উত্তর : শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইয়াযীদ সম্পর্কে মানুষেরা তিনভাগে বিভক্ত। প্রথমতঃ রাফেযী শী‘আদের মতে, সে কাফির ও মুনাফিক। সে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দৌহিত্রকে হত্যা করার প্রয়াস চালিয়েছিল। যে শী‘আরা আবূ বকর ছিদ্দীক, ওমর ফারূক ও ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-দেরকে কাফির বলতে পারে, তাদের পক্ষে ইয়াযীদকে কাফির বলা খুবই সহজ। দ্বিতীয়তঃ অন্য এক দলের ধারণা হল, ইয়াযীদ সৎ ব্যক্তি ও ন্যায়বিচারক ছিলেন। তিনি ছাহাবী ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক ও জ্ঞানীগুণীদের নিকট উক্ত দু’টি মন্তব্যই ভ্রান্ত।
তৃতীয়তঃ পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকটে, তিনি মুসলিমদের শাসক ছিলেন। তার কিছু সৎ কাজ ছিল, আবার কিছু অসৎ কাজও ছিল। তিনি ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খিলাফাতকালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কাফির ছিলেন না এবং ছাহাবী ও কোন অলী-আওলিয়াও ছিলেন না’ (ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৮১-৪৮৪)। উম্মু হারাম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِيْ يَغْزُوْنَ الْبَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوْا قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَنَا فِيْهِمْ؟ قَالَ أَنْتِ فِيْهِمْ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِيْ يَغْزُوْنَ مَدِيْنَةَ قَيْصَرَ مَغْفُوْرٌ لَهُمْ. فَقُلْتُ أَنَا فِيْهِمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ لَا
‘আমার উম্মতের প্রথম যে দলটি নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে, তারা যেন জান্নাত অবধারিত করে ফেলল। উম্মু হারাম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি তাদের মধ্যে হব? তিনি বললেন, তুমিও তাদের মধ্যে হবে। অতঃপর নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দলটি কায়সার-এর রাজধানী (কনস্ট্যান্টিনোপল বা কুস্তুনতানিয়া) আক্রমণ করবে, তারা সকলেই ক্ষমাপ্রাপ্ত। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত হব?’ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯২৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
في هذا الحديث منقبة لمعاوية لأنه أول من غزا البحر ومنقبة لولده يزيد لأنه أول من غزا مدينة قيصر
‘এই হাদীছে মু‘আবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কৃতিত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা তিনিই সর্বপ্রথম সমুদ্রপথে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর সন্তান ইয়াজিদের কৃতিত্ব। কেননা তিনিই সর্বপ্রথম কায়সার-এর রাজধানী (অর্থাৎ কনস্ট্যান্টিনোপল) আক্রমণ করেন’ (ফাৎহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১০২)। ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
وكان أمير ذلك الجيش في غزو القسطنطينية وفيهم مثل أبي أيوب الأنصاري ...فكانت دولته أقل من أربع سنين...ويزيد ممن لا نسبُّه ولا نحبه
‘ইয়াযীদ কুস্তুনতুনিয়া যুদ্ধের সৈনিকদের প্রধান সেনাপতি ছিলেন। সৈনিকদের মধ্যে আবূ আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মত ছাহাবীও ছিলেন। তার শাসনকাল চার বছরের কাছাকাছি ছিল। অতএব ইয়াযীদ এমন একজন ব্যক্তি, যাকে আমরা গালিও দিব না এবং ভালোও বাসব না’ (সিয়ারু ‘আলামিল নুবালা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ‘তারা সকলেই ক্ষমাপ্রাপ্ত’। তাই আমরা তার ব্যাপারে এই ধারণা পোষণ করতে পারি যে, এটি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন বিষয়, তিনি চাইলে তাকে ক্ষমা করতেও পারেন, আবার নাও পারেন। তার নামের শেষে আমরা ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বা ‘লা‘আনাহুল্লাহ’ কোন কিছুই বলব না। আমরা সালাফে ছালিহীনের মতানুযায়ী নীরব থাকব ইনশাআল্লাহ। এটাই আমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর ও নিরাপদ।
প্রশ্নকারী : সুলতানুল ইসলাম, নওদাপাড়া, রাজশাহী।