উত্তর : তাওহীদে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি আমলের ক্ষেত্রে অলস সে বড় অপরাধী। কারণ যেখানেই ঈমানের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই সৎ আমলের কথা বলা হয়েছে। তাই তার উপর ফরয ও ওয়াজিব দায়িত্বগুলো পালন করা আবশ্যক। যেমন ছালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, ছিয়াম পালন করা ইত্যাদি। ইচ্ছা করে এগুলো ছেড়ে দিলে বা অস্বীকার করলে মুসলিম থাকবে না। তখন মুনাফিক্ব বা কুফরীর পর্যায়ে চলে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ছালাত আদায়ে অলসতা পোষণকারী সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয় মুনাফিক্বরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, বস্তুত তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, শুধু লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে’ (সূরা আন-নিসা: ১৪২)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কাজেই দুর্ভোগ সেই ছালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের ছালাত সম্বন্ধে উদাসীন’ (সূরা আল-মাউন: ৪-৫)।
শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ছালাত আদায় করে কিন্তু অলসতা, প্রবৃত্তির তাড়নায় মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত ছুটে যায় বা ক্বাযা করে আদায় করে, এরূপ ব্যক্তির বিধান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াই (রাহিমাহুল্লাহ), সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি ও শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন শারঈ কারণ ছাড়া সজ্ঞানে এক ওয়াক্তের ছালাত ছেড়ে দেয় এবং তার সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে সে কাফির’ (ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ্ দায়িমাহ, ৫/৪১ ও ৬/৪০ ও ৫০ পৃ.;, মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২৯/১৭৯ পৃ.)। সুতরাং এই রকম অলসতা থাকলে তার দায়িত্ব বেশি-বেশি তাওবাহ, ইস্তিগফার, আমলে ছালেহ, ছালাত আদায় ও ছাদাক্বাহ ইত্যাদি করতে থাকা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবাহ করে, ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে’ (সূরা ত্বোহা: ৮২)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ ‘গুনাহ থেকে তাওবাহকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫০, সনদ হাসান)।
তাছাড়া মুমিনের জীবনে অলসতা ধ্বংসাত্মক অভিশাপ। অতিসত্বর এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) আজীবন বিভিন্ন দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট অলসতা থেকে পরিত্রাণ চেয়েছেন। যেমন,
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৮৯৩)।
অলসতা, ইবাদতে উদাসীনতা এবং কর্মজীবনে কর্মবিমুখতা ও হীনমন্যতা তৈরি করে। জীবনের সম্ভাবনা বিনষ্ট করে। উদাসীন, কর্মবিমুখ ও নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে না আল্লাহ ভালোবাসেন আর না মানুষ! আলসে, কুঁড়ে কিংবা উদাসীন মানুষকে সবাই অবহেলার চোখে দেখে। অলসতা ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির অন্তরায়। তাই অলস ব্যক্তির জীবন ফলপ্রসূ ও কর্মমুখর হয় না। কর্মহীনতা, নির্লিপ্ততা ও আলস্য নিজের জন্য যেমন কিছু করতে পারে না, তেমনি সমাজ ও অন্যদের জন্যও তেমন কিছু উপহার দিতে পারে না। উপরন্তু অনেক অলস আশপাশের লোকদের জন্য অবক্ষয় ডেকে আনে।
প্রশ্নকারী : সাকিব, নওগাঁ।