উত্তর : আক্বীদা ও দ্বীনের অন্যান্য বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হল, আল্লাহর কিতাব, রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত এবং ছাহাবায়ে কিরামের আদর্শ, বিশেষ করে খুলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ ও সুন্নাতকে পরিপূর্ণরূপে আঁকড়ে ধরা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন যে, তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন’ (সূরা আলে ইমরান: ৩১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের অনুসরণ করল সে স্বয়ং আল্লাহর অনুসরণ করল’ (সূরা আস-নিসা ৮০)। রাসূল (ﷺ) জুমু‘আর খুত্ববায় বলতেন, ‘অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নির্দেশনা। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দ্বীনের ভিতরে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা। প্রতিটি বিদ‘আতই গোমরাহী। আর প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭)। অনুরূপভাবে তিনি বলেছেন, فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ ‘সুতরাং তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল: আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতের উপর অবিচল থাক’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য ছাহাবীদের ঈমান ও আক্বীদাকে মানদণ্ড হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অতঃপর তোমরা যেরূপ ঈমান এনেছো তারাও যদি সেরূপ ঈমান আনে, তবে নিশ্চয় তারা হেদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা বিরোধিতায় লিপ্ত থাকবে (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৩৭)। সুতরাং নিশ্চিতরূপে আমরা একথা বলতে পারি যে, আক্বীদা, আচরণ ও আমলের ক্ষেত্রে তাওহীদের প্রকৃতি জানতে হলে আল্লাহর কিতাব, রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত এবং ছাহাবায়ে কিরামের আদর্শ, বিশেষ করে খুলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ ও সুন্নাতকে দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরতে হবে। অর্থাৎ সালাফে ছালিহীনের মানহাজকে আঁকড়ে ধরতে হবে। প্রকৃত মানহাজ থেকে বিচ্যুত হলেই ভ্রষ্টতা অনিবার্য।
প্রকৃতপক্ষে সালাফী মানহাজের অনুসারী আহলেহাদীছ বা আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পথই হল, আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা এবং ছাহাবায়ে কিরামগণ, তাবিঈগণ ও তাবি‘ তাবিঈগণের দেখানো পথ ও পদ্ধতি অনুসারে তার উপর আমল করা। কারণ, আজ মুসলিম বিশ্বে যতগুলো ভ্রান্ত মতবাদ বা দল আছে, প্রত্যেকেই কিন্তু নিজেদের অবস্থানের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য কুরআন ও হাদীছ থেকেই দলীল দিয়ে থাকে। তার পরও তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, কেন? কারণ, তারা ছাহাবাদের তথা সালাফে ছালিহীনের বুঝ ও মূলনীতিকে অবজ্ঞা করে কুরআন ও হাদীছের দলীলগুলোকে নিজেদের স্বার্থে নিজেদের বুঝ অনুযায়ী ব্যবহার করছে। স্বাভাবিকভাবেই যত মত তত পথ তৈরি হয়েছে। অতএব, প্রযুক্তি বিদ্যার সীমাহীন উন্নতির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শী‘আ, রাফিযী, খারিজী, আহলুল কুরআন, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজি‘আহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, কারামিয়্যাহ সহ অসংখ্য ভ্রান্ত মতবাদ ও সম্প্রদায়ের জন্ম হয়েছে। এই ভ্রান্ত মতবাদগুলোই সমাজে প্রচলিত। তাই কম হলেও সালাফী মানহাজের আলিম, বক্তা ও লেখকদের কাছ থেকেই জ্ঞানার্জন করা উচিত এবং তাঁদের-ই লেখা বই-পুস্তক পড়া উচিত। কেননা জ্ঞানের গভীরতা না থাকাটা মোটেও দোষণীয় নয়, কিন্তু ভুল ও ভ্রান্ত জ্ঞানার্জন খুবই হানিকর৷ ঈমানচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দাঁড়াবে৷ সুতরাং ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করার লক্ষে পড়াশোনার আগে মানহাজ দেখে নেয়াটাও অতীব যরূরী। এজন্যই শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান বলেন, ‘একজন মুসলিমের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই যথা, আক্বীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত-বন্দেগি, চালচলন, আচার-ব্যবহার ও লেন-দেন ইত্যাদিতে সকল ক্ষেত্রেই মানহাজের অনুরণ আবশ্যক’ (আল আজওয়াবাতুল মুফীদাহ ‘আন আস-ইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ লিশ শায়খ ড. ছালিহ ইবনু ফাওযান আল ফাওযান, প্রশ্ন নং- ৪৪)।
প্রশ্নকারী : মামুন বিন হাশমত, কুষ্টিয়া।