উত্তর : এমন প্রত্যেক গুনাহ যে সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ইহকালীন দণ্ড (যেমনঃ হাত কর্তন, প্রস্তরাঘাত করে মৃত্যুদণ্ড, বেত্রাঘাত ইত্যাদি) ও পরকালীন শাস্তির (যেমন কবরের আযাব, জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ ইত্যাদি) ঘোষণা করা করেছেন। আর যে ব্যাপারে লা‘নত, অভিসম্পাত, রাগ, গযব, ক্রোধ অথবা আগুনের শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোই কাবীরা বা বড় গুনাহ। পক্ষান্তরে ছাগীরা বা ছোট গুনাহের পরিচয়ের ব্যাপারে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, যে গুনাহ সম্পর্কে ইহকালীন দণ্ড ও পরকালীন শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো ব্যতীত অন্যান্য নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ্, এবং যে ব্যাপারে লানত, অভিসম্পাত, রাগ, গজব, ক্রোধ অথবা আগুনের শাস্তির ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোই ছাগীরাহ বা গুনাহ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ১১/৬৫০-৬৫২ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৮৭৫৯২)।
সুতরাং যে সকল গুনাহ কাবীরা পর্যায়ের নয় সেগুলোই ছাগীরাহ্ গুনাহ। তাহলে ছাগীরা গুনাহের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে হলে আগে কাবীরা গুনাহের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে হবে। লক্ষণীয় বিষয় হল- কাবীরা গুনাহ তাওবাহ ব্যতীত মাফ হয় না। অপরদিকে যে সকল ছাগীরা গুনাহের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সতর্ক করেছেন কিন্তু কোন শাস্তির কথা বলেননি, সেগুলো তাওবাহ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার সৎ ও নেক আমলের দ্বারা মাফ হয়ে যায়। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ, এক রামাযান হতে আরেক রামাযান এর মধ্যবর্তী সকল গোনাহের জন্য কাফ্ফারা হবে যদি কাবীরাহ গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাকা যায়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৩; তিরমিযী, হা/২১৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা ছোট-খাটো অপরাধ ব্যতীত গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে বিরত থাকে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমাশীল’ (সূরা আন-নাজম : ৩২)।
তবে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ), শায়খ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) সহ কিছু বিজ্ঞ আলিম বলেছেন, ‘ছাগীরা গুনাহ বার বার করতে থাকলে তা কাবীরা গুনাহে পরিণত হয়’ (শারহুন নাবাবী আলা মুসলিম, ২/৮৭; ইগাছাতুল লাহ্ফান, ২/১৫১; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ৫/১৭২ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যেমন, পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা ছাগীরা গুনাহ্। কিন্তু কেউ বার বার তাকালে তা কাবীরা গুনাহে পরিণত হয় (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ১৫/২৯৩ পৃ.)। তাই শাস্তি বা দণ্ডের ঘোষণা করা হয়নি বলে ছাগীরা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না। রাসূল (ﷺ) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে সতর্ক করে বলেন, ‘হে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)! ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪৩; আহমাদ, হা/২৩৮৯৪, ২৪৬৫১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫১৩)।
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার ব্যাপারে সর্তক হও। কেননা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার উদাহরণ হল- একদল লোক কোন এক পাহাড়ের উপত্যকায় যাত্রা বিরতি করল। অতঃপর সেখানে কেউ একটা কাঠি নিয়ে এল, আরেকজন আরেকটা কাঠি নিয়ে এল। তারপর তারা (এই ছোট ছোট কাঠিগুলো জমা করে সেগুলো দ্বারা) রুটি পাকাল। ঠিক তদ্রƒপ যে সব গুনাহকে তুচ্ছ ভাবা হয় সেগুলোই এতে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে’ (তাখরীজুল মুসনাদ, হা/২২৮০৮; তাখরীজু শারহিস সুন্নাহ, হা/৪২০৩; ছহীহুল জামি‘, হা/২৬৮৬; ছহীহুত তারগীব, হা/২৪৭১)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমারা ছোট গুনাহ থেকেও দূরে থাকবে। কেননা এগুলো একত্রিত হয়ে মানুষকে ধ্বংস করে ছাড়ে’ (তাখরীজুল মুসনাদ, হা/৩৮১৮; ছহীহুত তারগীব, হা/২৪৭০; ছহীহুল জামি‘, হা/২৬৮৭)। সেই সঙ্গে ছোট গুনাহগুলোকে তুচ্ছ মনে না করা আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর কেউ আল্লাহর সম্মানিত বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্য উত্তম’ (সূরা আল-হজ্জ : ৩০)।
প্রশ্নকারী : মাহফুজ, ফরিদপুর।