সনদ হাসান)।
প্রশ্নকারী : আয়েশা আকতার, নারায়ণগঞ্জ।