উত্তর : ইসলামী খলীফা বা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কোন সাধারণ ইসলামী সংগঠনের নেতার হাতে বাই‘আত করা বিদ‘আত এবং নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন দল কর্তৃক কাউকে আমীর বানিয়ে তার অনুসরণ করা মারাত্মক ভুল। উলামায়ে কিরামের উচিত জনসম্মুখে এর বাস্তবতা তুলে ধরা। প্রত্যেকটি জামা‘আত ও সংগঠনের সাথে আলোচনা করা এবং সবাইকে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল (ﷺ) প্রদর্শিত সরল পথে চলার আহ্বান করা। যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে এবং ব্যক্তি স্বার্থে বা অন্য কোন কারণে নিজের একগুঁয়েমি বজায় রাখবে, তার বিষয়টি জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেয়া এবং তাদেরকে তার থেকে সতর্ক করা আবশ্যক। তাহলে যারা তার সম্পর্কে জানে না, তারা তার থেকে দূরে থাকতে পারবে। ফলে সে কাউকে আল্লাহ নির্দেশিত সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না’ (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৪/১৩৬-১৩৭ পৃ.)। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
هذه البيعة باطلة ولا يجوز فعلها لأنها تفضي إلى شق العصا ووجود الفتن الكثيرة
‘এই বায়‘আত বাতিল। এটা করা জায়েয নয়। কারণ এটা ঐক্য ভাঙ্গার পথ প্রশস্ত করে এবং অধিক ফেৎনা সৃষ্টি করে’ (শায়খ বিন বায, মাজমূউ ফাতাওয়া ২৮/২৫১ পৃঃ)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘...তবে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বা মুসলিম দেশের সরকার ছাড়া অন্য কারো হাতে বাই‘আত করা বৈধ নয়। কারণ আমরা যদি প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বাই‘আতের কথা বলি, তাহলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আমীর সৃষ্টি হবে। মূলত এটিই হচ্ছে বিভক্তি...’ (লিক্বাউ বাবিল মাফতূহ, ২/১৪১-১৪৩ পৃ., প্রশ্ন নং-৮৭৫, এছাড়াও প্রশ্ন নং ২৭, ৫৪, ১৬২ দ্র.)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘সফরে থাকা অবস্থায় আমীর বা দলনেতা নির্বাচন করার দলীল পাওয়া যায়। কিন্তু মুক্বীম বা স্বীয় বাসস্থানে অবস্থান কালে নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের আমীর নির্বাচনের প্রমাণে কোন দলীল পাওয়া যায় না।... তাই মুক্বীম অবস্থায় আমীর হিসাবে কারো হাতে বাই‘আত করে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের মত তার অনুসরণ করা বিদ‘আত’ (শারহু ছহীহিল বুখারী, পৃ. ৪৮৮-৪৮৯)। শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাই‘আত করা যাবে না। বিভিন্ন সংগঠনের আমীরের হাতে বাই‘আত করা বিদ‘আত। এটিই বিভক্তির মূল কারণ। একই শহর ও দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের উপর অপরিহার্য যে, তাঁদের বাই‘আত একই শাসকের জন্য নির্দিষ্ট হবে। একাধিক বাই‘আত জায়েয নয়’ (আল-মুনতাক্বা ফাতাওয়া শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান, ১/৩৬৭ পৃ.)।
শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, البيعة لا تكون إلا لولي أمر المسلمين ‘মুসলিমদের রাষ্ট্রপ্রধান ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাই‘আত করা যাবে না’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩২০)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘শারহু ছহীহিল মুসলিম’-এর মধ্যে বলেন,
وما ورد في الأحاديث من ذكر البيعة فالمراد بيعة الإمام،...فهذا كله في بيعة الإمام ولا شك
‘হাদীছসমূহের মধ্যে বাই‘আত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার অর্থ ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাই‘আত করা। ... নিঃসন্দেহে সব হাদীছই মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের বাই‘আতের সাথে সম্পর্কিত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৪, ৪৬৭০, ১৪৫১, ৪৬৮৭, ১৮৫৩, ৪৬৯৩ এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩২০)।
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, দিনাজপুর।