সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৩:০২ অপরাহ্ন
উত্তর : মুসলিম উম্মাহকে এভাবে বিভক্ত করার অধিকার যেমন তাদের নেই। তেমনি বাই‘আত নেওয়ারও তাদের কোন অধিকার নেই। কারণ ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম শাসক কেবল বাই‘আত নিতে পারবেন। তার কাছে বাই‘আত করা অপরিহার্য। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

وَإِنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدِيْ وَسَيَكُوْنُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُوْنَ‏.‏ قَالُوْا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ فُوْا بِبَيْعَةِ الْأَوَّلِ فَالْأَوَّلِ، أَعْطُوْهُمْ حَقَّهُمْ، فَإِنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ‏‏.‏

‘আমার পরে কোনও নবী‎র আগমন ঘটবে না। বরং খলীফাগণ হবেন এবং তাঁরা সংখ্যায় প্রচুর হবেন। তখন ছাহাবীগণ বললেন, তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কী আদেশ করবেন? তিনি বললেন, যার হাতে প্রথম বাই‘আত বা আনুগত্যের শপথ করবে, তাঁরই আনুগত্য করবে এবং তাঁদেরকে তাঁদের হক প্রদান করবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করবেন ঐ সকল বিষয়ে, যার দায়িত্ব তাঁদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪২; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৭১; মুসনাদ আহমাদ, হা/৭৯৬০)। অন্যত্র ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার যুগ সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন,

وما ورد في الأحاديث من ذكر البيعة فالمراد بيعة الإمام،...فهذا كله في بيعة الإمام ولا شك.


‘...তখন তোমরা মুসলিমদের দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, যদি মুসলিমদের কোন দল ও ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল-উপদল ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে এবং আমৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়ে ধরে হলেও তোমার দ্বীনের উপর অটল থাকবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৬০৬, ৩৬০৭, ৭০৮৪; ছহীহ মুসলিম হা/১৮৪৭; আবূ দাঊদ, হা/৪২৪৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৭৯,৩৯৮১)। উপরিউক্ত হাদীছে ‘ইমাম’ বলতে ইসলামী খলীফা বা শাসককে বুঝানো হয়েছে (সিলসিলা ছহীহাহ,্ হা/২৭৩৯)। ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলামী খলীফা বা আমীরুল মুমিনীন নির্বাচিত হলে সেই দিনই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে’ (আহকামুস সুলতানিয়্যা, পৃ. ২০-২৩)।

দ্বিতীয়তঃ খলীফা বা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কোন সাধারণ ইসলামী সংগঠনের নেতা বা আমীরের হাতে বাই‘আত করা যাবে না। এটা নিষিদ্ধ কর্ম। যেমন শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাই‘আত করা যাবে না। বিভিন্ন সংগঠনের আমীরের হাতে বাই‘আত করা বিদ‘আত। এটিই বিভক্তির মূল কারণ। একই শহর ও দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের উপর অপরিহার্য যে, তাঁদের বাই‘আত একই শাসকের জন্য নির্দিষ্ট হবে। একাধিক বাই‘আত জায়েয নয়’ (আল-মুনতাক্বা ফাতাওয়া শাইখ ছালিহ আল-ফাওযান, ১/৩৬৭ পৃ.)।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বা মুসলিম দেশের সরকার ছাড়া অন্য কারো হাতে বাই‘আত করা অবৈধ। কেননা আমরা যদি প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বাই‘আতের কথা বলি, তাহলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আমীর সৃষ্টি হবে। মূলত এটিই হচ্ছে বিভক্তি...’ (লিক্বাআউ বাবিল মাফতূহ, ২/১৪১-১৪৩, প্রশ্ন নং ৮৭৫ ও প্রশ্ন নং ২৭, ৫৪, ১৬২)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘সফরে থাকা অবস্থায় আমীর বা দলনেতা নির্বাচন করার দলীল পাওয়া যায়। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের আমীর নির্বাচনের প্রমাণে কোন দলীল পাওয়া যায় না। ... তাই মুক্বীম অবস্থায় আমীর হিসাবে কারো হাতে বাই‘আত করে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের মত তার অনুসরণ করা বিদ‘আত (শারহু ছহীহিল বুখারী, পৃ. ৪৮৮-৪৮৯)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘মুক্বীম অর্থাৎ শহর বা দেশে অবস্থানকালে রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর নিযুক্ত কোন ব্যক্তিই আমীর হবে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৩/৪০২-৪০৩ পৃ.)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, البيعة لا تكون إلا لولي أمر المسلمين ‘মুসলিমদের রাষ্ট্রপ্রধান ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাই‘আত করা যাবে না’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩২০)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘শারহু ছহীহিল মুসলিম’-এর মধ্যে বলেন,

وما ورد في الأحاديث من ذكر البيعة فالمراد بيعة الإمام،...فهذا كله في بيعة الإمام ولا شك

‘হাদীছ সমূহের মধ্যে বাই‘আত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তার অর্থ ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাই‘আত করা।... নিঃসন্দেহে হাদীছগুলো সবই মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের বাই‘আতের সাথে সম্পর্কিত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৪, ১৮৫৩-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩২০)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন দল কর্তৃক কাউকে আমীর বানিয়ে তার অনুসরণ করা মারাত্মক ভুল। উলামায়ে কিরামের উচিত জনসম্মুখে আসল বাস্তবতা তুলে ধরা। প্রত্যেকটি জামা‘আত ও সংগঠনের সাথে আলোচনা করা এবং সবাইকে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল (ﷺ) প্রদর্শিত সরল পথে চলার আহ্বান করা। যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করবে এবং ব্যক্তি স্বার্থে বা অন্য কোন কারণে নিজের একগুঁয়েমি বজায় রাখবে, তার বিষয়টি জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেয়া এবং তাদেরকে তার থেকে সতর্ক করা অপরিহার্য। তাহলে যারা তার সম্পর্কে জানে না, তারা তার থেকে দূরে থাকতে পারবে। ফলে সে কাউকে আল্লাহ নির্দেশিত সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৪/১৩৬-১৩৭ পৃ.)।

প্রশ্নকারী : মিনহাজ উদ্দীন আহমাদ, ফেনী।




প্রশ্ন (৬) : কেউ কেউ বলেন, ছাগলকে খাসি করানো যাবে না এবং এমন ছাগল কুরবানী করা যাবে না। কথা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : বর্তমানে কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিবাহ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কতটুকু শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : একজন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারবে। প্রশ্ন হল চারটি বিয়ে করার পর এদের মধ্যে একজন মারা গেলে বা ত্বালাক্ব হলে আবারও বিয়ে করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : তাহাজ্জুদ বা তারাবীহর মত নফল ছালাতে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : নবী করীম (ﷺ)-এর ই‘তিকাফ কেমন ছিল? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : প্রচলিত আছে যে, বিবাহের পূর্বে হজ্জ করা উচিত। উক্ত কথার পক্ষে কোন দলীল আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : মৃত্যুর কারণে কান্নাকাটি করার শারঈ বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৭) : কোন্ অবস্থায় ছাদাক্বাহ করলে নেকী বেশি পাওয়া যায়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ানোর সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (০৮) : পুরুষের জন্য পরচুলার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : এক ব্যক্তির পৈত্রিক কিছু সম্পদ আত্মীয়-স্বজন অবৈধভাবে ভোগ করছে। ফিরিয়ে নিতে গেলে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। এখন সে কোনটা প্রাধান্য দিবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : প্রচলিত ইলিয়াসী তাবলীগে যাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ