উত্তর: মানহাজ (مَنْهَج) শব্দের শাব্দিক অর্থ হল পথ, পন্থা, পদ্ধতি, প্রণালী, রাস্তা, প্রোগ্রাম, কার্যক্রম, কারিকুলাম ইত্যাদি। শাইখ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘একজন মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ইসলামিক আদর্শ, রীতি-নীতি বা পদ্ধতি অনুসরণ করে চলে, তাকেই মানহাজ বলে’ (আল-আজওয়াবাতুল মুফীদাহ্ ‘আন আস-ইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ লিশ-শাইখ ড. ছালিহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, প্রশ্ন নং- ৪৪)। অন্যত্র শাইখ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘একজন মুসলিমের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই যথা, আক্বীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত-বন্দেগি, চালচলন, আচার-ব্যবহার ও লেন-দেন ইত্যাদিতে মানহাজ প্রযোজ্য (আল আজওয়াবাতুল মুফীদাহ ‘আন আস-ইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ লিশ-শাইখ ড. ছালিহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, প্রশ্ন নং- ৪৪)। অতএব সালাফী মানহাজ বলতে বুঝায় পূর্বসূরীদের তরিকা অর্থাৎ ছাহাবী ও তাবিঈগণ যে পথ, পন্থা, পদ্ধতি ও রীতি-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তাকেই সালাফী মানহাজ বলা হয়।
আল্লামা সাফাফরীনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘সালাফদের মানহাজ বলতে উদ্দেশ্য হল, যে আদর্শের উপর ছাহাবায়ে কিরামগণ, তাবিঈনগণ ও তাবি’ তাবিঈগণ ছিলেন এবং দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করা হয়েছে, দ্বীনে তাঁদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের মানুষই সাদরে গ্রহণ করেছে। তারা নয়, যাদেরকে বিদ‘আতী আখ্যায়িত করা হয়েছে অথবা যারা অসন্তোষজনক উপাধি নিয়ে প্রসিদ্ধ হয়েছে। যেমন খাওয়ারিজ, রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজিআহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, কারামিয়্যাহ প্রভৃতি সম্প্রদায় (লাওয়ামিঊল আনওয়ার, ১/২০ পৃ.)।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যেসব মুহাজির ও আনছার ঈমান আনয়নে অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাঁদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তাওবাহ: ১০০)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
‘আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি (ছাহাবীরা)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (তাবিঈরা)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (তাবি’ তাবিঈরা) ...’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯, ৬৬৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৩৩, ২৬৩৫, ২৫৩৬)। মূলত ছাহাবীদের যুগ, তাবিঈদের যুগ এবং তাবি‘ তাবিঈদের যুগের ব্যক্তিদের বুঝানো হয়েছে। অনুরূপভাবে পরবর্তী যুগের হিদায়াতপ্রাপ্ত, সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ ইমামগণও শামিল। শাইখুল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম আবুল মুযাফফার সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরস্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহর প্রতীক হল, সালফে ছালিহীনের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ’আতকে বর্জন করা’ (ছাওনুল মানত্বিক, পৃ. ১৫৮)।
প্রশ্নকারী : সালমান, কাজলা, রাজশাহী।