মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন
উত্তর : পানির প্রকারভেদ নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও পানি তিন প্রকারের। (১) ত্বাহুর (طَهُوْرٌ) অর্থাৎ পরিষ্কারক, পবিত্রকারী। এমন পানি যে নিজে পবিত্র এবং অপরকে পবিত্র করে। যেমন : কুয়ো, টিউবওয়েল, নদী বা সমুদ্রের পানি। (২) ত্বাহির (طَاهِر) অর্থাৎ পরিষ্কার, নির্মল, নিষ্কলুষ, পবিত্র। এমন পানি যে নিজে পবিত্র কিন্তু অপরকে পবিত্রকারী নয়। যেমন গোলাপ জল, আঙুরের রস, ডালিমের রস ইত্যাদি। (৩) নাজ্স (نَجْس) অর্থাৎ নাপাক, অপবিত্র, ময়লা, নোংরা, কলুষিত, অপরিচ্ছন্ন। এমন পানি যে নিজেও পবিত্র নয় এবং অপরকেও পবিত্র করতে পারে না (হাশিয়াতুত্ব ত্বাহ্ত্বাবী, পৃ. ১৭; বাদায়িউছ ছানায়ী, ১/৬৭; আল-কাফী, ১/১৫৫; মাওয়াহিবুল জালীল, ১/৮২; আল-মাজমূঊ, ১/৮০)। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর নিকটে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা সমুদ্র পথে আসা-যাওয়া করি এবং সাথে করে সামান্য মিঠা পানি নিই। যদি আমরা তা দিয়ে ওযূ করি তাহলে পিপাসার্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওযূ করতে পারি? উত্তরে তিনি বললেন, هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ ‘তার পানি পবিত্রকারী এবং তার মৃত জীব হালাল’ (আবূ দাঊদ, হা/৮৩; তিরমিযী, হা/৬৯; নাসাঈ, হা/৩৩১; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬১, ৩৯৩)।

ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ছাহাবীগণ এটি নিশ্চিতরূপে জানতেন যে, সমুদ্রের পানি পবিত্র, অপবিত্র নয়। তাঁদের জিজ্ঞাসা করার উদ্দেশ্যে ছিল, ‘সমুদ্রের পানি পবিত্রকারী কি-না?’ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, পবিত্র হলেও সব পানি পবিত্রকারী হয় না (আল-মাজমূঊ, ১/৮৫ পৃ.)। অনুরূপভাবে রাসূল (ﷺ) স্থির পানিতে গোসল করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন স্থির, যা প্রবাহিত নয় এমন পানিতে কখনো পেশাব না করে। (সম্ভবত) পরে সে আবার তাতে গোসল করবে’ (ছহীহ বুখারী হা/২৩৮, ২৩৯, মুসলিম হা/২৮২) এবং ঘুম থেকে উঠে হাত ধৌত করার পূর্বে পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘...আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন ওযূর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে হাত ধৌত করে নেয়, কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৬২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৮)। অতএব এই সমস্ত পানি অপবিত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাতে গোসল করতে নিষেধ করা হয়েছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কিছু পানি অপবিত্র না হলেও তা দ্বারা কিন্তু পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

কেউ কেউ বলেন, পানির শুধু দুই প্রকারের-ই হয়ে থাকে। যথা: (১) ত্বাহুর (طَهُوْرٌ) অর্থাৎ পরিষ্কারক, পবিত্রকারী। (২) নাজ্স (نَجْس) অর্থাৎ নাপাক, অপবিত্র, ময়লা, নোংরা, কলুষিত, অপরিচ্ছন্ন। ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অসংখ্য সাথীরা বলেছেন যে, بل الطَّاهِرُ هو الطَّهورُ ‘যেটা ত্বাহির সেটাই ত্বাহুর অর্থাৎ পবিত্র আর পবিত্রকারী একই জিনিস’ (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, ৫/২৯৭ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কিতাব এবং সুন্নাহতে পানি নামটি সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। নবী (ﷺ) পানিকে দুইভাগে বিভক্ত করেননি: ‘পবিত্র আর পবিত্রকারী’। সুতরাং এরূপ বিভক্তকরণ কিতাব ও সুন্নাহ বিরোধী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং পানি না পেলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর’ (সূরা আন-নিসা: ৪৩; সূরা আল-মায়িদাহ: ৬)। এমন প্রত্যেক জিনিস যার নামকরণ করা হয়েছে পানি নামে সেটি ত্বাহুর এবং ত্বাহির দুটোই (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ১৯/২৩৬ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য কথা হল, মুত্বলাক্ব বা সাধারণ পানি দুই প্রকারের, পবিত্র আর অপবিত্র। নবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, إنَّ الْماَءَ طَهوْرٌ لَا يُنجِّسُهُ شَيْءٌ ‘নিশ্চয় পানি পবিত্র, তাকে কোন কিছু অপবিত্র করতে পারে না’ (আবূ দাঊদ, হা/৬৭; তিরমিযী, হা/৬৬; নাসাঈ, হা/৩২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৮১৮)।

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এর অর্থ হল- যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে কোন অপবিত্র জিনিস পড়ে তার স্বাদ অথবা গন্ধ অথবা রং পরিবর্তন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পবিত্র। আর পরিবর্তন হয়ে গেলে, উলামাদের সর্বসম্মতিক্রমে তখন এটি অপবিত্র হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি পানিতে গাছের পাতা বা এ জাতীয় জিনিস পড়ে, তাহলে তা অপবিত্র হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত পানিকে পানি বলা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হবে। অপরদিকে কোন কিছু সংমিশ্রণ হওয়ার কারণে যদি পানির নাম পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন দুধ, চা, কাহ্ওয়া ইত্যাদি। তখন সেটা পানির বিধান থেকে বহির্ভূত হয়ে যায়, তখন তাকে আর পানি বলা যাবে না। এই সংমিশ্রণ ঘটার পরও কিন্তু সেটি পবিত্র, যদিও তা পবিত্রকারী নয়। পক্ষান্তরে মুক্বাইয়াদ বা আবদ্ধ পানি। যেমন গোলাপ জল, আঙুরের রস, ডালিমের রস, এগুলো ত্বাহির (পবিত্র) কিন্তু ত্বাহুর (পবিত্রকারী) নয়। এর মাধ্যমে অপবিত্রতা ও নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব নয়। কেননা সেটি মুক্বাইয়াদ পানি, মুত্বলাক্ব পানি নয়। শরী‘আতের দৃষ্টিতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য মুত্বলাক্ব বা সাধারণ পানি হওয়া শর্ত। যেমন বৃষ্টির পানি, সমুদ্র, নদী ও ঝর্নার পানি’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১০/১৪ পৃ.)।

শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী পানি দুই প্রকার। যথা: পবিত্র এবং অপবিত্র। কোন নাপাকী জিনিস পড়ার কারণে যখন তার তার স্বাদ অথবা গন্ধ অথবা রং পরিবর্তন হয়ে যায়, সেটাই অপবিত্র। আর যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে সেটা পবিত্র।  ত্বাহির নামে তৃতীয় প্রকার প্রতিষ্ঠিত করা শরী‘আত সম্মত নয়। কেননা এর কোন দলীল নেই। শরী‘আতের আলোকে যদি তৃতীয় প্রকার প্রমাণিত হত, তাহলে অবশ্যই তা স্পষ্ট হাদীছ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হত। তাকে প্রমাণ করার জন্য অতিরিক্ত বর্ণনার প্রয়োজন হত না (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১১/৮৬ পৃ.)।


প্রশ্নকারী : আব্দুল মুমিন, সিরাজগঞ্জ।





প্রশ্ন (২৪) : ‘মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আক্বছা ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে ই‘তিকাফ করা যাবে না। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য তা‘বীয ব্যবহার করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) :  জনৈক আলেম বলেছেন, মুমিনরা সবাই আল্লাহর ওলী। কিন্তু অন্যজন বলেছেন, কারা আল্লাহর ওলী তা আমরা কেউই জানি না। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট দিয়ে কোন ইহুদী বা খ্রিস্টান বা মুসলিমের লাশ অতিক্রম করবে, তখন তোমরা তার জন্য দাঁড়াবে। এটা তার সম্মানে নয়, তোমরা মূলত ফেরেশতাদের সম্মানার্থে দাঁড়াও’ (মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৫০৯) মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : কোন ব্যক্তি টাকা ধার নিয়ে সময়মত টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। যাকাত দেয়ার সময় উক্ত টাকা বাদ দিয়ে যাকাত দিলে হবে কি? উল্লেখ্য, যে টাকা ধার দেয়, সে দেয়ার সময়ই নিয়ত করে যে, যদি সেই ব্যক্তি কোন কারণে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে উক্ত টাকা সে যাকাতের টাকা ধরে বাদ দিবে। এটা কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : পারিবারিক বিষয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্বামী তার স্ত্রীকে মারধর করে এবং বলে, যা তোকে ছেড়ে দিলাম, ত্বালাক্ব, ত্বালাক্ব, ত্বালাক্ব বলে তিনবার উচ্চারণ করে। ভুল বুঝতে পেরে পরে ক্ষমা চায়। উক্ত ত্বালাক্ব কি সাব্যস্ত হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : দেশে নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবসা করে আয় করলে তা হালাল হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : হারাম পন্থায় উপার্জিত টাকা দিয়ে যদি কাউকে খাদ্য খাওয়ার দাওয়াত দেয় অথবা কোন উপঢৌকন দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : ব্যভিচার বৃদ্ধি পেলে দরিদ্রতা আসে। এ কথা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : জনৈক আলিম বলেন, ‘ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) মুসলিম জাতির পিতা নন। বরং সকলের জাতির পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)। আবার কেউ কেউ বলেন, নবী-রাসূলগণের পিতা হচ্ছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৬) : পাঁচটি রাত জেগে ইবাদত করলে তার জন্য জান্নাত যরূরী হয়ে যাবে। (১) তারবিয়ার রাত বা যিলহজ্জের ৮ তারিখের রাত, (২) আরাফার রাত, (৩) কুরবানীর রাত ,(৪) ঈদুল ফিতরের রাত ও (৫) ১৫ শা‘বানের রাত। উক্ত হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : কুরবানীর চামড়ার টাকা কিভাবে বণ্টন করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ