বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা

মূল : শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল ওয়াহহাব
ব্যাখ্যা : শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছাইমীন
অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল ক্বাদীর*


(৪র্থ কিস্তি)

মূলনীতি-৪

শারঈ জ্ঞান, শারঈ জ্ঞানের অধিকারী আলেম ও ফক্বীহগণের বর্ণনা এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়েও যে তাদের রূপধারণ করতে চায় তার বর্ণনা। আর আল্লাহ তা‘আলা এই মূলণীতিটি সূরা আল-বাক্বারার প্রথম দিকে ৪০ থেকে ৪৭ নং আয়াতের মধ্যে তার নিম্নোক্ত বাণী দ্বারা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰبَنِیۡۤ  اِسۡرَآءِیۡلَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتِیَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِیۡۤ اُوۡفِ بِعَہۡدِکُمۡ ۚ وَ اِیَّایَ فَارۡہَبُوۡنِ - وَ اٰمِنُوۡا بِمَاۤ اَنۡزَلۡتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَکُمۡ وَ لَا تَکُوۡنُوۡۤا اَوَّلَ کَافِرٍۭ بِہٖ ۪ وَ لَا تَشۡتَرُوۡا بِاٰیٰتِیۡ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ۫ وَّ اِیَّایَ فَاتَّقُوۡنِ  -  وَ لَا تَلۡبِسُوا الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ تَکۡتُمُوا الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ  - وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ-  اَتَاۡمُرُوۡنَ النَّاسَ بِالۡبِرِّ وَ تَنۡسَوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ تَتۡلُوۡنَ الۡکِتٰبَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ -  وَ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ وَ اِنَّہَا لَکَبِیۡرَۃٌ اِلَّا عَلَی الۡخٰشِعِیۡنَ -  الَّذِیۡنَ یَظُنُّوۡنَ اَنَّہُمۡ مُّلٰقُوۡا رَبِّہِمۡ وَ اَنَّہُمۡ  اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ  - یٰبَنِیۡۤ  اِسۡرَآءِیۡلَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتِیَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ وَ اَنِّیۡ فَضَّلۡتُکُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ.

‘হে ইসরাঈল বংশধর! আমি তোমাদেরকে যে নে‘মত দান করেছি তা স্মরণ কর এবং আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর’। তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারী স্বরূপ আমি যা নাযিল করেছি তার প্রতি তোমরাই ঈমান আন এবং তোমরা তা প্রথম অস্বীকারকারী হয়ো না। আর তোমরা আমার আয়াতসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করো না এবং তোমরা কেবল আমাকেই ভয় কর। আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত কর না এবং জেনে-বুঝে সত্যকে গোপন করে না। তোমরা ছালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূ‘কারীদের সাথে রুকূ‘ কর। তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজেদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর তোমরা বুঝ না? হে বানী ইসরাঈল! তোমরা আমার নে‘মত স্মরণ কর, যে নে‘মত আমি তোমাদের দান করেছি এবং নিশ্চয় আমি তোমাদের বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি’। তিনি আরো বলেন, ‘হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নে‘মত দান করেছি তা স্মরণ কর এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সমগ্র পৃথিবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪০-৪৭)।

আর সুন্নাহ তথা হাদীছ এই বিষয়টিকে অবুঝ জনসাধারণের জন্য বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। অতঃপর (সময়ের পরিক্রমায়) এটি একটি অত্যন্ত অপরিচিত বিষয় হয়ে গেছে। এমনকি শারঈ জ্ঞান ও বুঝ যেন একটি নতুন ও ভ্রান্তির বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করাই যেন জনগণের নিকট পসন্দের বিষয় হয়ে গেছে। আর আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুলের উপর যে জ্ঞানার্জন করা ফরয করেছেন এবং প্রশংসা করেছেন, সে জ্ঞানের অবস্থা এমন হয়েছে যে, তা যেন শুধু ধর্ম ত্যাগী অথবা পাগল লোকেরাই চর্চা করে। (দ্বীনি ইলম অর্জনকারীকে পাগল অথবা ধর্ম ত্যাগী মনে করা হয়) পক্ষান্তরে যে এই জ্ঞানকে অস্বীকার করে, তার বিরোধিতা করে এবং এই জ্ঞানার্জন করা হতে সতর্ক ও নিষেধ করতে গিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছে তাকেই প্রকৃত বিশেষজ্ঞ জ্ঞানী বলে মনে করা হয়।

মূল লেখক এই মূলনীতির মাঝে যে জ্ঞান ও জ্ঞানীর কথা উল্লেখ করেছেন তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইসলামী শরী‘আতের জ্ঞান অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যে সমস্ত প্রমাণ ও হেদায়াত অবতরণ করেছেন তার জ্ঞান।

আর যে ইলম প্রশংসা ও সুনামের দাবী রাখে, তাহল ইসলামী শরী‘আতের ইলম, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর কিতাব ও হিকমাতের জ্ঞান অবতরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ ہَلۡ  یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ  اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ  اُولُوا الۡاَلۡبَابِ  ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে’ (সূরা আয-যুমার : ৯)। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّيْنِ ‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন’।[১] অন্যত্র নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرَّثُوْا دِيْنَارًا وَلَا دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.

‘নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম মীরাছ রূপে রেখে যান না। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে’।[২]

সবার জানা বিষয় যে, নবীগণ যার ওয়ারিছ বানিয়েছেন তাহল শরী‘আতের জ্ঞান। তথাপিও আমরা অন্যান্য বিদ্যার উপকারকে অস্বীকার করি না। তবে তার দু’টি দিক হতে পারে। ১. যদি তা আল্লাহর আনুগত্য ও দ্বীনের সহযোগিতামূলক হয় এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাগণ উপকার লাভ করে অর্থাৎ সেই বিদ্যা কল্যাণমূলক বিষয়ের মাধ্যম হয়, তাহলে তা উত্তম ও কল্যাণ বলে বিবেচিত হবে। আর কতিপয় আহলে ইলম শিল্প-কারখানা বা কারিগরি জ্ঞানার্জন করাকে ফরযে কেফায়া হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে মতানৈক্য বিদ্যমান। ২. আর সর্বাবস্থায় যে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর প্রশংসা বর্ণিত হয়েছে তাহল- আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর জ্ঞানার্জন। এছাড়া অন্যান্য যত জ্ঞান আছে তা যদি কল্যাণ অর্জনের মাধ্যম হয়, তবে তা ভাল। আর যদি কোন জ্ঞান অকল্যাণ অর্জনের মাধ্যম হয়, তবে তা খারাপ। কিন্তু যদি কোন জ্ঞান ভাল-মন্দ কোন কিছুর মাধ্যম না হয়, তবে তা নিরর্থক ও সময় নষ্ট বলে বিবেচিত হবে।

ইসলামী জ্ঞানার্জনের মর্যাদা

১). আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে আলেম ব্যক্তির মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। তারা যা জেনেছে তার প্রতি নিজের আমল করা ও অন্যকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদের আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং দুনিয়াতেও জ্ঞানের দায়িত্ব পালন অনুযায়ী তার বান্দাদের মাঝে তাদের মর্যাদা উচু করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یَرۡفَعِ اللّٰہُ  الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ  وَ الَّذِیۡنَ  اُوۡتُوا  الۡعِلۡمَ دَرَجٰتٍ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নীত করবেন’ (সূরা আল-মুজাদালাহ : ১১)।

২). ইসলামী জ্ঞান নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রেখে যাওয়া সম্পদ। যেমন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,إِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرَّثُوْا دِيْنَارًا وَلَا دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ‘নবীগণ কোন দিনার বা দিরহাম মীরাছরূপে রেখে যান না। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে’।[৩]

৩). মানুষের মৃত্যুর পরও যা দুনিয়ায় থেকে যায় তার মধ্যে একটি হল ইসলামী জ্ঞান। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ صَدَقَةٌ جَارِيَةٌ وَعِلْمٌ يُنْتَفَعُ بِهِ وَوَلَدٌ صَالِحٌ يَدْعُوْ لَهُ ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ১. ছাদাক্বাহ জারিয়াহ ২. ইলম, যার দ্বারা উপকার হয় ৩. পুণ্যবান সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করতে থাকে’।[৪]

৪). রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে অন্যের সুখ-শান্তির মত কোন কিছু অর্জন করার জন্য ইর্ষা করতে উৎসাহিত করেননি শুধু দু’টি নে‘মত ছাড়া। ক. ইলম অর্জন করা ও তদনুযায়ী আমল করা। খ. এমন ধনী, যে তার সম্পদকে ইসলামের সেবায় লাগিয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَا حَسَدَ إِلَّا فِى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَسُلِّطَ عَلَى هَلَكَتِهِ فِى الْحَقِّ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْحِكْمَةَ فَهْوَ يَقْضِى بِهَا وَيُعَلِّمُهَا.

‘কেবল দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা বৈধ, ১. সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। ২. সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ প্রজ্ঞা দান করেছেন অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়ছালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়’।[৫]

৫). জ্ঞান হল আলো, যার মাধ্যমে বান্দা আলোকিত হয়। অতঃপর সে বুঝতে পারে কিভাবে তার রবের ইবাদত করবে এবং কিভাবে অন্যের সাথে আচরণ করবে। সুতরাং সে ব্যাপারে তার পথচলা জ্ঞান ও বিচক্ষণতার আলোকে হয়।

৬). জ্ঞানী ব্যক্তি এক প্রকার আলো, যার মাধ্যমে মানুষ তাদের ধর্মীয় ও দুনিয়াবী বিষয়ে পথের সন্ধান পায়। অধিকাংশ মানুষের নিকট বানী ইসরাঈলের ঐ ব্যক্তির ঘটনা অজানা নয়, যে ব্যক্তি নিরানব্বই জন ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। অতঃপর সে একজন মূর্খ আবেদকে জিজ্ঞেস করল, তার এই অপরাধ থেকে তওবার কোন সুযোগ আছে কি? অতঃপর আবেদ বিষয়টিকে অনেক বড় মনে করে বলল, না। তওবার সুযোগ নেই। অতঃপর প্রশ্নকারী তাকে হত্যা করল এবং তার মাধ্যমে একশ’ পূর্ণ করল। অতঃপর সে একজন আলেমের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাকে জানিয়ে দেন যে, নিশ্চয় তার জন্য তওবার সুযোগ আছে। তার মাঝে ও তার তওবার মাঝে কোন কিছুই বাধা হতে পারবে না। অতঃপর তাকে একটি শহরের সন্ধান দিলেন, যার অধিবাসীরা সৎ মানুষ। সে যেন ঐ এলাকায় চলে যায়। অতঃপর লোকটি আলেমের কথা মত ঐ এলাকায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিল। পথের মাঝেই তার মৃত্যু এসে গেল...।[৬]

ঘটনাটি অতিপ্রসিদ্ধ। সুতরাং ঘটনাটির মাঝে আলেম ও জাহেলের মধ্যে পার্থক্যটি লক্ষ্য করুন। অতএব যারা প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি তাদেরকে চেনা আবশ্যক। তারা হলেন, আল্লাহভীরু আলেম, যারা মানুষকে তাদের রবের শরী‘আতের উপর পরিচালনা করেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহভীরু আলেমগণ পৃথক হয়ে যাবেন ঐ সমস্ত আলেম থেকে, যারা আলেম না হয়েও আলেমের বেশ ধারণ করে। বাহ্যিকভাবে তারা দৃষ্টিনন্দন, এমনকি কথা ও কাজের মাধ্যমেও তারা আলেমদের বেশ ধারণ করে। তবে সে সৃষ্টির কল্যাণ কামনায় ও সত্য গ্রহণের মানসিকতায় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিলিয়ে দিয়ে তা চমৎকার সাজানো ভাষায় চালিয়ে দেয়াই তার নিকট প্রিয়। যেমন করে পিপাসিত ব্যক্তি মরুভূমির মরিচিকাকে দূরে থেকে পানি মনে করে কাছে এসে কিছুই পায় না। (আলেমের বেশ ধারণকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তেমনই। তাদের কাছে প্রকৃত ইলমের কিছুই পাওয়া যায় না।) বরং এটা বিদ‘আত ও গুমরাহী, যাকে কিছু মানুষ প্রকৃত জ্ঞান ও সঠিক বুঝ বলে মনে করে এবং এটা ছাড়া অন্য কিছু উচ্চারণ করলেই তাকে সত্য অবিশ্বাসী তথা ধর্মত্যাগী অথবা পাগল মনে করা হয়।

এই ছিল মূল লেখকের বক্তব্যের ভাবার্থ। যেন তিনি ঐ সকল পথভ্রষ্টকারী বিদ‘আতপন্থী ইমামদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যারা সুন্নাতপন্থী ব্যক্তিগণকে এমন কিছু ব্যাপারে নিন্দা করে থাকে যে বিষয় থেকে তারা দোষমুক্ত। এর উদ্দেশ্য হল- যাতে করে তারা মানুষকে সুন্নাতপন্থী ব্যক্তিদের থেকে দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণে বাধা দিতে পারে। আর এটা ঐ সকল লোকদের রেখে যাওয়া পদ্ধতি, যারা ইতোপূর্বে সীমালঙ্ঘন করেছে ও সত্য রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

کَذٰلِکَ مَاۤ  اَتَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ  مِّنۡ رَّسُوۡلٍ  اِلَّا  قَالُوۡا  سَاحِرٌ  اَوۡ مَجۡنُوۡنٌ- اَتَوَاصَوۡا بِہٖ  بَلۡ ہُمۡ قَوۡمٌ طَاغُوۡنَ.

‘এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তারা বলেছে এতো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ। তারা কি একে অপরকে এই উপদেশই দিয়ে গেছে? বরং তারা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫২-৫৩)।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)



* মুহাদ্দিছ, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাউসা হেদাতীপাড়া, বাঘা, রাজশাহী।

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৩৭; মিশকাত, হা/২০০।

[২]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১; তিরমিযী, হা/২৬৮২; মিশকাত, হা/২১২, সনদ ছহীহ।

[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১; তিরমিযী, হা/২৬৮২; মিশকাত, হা/২১২, সনদ ছহীহ।

[৪]. তিরমিযী, হা/১৩৭৬; নাসাঈ, হা/৩৬৫১; মিশকাত, হা/২০৩, সনদ ছহীহ।

[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩; মিশকাত, হা/২০২, সনদ ছহীহ।

[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৭০।।




ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১১তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন
ইসরাঈলি বর্বরতায় রক্তাক্ত মানবতা - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২১তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
শবেবরাত - আল-ইখলাছ ডেস্ক
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
ফাযায়েলে কুরআন (৫ম কিস্তি) - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মেসবাহুল ইসলাম
নফল ছিয়াম - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে কুরআন (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
মাতুরীদী মতবাদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদাসমূহ (২২তম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
আত্মহত্যাকারীর শারঈ বিধান - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
যিলহজ্জ মাসের আমল ও তার ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম

ফেসবুক পেজ