উত্তর : বর্ণনা সঠিক হলে বাবা কোন দোষের কাজ করেননি। শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন, সঊদী আরব স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘যে সন্তান পিতা-মাতার সেবা-যত্ন করেছে সে তার অপরিহার্য দায়িত্ব পালন করছে এবং অবশ্যই সে তার বিনিময় স্বরূপ দুনিয়ায় রহমত, বরকত ও পরকালে সীমাহীন নেকীর অধিকারী হবে।
পক্ষান্তরে যারা দেখাশুনা করেনি, তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। সে জন্য পিতা-মাতার সেবা-যত্ন, দেখাশুনা বা খিদমাত করার বিনিময় স্বরূপ কোন সন্তানকে উপহার বা হিবাহসূত্রে কিছু দেয়ার সময় বেশী দেয়া যাবে না। তবে যদি কোন একজন সন্তান পিতার সঙ্গে পিতার কাজ করে, জমি জায়গা দেখাশুনা করে, আর অন্য সন্তানরা না করে, তাহলে যে পরিমাণ পরিশ্রম ঐ অনুগত সন্তান করেছে সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক তাকে দেয়া মোটেও দোষনীয় নয়। কিংবা যদি ঐ কর্মকারী সন্তান তার কর্মের পারিশ্রমিক দাবী করে, তাহলে তাকে দৈনিক, মাসিক অথবা বাৎসরিক হিসাবে কর্ম সমপরিমাণ পারিশ্রমিক দেয়া জায়েয। যেমন, অন্য কোন লোক কাজ করলে তাকে দিতে হত। নিঃসন্দেহে এরূপ করাটা অন্য সন্তানদের উপর যুল্ম হবে না’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২০/৫৩; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব ইবনে উছাইমীন, ৩/৩১৬; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৬/২২৩ পৃ.)।
অনুরূপভাবে ইমাম ইবনে কুদামাহ, ইমাম ইবনে হাযম, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, শায়খ ইবনু বায, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘যদি কোন সন্তান অন্যদের তুলনায় গরীব হয় কিংবা তার সংসার বড় হয় কিংবা তার চিকিৎসার জন্য অথবা পড়াশোনার জন্য অথবা অন্যান্য শরী‘আতসম্মত কারণে তাকে বেশী দেয়া জায়েয। অনুরূপভাবে যদি কোন সন্তান গুনাহগার, বিদ‘আতী অথবা আল্লাহদ্রোহী হয়, তবে তাকে হিবাহ থেকে বঞ্চিত করাও দোষনীয় নয় (আল-ইনসাফ, ৭/১০৫; আল-মাহাল্লা, ৮/৯৫; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩১/২৯৫; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ইবনি উছাইমীন, ৯/২৯৮; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৬/১৯৩ পৃ.)।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পিতা-মাতা যদি তাঁদের জীবিত অবস্থায় সন্তানদের নামে উপহার, উপঢৌকন বা হিবাহ সূত্রে কিছু সম্পত্তি লিখে দিতে চান, সেক্ষেত্রে সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ ও ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হিবাহ বা উপহার দেয়ার সময় কোন সন্তানকে তার নির্ধারিত অংশ থেকে সামান্য কম দেয়াটাও যুল্ম হিসাবে বিবেচিত হবে। সন্তানদের কিছু হিবাহ বা দান করতে চাইলে দু’টি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমতঃ শারঈ উত্তরাধিকার আইন অনুপাতে হিবাহ্ বা দান করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ হিবাহ বা দান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সমতার বিধান পালন করতে হবে। না হলে সন্তানদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, শত্রুতা ও বিচ্ছেদ তৈরি হয়ে যাবে (আল-মাহাল্লা, ৮/৯৭; আল-মুগনী, ৬/৫৩; আল-ইনসাফ, ৭/১০৫; তুহফাতুল মুহতাজ, ৬/৩০৭; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩/২৯৪; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন, ৪/২৫৫; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৬/৩৭৭)।
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমার পিতা আমাকে কিছু জিনিস দান করেছিলেন। তখন আমরাহ বিনতে রাওয়াহাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) (অর্থাৎ আমার মাতা) বলেন, এ বিষয়ে রাসূল (ﷺ)-কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত আমি সম্মত নই। তখন তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, আমি আমার ও আমরাহ বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তখন নবী (ﷺ) আমাকে জিজ্ঞেস করে বললেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম দান করেছো? তিনি বললেন, ‘না’। (তখন তিনি বললেন, তাহলে আমাকে সাক্ষী রেখো না। কারণ, আমি যুলমের ব্যাপারে সাক্ষী থাকি না)। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, فَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর’। নু‘মান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তাঁর দান ফিরিয়ে নিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/২৫৮৬-২৫৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬২৩-১৬২৪, ৪০৬৯-৪০৭৯)। উপরিউক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সন্তানদের মধ্যে হিবাহ করার সময় সকলকেই সমানভাবে তাদের নির্ধারিত অংশ দিতে হবে। কাউকে প্রাধান্য দিয়ে অপরকে বঞ্চিত করা যাবে না’ (শারহুন নববী, ১১/৬৬ পৃ.)।
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক