উত্তর : উক্ত ছিয়াম পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করবে, যখন সক্ষম হবে (ফাৎহুল ক্বাদীর, ২/৩৫৫; আল-মাজমূঊ, ৬/২৬৭; আল-মুগনী, ৩/১৪৯ পৃ.)। হাসান বাছরী, ‘আত্বা বিন আবী রাবাহ, যাহ্হাক, নাখঈ, আবূ উবাইদ, আবূ ছাওর, ইবনুল মুনযির সহ সালাফে ছালিহীনের একটি জামা‘আত একই মত পেশ করেছেন (তাফসীরুল কুরতুবী, ২/২৮৯ পৃ.)। নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা মুসাফির লোকের ছিয়াম ও অর্ধেক ছালাত কমিয়ে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাদের জন্যও ঐ অবস্থায় ছিয়াম ছাড়ার সুযোগ দিয়েছেন’ (তিরমিযী, হা/৭১৫; নাসাঈ, ৪/১৮০ পৃ.; ইবনু মাজাহ, হা/১৬৬৭)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমদের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী এক রমাযানের ক্বাযা ছিয়াম পালনে পরবর্তী রমাযান পর্যন্ত বিলম্ব করা জায়েয নয়। কারণ আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন, ‘আমার উপর রমাযানের যে ক্বাযা ছিয়াম থাকতো তা পরবর্তী শা‘বান মাস ব্যতীত আমি আদায় করার সুযোগ পেতাম না’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৯৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪৬)। এটি প্রমাণ করে যে, দ্বিতীয় রামাযানের পরে পালন করার কোন ছাড় নেই। যদি কোন ওজর ছাড়া এমনটি করে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং তার উপর ওয়াজিব হল দ্বিতীয় রামাযানের পর অবিলম্বে ক্বাযা ছিয়াম পালন করা। তার ওপর মিসকীন খাওয়ানো আবশ্যক হবে, না-কি না এ ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। সঠিক কথা হল, তার ওপর মিসকীন খাওয়ানো আবশ্যক হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৫)। আল্লাহ তা‘আলা এখানে ক্বাযা পালন ছাড়া অন্য কিছু ওয়াজিব করেনি (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৯/প্রশ্ন নং-৩৫৭)।
তাঁকে আবারো জিজ্ঞাসা করা হয় যে, এক নারী গত বছর রামাযান মাসে কিছু ছিয়াম ভেঙ্গেছে। অতঃপর শা‘বান মাসের শেষদিকে ছিয়ামগুলোর ক্বাযা পালন শুরু করেছে। এর মধ্যে তার হায়িয শুরু হয়ে গেছে এবং এ বছরের রামাযান মাসও শুরু হয়ে গেছে। অথচ তার একটি ছিয়াম ক্বাযা পালন রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে তার উপর কী কর্তব্য? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সে নারী এ বছরের রামাযানের আগে যে ছিয়ামটির ক্বাযা পালন করতে পারেনি তার ওপর সে ছিয়ামটির ক্বাযা পালন করা ওয়াজিব। এ বছরের রামাযান মাস শেষ হলে গত বছরের যে ছিয়াম তার ছুটে গেছে সেটার ক্বাযা পালন করবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৯/প্রশ্ন নং-৩৫৮)।
তাঁকে আবারো জিজ্ঞাসা করা হয় যে, এক নারী নিফাসের কারণে রামাযানের ছিয়াম ভেঙ্গেছে এবং দুধ পান করানোর কারণে ক্বাযাও পালন করতে পারেনি। এর মধ্যে দ্বিতীয় রামাযান শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় তার উপর কী ওয়াজিব? উত্তরে তিনি বলেন, এ নারীর ওপর ওয়াজিব হল যে দিনগুলোতে সে ছিয়াম ভেঙ্গেছে সেগুলোর বদলে ছিয়াম রাখা। এমনকি সেটা যদি দ্বিতীয় রামাযানের পরে হয় তবুও। কেননা সে বিশেষ ওজরের কারণে প্রথম রামাযান ও দ্বিতীয় রামাযানের মাঝে ক্বাযা পালন করতে পারেনি। কিন্তু যদি শীতকালে ক্বাযা পালন করা তার জন্য কষ্টকর না হয়, সেটা একদিন বাদ দিয়ে একদিন হলেও তাহলে সেটাই তার উপর অনিবার্য। এমনকি সে যদি দুধ পান করায় তবুও। তার উচিত রামাযানের যে ছিয়ামগুলো ছুটে গেছে দ্বিতীয় রামাযান আসার আগেই সেগুলোর ক্বাযা পালন করা। যদি সে না পারে তাহলে দ্বিতীয় রামাযান পর্যন্ত বিলম্ব করলেও কোন অসুবিধা নেই (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৯/প্রশ্ন নং-৩৬০)।
সারকথা হল, এ দিনগুলোর ছিয়ামের ক্বাযা পালন করা ঐ নারীর দায়িত্বে থাকা ঋণ। যখনই তার সক্ষমতা হবে তখনই সেগুলোর ক্বাযা পালন করা অপরিহার্য।
প্রশ্নকারী : ফারজানা, সাতক্ষীরা।