উত্তর : হারাম সম্পদ বা মাল দুই প্রকারের। যথা-
(১) মূল সম্পদ বা মালটাই হারাম। যেমন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও জোরপূর্বক দখল করা জিনিস বা টাকা-পয়সা। কারোর কাছ থেকে এই প্রকার জিনিসের উপঢৌকন গ্রহণ করা জায়েয নয়। কারণ সেটি মূল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া অপরিহার্য। তাই যদি কেউ সরাসরি ঐ মাল বা টাকা দ্বারা উপহার কিনে দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করা এবং ভক্ষণ করা জায়েয হবে না। অনুরূপভাবে মদ, নেশাদার বস্তু, হারাম প্রাণীর গোশত ইত্যাদিগুলো মূলতই হারাম। তাই এগুলো উপভোগ করা, উপহার দেয়া ও নেয়া সবই হারাম।
(২) মূল সম্পদ বা মালটা হালাল কিন্তু তার উপার্জনের পদ্ধতিটি হারাম। অথবা যে সম্পদে হালাল ও হারামের সংমিশ্রণ রয়েছে। যেমন সূদী ব্যাংক বা বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করে প্রাপ্ত বেতন, অথবা অন্য কোনো নিষিদ্ধ উপায়ে উপার্জিত টাকা, যেমন ঘুষ, প্রতারণা, নাচ, গান এবং সিনেমা জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য কোন পেশার পারিশ্রমিক ইত্যাদি। হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। পক্ষান্তরে যারা তার কাছ থেকে বৈধ পন্থায় উক্ত অর্থ গ্রহণ করবে, তাদের জন্য তা দোষনীয় নয়। যদিও তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই অধিক উত্তম। এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হল তার দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং খাওয়া থেকে বেঁচে থাকা। বিশেষ করে তার বিরত থাকাটা যদি মালিকের বিবেককে জাগ্রত করে এবং তাকে তা ছাড়তে সাহায্য করে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৬৪৮৬)।
আলেমগণের বক্তব্য হল, হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থ শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। সন্তান হিসাবে পিতা যদি তাকে উপহার স্বরূপ ঐ মাল থেকে কিছু দেয়, তবে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে পিতার ঐ উপহার বর্জন করাই উত্তম হবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৫০১৮; আহকামুল কুরআন, ১/৩২৪; আল-মাজমূঊ, ৯/৪৩০; ফাতাওয়া ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুবরা, ২/২৩৩; কাশ্শাফুল ক্বিনা‘, ৩/৪৯৬ পৃ.)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যা উপার্জন সূত্রে হারাম তা শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। (যেমন সূদ) সূদী কারবার কারী ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন উক্ত সম্পত্তি তার ওয়ারিছদের জন্য হালাল। কিন্তু যার মূলই হারাম, যেমন মদ, তা মালিকের জন্যও হারাম এবং উত্তরাধিকারীদের জন্যও হারাম। অনুরূপভাবে চুরি বা ডাকাতির মাল, তা ওয়ারিছদের জন্যও হালাল নয়। মূল মালিকের সন্ধান পাওয়া গেলে তা তার নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, আর সন্ধান পাওয়া না গেলে তার নামে ছাদাক্বাহ করে দিতে হবে (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ১/৩০৪ ও ১৩/১৮৮; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ৩/৪৫২; আল-ক্বাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত-তাওহীদ, ৩/১১২ পৃ.)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘উপার্জন সূত্রে হারাম, যেমন ঘুষের মাধ্যমে অথবা সূদের মাধ্যমে অথবা মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে অথবা এ জাতীয় অন্য কোন মাধ্যমে। এটি শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম, সে ছাড়া অন্য কারোর জন্য তা হারাম নয় (তাফসীরু সূরাতিল বাক্বারাহ, ১/১৯৮ পৃ.)।
রাসূল (ﷺ) ইহুদীদের কাছ থেকে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেন এবং খাইবারের ইহুদী মহিলা তাঁকে যে ছাগল হাদিয়া করছিল তিনি তা খেয়েছিলেন। তিনি ইহুদীদের দাওয়াত ক্ববুল করতেন। এটা সর্বজনবিদিত যে, সিংহভাগ ইহুদীরা সূদ খায় ও হারাম ভক্ষণ করে। কখনো কখনো এই মতটি শক্তিশালী হয় রাসূল (ﷺ)-এর ঐ উক্তি দ্বারা, যা তিনি বারীরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ছাদাক্বাহ্ সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটা বারীরার জন্য ছাদাক্বাহ্ আর আমার জন্য তা হাদিয়া’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৪৯৩, ২৫৭৮, ৫০৯৭, ৫২৮৯, ৫২৮৪, ৬৭৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৭৫, ১৫০৪; নাসাঈ, হা/২৬১৪, ৩৪৪৭-৩৪৫৪, ৪৬৪২-৪৬৫৬; ইবনু মাজাহ, হা/২০৭৬; আল-ক্বাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ, ৩/১১২ পৃ.)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন,
أنه سئل عمن له جار يأكل الربا ويدعوه إلى طعامه؟ فقال أجيبوه؛ فإنما المهنأ لكم والوزر عليه
‘তাঁর নিকটে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, আমার একজন প্রতিবেশী আছে যে সূদ খায় এবং সর্বদা আমাকে তার বাড়িতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়। এক্ষণে আমি তার দাওয়াত ক্ববুল করব কি? উত্তরে তিনি বললেন, তার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ কর। এটি তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দে গ্রহণীয় জিনিস এবং এর গোনাহ তার উপরে পতিত হবে’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হা/১৪৬৭৫; ইমাম আহমাদ আছারটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন, ইবনু রজব হাম্বালী, জামিঊল 'উলূম ওয়াল হিকাম, পৃ. ৭১ পৃ., বৈরূত ছাপা পৃ. ২০১)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তবে উক্ত ব্যক্তির সংশোধন বা তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদস্বরূপ যদি কেউ সাময়িকভাবে তার দাওয়াত গ্রহণ না করে, তবে সেটাই উত্তম হবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৮/২০৬ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহীম, টাঙ্গাইল।