ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম
-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ভূমিকা
ইসলাম বিশ্বজগতের জন্য এক অনিন্দ্য সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। এখানে শৈথিল্যবাদের যেমন ছোঁয়া নেই, তেমনি কোন চরমপন্থারও আশ্রয় নেই। এটি মধ্যমপন্থায় আবৃত জীবনব্যবস্থা। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য নানা প্রচেষ্টা চলেছে যুগের পর যুগ। বিধর্মীরা সর্বদা ইসলামের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। অনুরূপ ইহুদী-খ্রিস্টানদের দোসর সেজে একশ্রেণীর মুসলিম নামধারী ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে অসংখ্য শিরক, বিদ‘আত, কুফর, তরীক্বা, মাযহাব ও ত্বাগূতী রীতিনীতি প্রণয়ন করেছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে এই আবর্জনাকেই দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করেছে। ফলে সোনালী ইসলামের আসল রূপ বিকৃত হয়েছে। এতে যেমন বিভিন্ন ফের্কার আবির্ভাব হয়েছে, তেমনি শিকড়হীন অসংখ্য দর্শনেরও সৃষ্টি হয়েছে। তাই মুসলিম নামধারী ব্যক্তিরা আজ রাজনীতির নামে কুফুরী মতবাদের গোলামী করছে। গভীর পরিকল্পনা করে ইসলামকে ভ্রান্তিপূর্ণ চেহারায় বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ﷺ) উক্ত স্বার্থান্বেষী চক্র সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করেছেন বিভিন্নভাবে। তাই সে দিকে তীক্ষè দৃষ্টি দিয়েই পথ চলতে হবে। বিভ্রান্তির শিকার হওয়া যাবে না।
বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার হুঁশিয়ারী
অধিকাংশ মুসলিম আজ দিশেহারা। কোন্টি অহীর বিধান আর কোন্টি শিরক-বিদ‘আত ও মানুষের তৈরি ত্বাগূতী বিধান- সেগুলোর মাঝে তারা পার্থক্য করতে পারছে না। অথচ মুসলিমরা যেন এই বিভ্রান্তিতে না পড়ে এবং কুচক্রী মহলের খপ্পরে নিমজ্জিত না হয় সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ﷺ) কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। সেগুলো ভুলে যাওয়ার কারণেই তারা বিপদগ্রস্ত হয়েছে। নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে সেগুলো উল্লেখ করা হল-
(১) অসংখ্য ভ্রান্ত পথ
ইসলাম প্রদর্শিত ছিরাতে মুস্তাক্বীম হেদায়াতের রাস্তা ছেড়ে মানুষ যে ভ্রষ্ট পথে চলবে, সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ﷺ) শুরুতে সতর্ক করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, একদা রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য একটি সোজা রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। অতঃপর তিনি ঐ রেখার ডানে এবং বামে বেশ কিছু রেখা টানলেন। তারপর বললেন, এগুলোও পথ। তবে এই পথগুলোর প্রত্যেকটিতেই (আলেমরূপী) শয়তান রয়েছে, সে মানুষকে তার দিকে ডাকছে। অতঃপর তিনি সোজা রেখাটির উপর ডান হাত রেখে নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন,
وَ اَنَّ ہٰذَا صِرَاطِیۡ مُسۡتَقِیۡمًا فَاتَّبِعُوۡہُۚ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِکُمۡ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ
‘নিশ্চয় এই সোজা-সরল পথটিই আমার পথ। তোমরা কেবল এই পথেরই অনুসরণ করবে; অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। নইলে তা তোমাদেরকে এই পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে’।[১]
রাসূল (ﷺ) আল্লাহর বাণীকে দলীল হিসাবে পেশ করে অসংখ্য পথের বিবরণকে আরো স্পষ্ট করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ এবং রাসূল (ﷺ)-এর দেখানো ছিরাতে মুস্তাক্বীম ছাড়াও অসংখ্য ভ্রষ্ট পথ থাকবে। উক্ত সরলপথ ছাড়া অন্য যেকোন পথে চললে যে জান্নাতের পথ থেকে ছিটকে পড়বে। তাই শয়তান প্রদর্শিত অসংখ্য রাস্তা থাকলেও প্রকৃত মুসলিমকে ছিরাতে মুস্তাক্বীমকেই শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে।
অন্য হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ছিরাতে মুস্তাক্বীমের একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। যেমন একটি সোজা রাস্তা, যার দু’পাশে দু’টি দেওয়াল রয়েছে। যাতে অনেক খোলা দরজা রয়েছে। আর প্রত্যেক দরজায় ঝুলানো পর্দা রয়েছে। রাস্তার মাথায় একজন আহ্বানকারী আছেন, যিনি লোকদেরকে ডেকে বলছেন, সোজা রাস্তা দিয়ে এসো। আঁকাবাকা চলো না। আর তার উপরে আরেকজন আহ্বানকারী আছে, যে সর্বদা তাকে আহ্বান করছে। যখনই বান্দা কোন একটি দরজা খোলার চেষ্টা করছে, তখনই তাকে বলছে, সর্বনাশ! দরজা খুলো না। কারণ দরজা খুললেই তুমি তাতে ঢুকে পড়বে। অতঃপর রাসূল (ﷺ) ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, সোজা রাস্তা হল ইসলাম। খোলা দরজাগুলো হল আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা। ঝুলন্ত পর্দাগুলো হল, আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমা। রাস্তার মাথায় আহ্বানকারী হল কুরআন। আর অপর প্রান্তের আহ্বায়ক হল প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহ্র পক্ষ হতে নিযুক্ত উপদেশদাতা’।[২]
(২) অগণিত ভ্রান্ত ফের্কা
প্রকৃত ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে এবং কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে মুসলিম উম্মাহ অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এতে মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট হবে এবং দ্বীনকে টুকরো টুকরো করবে। এমতাবস্থায় করণীয় কী সেটাও ইসলাম বলে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ فَرَّقُوۡا دِیۡنَہُمۡ وَ کَانُوۡا شِیَعًا لَّسۡتَ مِنۡہُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ اِنَّمَاۤ اَمۡرُہُمۡ اِلَی اللّٰہِ ثُمَّ یُنَبِّئُہُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَفۡعَلُوۡنَ
‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়েছে, আপনার উপর তাদের কোন দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয় আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তারা যা করছে, আল্লাহ সে বিষয়ে তাদেরকে জানিয়ে দিবেন’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৫৯)।
রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় বানী ইসরাঈলরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। একটি দল ব্যতীত সবই জাহান্নামে যাবে। ছাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, সেই দলটি কোন্ দল? রাসূল (ﷺ) উত্তরে বললেন, مَا أَنَا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأَصْحَابِىْ ‘আমি ও আমার ছাহাবীগণ আজকের দিনে যার উপর আছি, তার উপরে যে দলটি থাকবে’।[৩]
ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হি.) ইসলামের নামে ফের্কাবাজির বিবরণ দিয়ে বলেন,
وَقَدْ تُسَمَّ بِاسْمِ الْإِسْلَامِ مِنْ أَجْمَعَ جَمِيْعِ فِرَقِ أَهْلِ الْإِسْلَامِ عَلَى أَنَّهُ لَيْسَ مُسْلِمًا مِثْلُ طَوَائِفَ مِنَ الْخَوَارِجِ
‘ইসলামী দলসমূহের মধ্যে অনেক ফের্কারই ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মূলত সেগুলো ইসলামী দল নয়। যেমন খারেজী জোট’।[৪] অন্যত্র তিনি বিভিন্ন ফের্কার বর্ণনা দেয়ার পর বলেন, مُجْمِعُوْنَ عَلَى أَنَّهُمْ عَلَى غَيْرِ الْإِسْلَامِ نَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الْخَذْلَانِ ‘ঐ দলগুলো সবই ইসলাম বহির্ভূত। আমরা তাদের প্রতারণা হতে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ ভিক্ষা করছি’।[৫]
দুঃখজনক বিষয় হল, মাযারপন্থী, কবরপূজারী, বিদ‘আতী ও ফের্কাবাজদের মত আহলেহাদীছ সমাজও নানা দলে বিভক্ত হচ্ছে। নেতৃত্বের বেশধারী অনেক ব্যক্তি এ সমাজকে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করার কারখানা খুলে বসে আছে। তারা নেতৃত্বের মোহ, ব্যক্তি স্বার্থ, যিদ ও অহঙ্কারের স্বার্থে এই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তারা দ্বীনের দাওয়াতের চেয়ে আমিত্ব, গোঁড়ামি, আত্মপ্রশংসা, ব্যক্তিপূজা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা ও অন্ধত্বকেই জীবনের মূল সম্পদ হিসাবে গ্রহণ করেছে। ফের্কাবাজিই তাদের কাছে গর্ব ও কৃতিত্বের বিষয়। আহলেহাদীছ সমাজকে তারা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে, আর মুখে বলছে, যারা আহলেহাদীছ তাদের মাঝে কোন বিভক্তি নেই, আমরা ঐক্যের দুয়ার খুলে রেখেছি। অন্তরে ভ্রষ্ট প্রতারণা, মুখে যষ্টিমধু। ঐক্যের আলোচনা উঠলেই সব পক্ষই নানা ত্বাগূতী ও বিদ‘আতী যুক্তি উগলিয়ে দেয়। তারা এই অন্ধ স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করছে, সালাফদের বুঝের সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই। আর সাধারণ মূর্খ মানুষ কথিত মুরীদদের মত সেটাকেই হক্ব বলে মনে করছে। দাওয়াত যদি ফের্কায় পরিণত হয়, তবে পরিণাম কী হবে সেটা তাদের মাথায় নেই?
(৩) নানা মতভেদ
দলীয় মতানৈক্য মুসলিম জাতির জন্য অভিশাপ। শরী‘আতের বিধান জানা সত্ত্বেও গোঁড়ামি করে অহঙ্কারবসে মতভেদ সৃষ্টি করা গর্হিত অন্যায়। এরপরও মানুষ মতানৈক্য করবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহুবিধ মতভেদ প্রত্যক্ষ করবে।[৬] অথচ দাওয়াতের নামে মতানৈক্য সৃষ্টি করা শরী‘আতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡبَیِّنٰتُؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ
‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি শ্রেণী থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। তোমরা তাদের মত হয়ো না, যাদের নিকট প্রকাশ্য দলীল আসার পরও বিভক্ত হয়েছে ও মতানৈক্য করেছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪-১০৫)।
মনে রাখা আবশ্যক যে, যারা বিভক্তি সৃষ্টি করবে এবং বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের মুখমণ্ডল কালো কুৎসিত রূপ ধারণ করবে। আর যারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে তাদের মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল (সূরা আলে ইমরান: ১০৬)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,
تَبْيَضُّ وُجُوْهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوْهُ أَهْلِ البِدْعَةِ وَالْفُرْقَةِ
‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ব্যক্তিদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে এবং বিদ‘আতী ও বিভক্তি সৃষ্টিকারীদের মুখমণ্ডল কালো কুৎসিত হবে’।[৭]
সঠিক বিষয় জানার পরেও কেউ যদি ইখতিলাফ করে, তবে পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন,
وَ اٰتَیۡنٰہُمۡ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ فَمَا اخۡتَلَفُوۡۤا اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡیًۢا بَیۡنَہُمۡ اِنَّ رَبَّکَ یَقۡضِیۡ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ
‘আমরা তাদেরকে দ্বীন সম্পর্কে সুস্পষ্ট দলীল দিয়েছিলাম। তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরও তারা বিদ্বেষবশত মতবিরোধ করেছিল। তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করত, তোমাদের প্রতিপালক ক্বিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সে বিষয়ে ফায়ছালা করে দিবেন’ (সূরা আল-জাছিয়াহ: ১৭)।
(৪) শিরক-বিদ‘আত ও উদ্ভট আমলের আধিক্য
অধিকাংশ সৎআমলের নামে শিরক-বিদ‘আত ও কেচ্ছা-কাহিনী নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। কুরআন-হাদীছের ধার ধারবে না। তারা ভুয়া আমল করে পথভ্রষ্ট হবে, অথচ মনে করবে, ভাল আমলই করে যাচ্ছে। আল্লাহ বলেন,
قُلۡ ہَلۡ نُنَبِّئُکُمۡ بِالۡاَخۡسَرِیۡنَ اَعۡمَالًا اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ ہُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّہُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّہِمۡ وَ لِقَآئِہٖ فَحَبِطَتۡ اَعۡمَالُہُمۡ فَلَا نُقِیۡمُ لَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَزۡنًا ذٰلِکَ جَزَآؤُہُمۡ جَہَنَّمُ بِمَا کَفَرُوۡا وَ اتَّخَذُوۡۤا اٰیٰتِیۡ وَ رُسُلِیۡ ہُزُوًا
‘আপনি বলুন, আমল করার কারণে যারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিব? ঐ সমস্ত লোক তারাই, যাদের পরিশ্রম দুনিয়াতেই নষ্ট হয়ে গেছে, যদিও তারা মনে করছে, তারা ভাল আমলই করে যাচ্ছে। তারাই ঐ সমস্ত লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের বিধান ও তাঁর সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। এই কারণে তাদের আমলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমি ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য প্রমাণ স্থাপন করব না। জাহান্নামই হবে তাদের প্রতিদান, যেমন তারা অস্বীকার করেছে এবং আমার বিধান ও রাসূলগণকে ঠাট্টার পাত্র বানিয়েছে’ (সূরা আল-কাহফ: ১০৩-১০৬)।
রাসূল (ﷺ) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে অচিরেই অসংখ্য ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব ঘটবে। তারা নিত্যনতুন অগণিত বিদ‘আতী আমল সৃষ্টি করবে।[৮] অন্য হাদীছে তিনি বলেন, এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে, যারা আমার সুন্নাতকে ছেড়ে অন্যের পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত হেদায়াতের পথ ছেড়ে অন্যের পথ খুঁজবে।[৯]
উক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, সমাজে নানা রকমের ভুয়া ও উদ্ভট আমল বিস্তার লাভ করবে। একশ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী শরী‘আতের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপকর্ম সাধন করবে। যারা এই সমস্ত মিথ্যা আমল গ্রহণ করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের মাঠে সেগুলো নষ্ট করে দিবেন। আল্লাহ বলেন,
وَ قَدِمۡنَاۤ اِلٰی مَا عَمِلُوۡا مِنۡ عَمَلٍ فَجَعَلۡنٰہُ ہَبَآءً مَّنۡثُوۡرًا
‘তাদের আমলগুলো দেখার জন্য অগ্রগামী হব। অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (সূরা আল-ফুরক্বান: ২৩)।
عَنْ عَائِشَةَ র أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, কেউ যদি এমন কোন আমল করে, যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই- সেই আমল প্রত্যাখ্যাত।[১০] অন্য হাদীছে তিনি বলেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لاَ يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلاَ عَدْلاً
‘যে ব্যক্তি তাতে কোন বিদ‘আত সৃষ্টি করবে, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতামণ্ডলী এবং সমস্ত মানুষের পক্ষ থেকে অভিশাপ বর্ষণ করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষ থেকে কোন নফল ও ফরয ইবাদত কবুল করবেন না।[১১] উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছে মদীনার কথা বর্ণিত হলেও হুকুমটা ব্যাপক। যেমন আবঝ দাঊদের হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়।[১২]
জ্ঞাতব্য : কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত আমলই হল, সৎআমল। এর বাইরে দলীলবিহীন যত আমল সমাজে প্রচলিত আছে, সবই বিদ‘আতী আমল, জাল আমল।
(৫) পথভ্রষ্ট দ্বীন প্রচারক
ইসলামের নাম নিয়ে অসংখ্য দাঈ কিংবা আলেম জনগণকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘অনেক দাঈ জাহান্নামের দরজার দিকে আহ্বান করবে। যে ব্যক্তি তাদের ডাকে সাড়া দিবে তারা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাদের পরিচয় দিন। তিনি বললেন, তাদের বর্ণ বা ধরণ হবে আমাদের মত এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! যদি আমরা সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তবে আপনি আমাদেরকে কী করার নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেন, তোমরা মুসলিম জামা‘আত ও তার ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোন জামা‘আত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে তুমি সমস্ত ফের্কা থেকে আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাক এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার সন্নিকটে পৌঁছে যায়’।[১৩]
ভ্রান্তি ও বিভক্তির কারণ
প্রশ্ন হতে পারে, মুসলিমদের মাঝে এত ভ্রান্তি, বিভক্তি, দলাদলি ও মতবিরোধ কেন? এর উত্তর আমরা আল্লাহ্র বাণী থেকেই জানতে পারি। তিনি বলেন,
وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ لَجَعَلَکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّ لٰکِنۡ لِّیَبۡلُوَکُمۡ فِیۡ مَاۤ اٰتٰىکُمۡ فَاسۡتَبِقُوا الۡخَیۡرٰتِ اِلَی اللّٰہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا فَیُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ فِیۡہِ تَخۡتَلِفُوۡنَ
‘আল্লাহ চাইলে তোমাদেরকে এক উম্মতভুক্ত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যে বিধান দিয়েছেন, সে বিষয়ে পরীক্ষা করার জন্য তা করেননি। সুতরাং তোমরা সৎকাজের জন্য প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহ্র দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। আর তোমরা কোন্ বিষয়ে মতভেদ করছ, সে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ: ৪৮)।
উক্ত আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাকে যে বিধান দিয়েছেন, তার দ্বারা তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। আর তাই তিনি কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে বলেছেন। কল্যাণের পথ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহ্র রজ্জুকে শক্ত করে ধারণ কর, দলে দলে বিভক্ত হয়ো না (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)।
পরিত্রাণের উপায়
যেহেতু ইসলামের নামে দলাদলি হবে এবং অসংখ্য দলীল বিহীন ভুয়া আমল সৃষ্টি হবে, তাই এগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। নিম্নে কতিপয় মূলনীতি উল্লেখ করা হল:
(১) রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ দলীল ভিত্তিক মেনে চলা।
যখন চারিদিকে বিভক্তি, সমস্যা, সঙ্কট, জটিলতা দেখা দিবে, তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর সুন্নাত ও খুলাফায়ে রাশিদীনের আদর্শকে হাতে দাঁতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِىْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
‘নিশ্চয় আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহুবিধ মতভেদ প্রত্যক্ষ করবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে’।[১৪]
(২) বিশুদ্ধ আক্বীদা ও নির্ভেজাল তাওহীদের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা; কোনভাবেই শিরক ও বিদ‘আতের সাথে আপোস না করা।
নির্ভেজাল তাওহীদ ও আক্বীদার জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ একজন মানুষের জন্য তাওহীদই প্রথম এবং তাওহীদই শেষ বিষয়। তাই শিরক ও বিদ‘আত মিশ্রিত আক্বীদা সব আমল বিফলে যাবে। আক্বীদার উপরই যাবতীয় আমল নির্ভরশীল। রাসূল (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ ‘সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল’।[১৫] অন্য হাদীছে তিনি বলেন, إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا وَابْتُغِىَ بِهِ وَجْهُهُ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কোন আমল কবুল করবেন না, যদি তাঁর জন্য তা খালেছ হৃদয়ে ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য না করা হয়’।[১৬]
(৩) সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি বিরোধী শরী‘আতের ব্যাখ্যা বর্জন করা।
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অর্থ ও ব্যাখ্যা ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ﷺ) থেকে যেভাবে গ্রহণ করেছেন, সেভাবেই গ্রহণ করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। কারণ এই অপব্যাখ্যা ও উছূলী বিতর্কের কারণেই মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا
‘হেদায়াত প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের বিপরীত পথে চলে, সে যেদিকে চলতে চায়, আমি তাকে সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত করব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর এটা নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (সূরা আন-নিসা: ১১৫)।
উক্ত আয়াতে রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্যের সাথে ছাহাবায়ে কেরামের পথে চলাকে শর্তারোপ করা হয়েছে। সে জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুসরণের ক্ষেত্রে ঐভাবে বুঝতে হবে, যেভাবে রাসূল (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরাম বুঝেছেন। কারণ তাঁরাই হলেন প্রথম সারির আমলকারী।
(৪) যঈফ ও জাল হাদীছ নির্দ্বিধায় বর্জন করা।
দ্বীন ইসলামের ক্ষতি সাধন এবং মুসলিম ঐক্য বিনষ্টকরণে যে কয়টি বিষয় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, তার মধ্যে জাল ও যঈফ হাদীছ অন্যতম। মুসলিম জাতির প্রায় সকল বিষয়ে মতপার্থক্য থাকার নেপথ্যে রয়েছে এর প্রধান ভূমিকা। অথচ হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে কেউ যেন মিথ্যা, প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির আশ্রয় না নেয়, সেজন্য রাসূল (ﷺ) চূড়ান্ত হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে গেছেন।[১৭] ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত হুঁশিয়ারীর ব্যাপারে সতর্ক থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
(৫) কোন বিষয় ভুল প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বর্জন করা এবং সঠিকটা গ্রহণ করা।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর ভুলকারীদের মধ্যে তারাই শ্রেষ্ঠ, যারা তওবা করে’।[১৮] আশ্চর্যজনক বিষয় হল, রাসূল (ﷺ)ও আদম সন্তান হিসাবে ভুল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা অহি নাযিলের মাধ্যমে তা সংশোধন করে দিয়েছেন।[১৯] অনুরূপ চার খলীফাসহ অন্যান্য ছাহাবীরও ভুল হয়েছে।[২০]
অতএব কোন বিষয় ভুল প্রমাণিত হলে সাথে সাথে সংশোধন করে নিতে হবে। আর যদি আমিত্ব, জ্ঞানের অহংকার ও বংশীয় গোঁড়ামির কারণে সংশোধন না করে, তবে সে ইবলীস শয়তানের অনুসারী হয়ে যাবে (সূরা ছোয়াদ: ৭৫-৭৮)। আর যে ব্যক্তি সংশোধন করে নিবে তার জন্য সুসংবাদ রয়েছে (সূরা আল-আন‘আম: ৪৮ ও ৫৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یُبَدِّلُ اللّٰہُ سَیِّاٰتِہِمۡ حَسَنٰتٍ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
‘তবে যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের সমস্ত পাপকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-ফুরক্বান: ৭০)।
(৬) যারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন যাপন করেন, তাদের সাথে থাকা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো’ (সূরা আত-তওবা: ১১৯)। রাসূল (ﷺ) জান্নাতী দলের পরিচয় সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এবং আমার ছাহাবীরা যার উপর আছি, তার উপর যারা থাকবে’।[২১] তাই যারা সালাফদের অনুসারী তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং তাদের সাথেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রাসূল (ﷺ) অন্য হাদীছে বলেন, ইসলামের সূচনা হয়েছিল অল্প সংখ্যক মানুষের মাধ্যমে। পুনরায় ইসলাম অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝে ফিরে যাবে। তবে ঐ অল্প সংখ্যক মানুষের জন্যই রয়েছে জান্নাতে প্রতিষ্ঠিত ‘তূবা’ গাছের সুসংবাদ। তাদের পরিচয় হল, আমার মৃত্যুর পরে যখন লোকেরা আমার সুন্নাতকে নষ্ট করে দিবে, তখন তারা তাকে সংরক্ষণ করবে’।[২২]
উক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জান্নাতী দলই ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে, যাদের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।[২৩] আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অনুগ্রহে আমাদেরকে ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত করুন, ছিরাতে মুস্তাক্বীমে পরিচালিত করুন এবং জান্নাতী কাফেলার অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!!
তথ্যসূত্র :
[১]. সূরা আল-আন‘আম: ১৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪১৪২; দারেমী, হা/২০৮; নাসাঈ, আল-কুবরা, হা/১১১৭৪; সনদ হাসান, মিশকাত, হা/১৬৬।
[২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৬৭১; মিশকাত, হা/১৯১, সনদ ছহীহ।
[৩]. তিরমিযী, হা/২৬৪১, ২/৯২-৯৩ পৃ.; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৩৪৮, ২/৯২ পৃ.; মুস্তাদরাক হাকেম, হা/৪৪৪, ১/২১৮ পৃ.; মিশকাত, হা/১৭১।
৪]. আলী ইবনু হাযাম আন্দালুসী, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহান (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭১।
[৫]. আল-ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নিহান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭২।
[৬]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬।
[৭]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯২।
[৮]. আবূ দাঊদ, হা/৪৫৯৭, ২/৬৩১ পৃ.।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৮৪, ২/১০৪৯ পৃ., ‘ফেৎনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত, হা/৫৩৮২।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮, ২/৭৭ পৃ., ‘বিচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৫০।
[১১]. মুসলিম হা/১৩৭০; বুখারী হা/১৮৭০, ১/২৫১ পৃঃ, ‘মদীনার ফযীলত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[১২]. আবুদাঊদ হা/৪৫৩০, সনদ ছহীহ, ‘দিয়াত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১।
[১৩]. ছহীহ বুখারী হা/৭০৮৪, ২/১০৪৯ পৃঃ, ‘ফেৎনা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৫৩৮২।
[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১, ১/২ পৃ.; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৭, ২/১৪০-১৪১ পৃ.; মিশকাত, হা/১।
[১৬]. নাসাঈ, হা/৩১৪০, সনদ ছহীহ।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১; ১/৪৯১ পৃ., ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়; মিশকাত, হা/১৯৮, পৃ. ৩২, ‘ইলম’ অধ্যায়; বুখারী হা/১০৯, পৃ. ২১।
[১৮]. তিরমিযী, হা/২৪৯৯, ২/৭৬ পৃ.,; মিশকাত, হা/২৩৪১, পৃ. ২০৪।
[১৯]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী, হা/১২২৯, ১/১৬৪ পৃ. এবং ১/৬৯ পৃ., (ইফাবা হা/১১৫৭, ২/৩৪৬); মিশকাত, হা/১০১৭।
[২০]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুআক্কেঈন, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৭০-২৭২।
[২১]. তিরমিযী, হা/২৬৪১, ২/৯২-৯৩ পৃ.; মিশকাত, হা/১৭১, সনদ হাসান।
[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৭৩৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৯৮৫ ও ২৫১৪; মিশকাত, হা/১৫৯।
[২৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯২০, ২/১৪৩ পৃ.; মিশকাত, হা/৫৪০৬।