উত্তর : ইসলামে একই সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব দেয়ার কোন বিধান নেই। সমাজে একই সঙ্গে তিন তালাক দেয়ার যে প্রথা চালু আছে, তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ঘোর বিরোধী। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘হে নবী! (আপনার উম্মতকে বলুন,) তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে ত্বালাক্ব দিতে ইচ্ছা কর, তখন তাদেরকে ত্বালাক্ব দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আর ইদ্দতের হিসাব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ হতে বহিষ্কার করো না এবং তারা নিজেও যেন বের না হয়, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর যে আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজের উপরই অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পর কোন উপায় করে দেবেন’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ১)। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলতেন, ‘তুমি যদি এক বা দু’ ত্বালাক্ব দিতে, কারণ নবী (ﷺ) আমাকে এরকমই নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, আর যদি তুমি তাকে এক সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব দিয়ে থাক তবে তোমার স্ত্রীকে ত্বালাক্ব দেয়ার ব্যাপারে তিনি তোমাকে যে আদেশ প্রদান করেছেন, সে ব্যাপারে তুমি তোমার প্রতিপালকের অবাধ্য হয়েছো’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৯০৮, ৫৩৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭১, ৩৫৪৮)।
অন্যত্র রাসূল (ﷺ)-এর যুগে এবং আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খিলাফাতকালের প্রথম দু’বছর পর্যন্ত তিন ত্বালাক্বকে এক ত্বালাক্ব হিসাবেই গণ্য করা হত। পরে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, লোকেরা একটি বিষয়ে অতি ব্যস্ততা দেখিয়েছে যাতে তাদের জন্য ধৈর্যধারণের ও সুযোগ গ্রহণের অবকাশ ছিল। এখন যদি বিষয়টি তাদের জন্য কার্যকর সাব্যস্ত করে দিই..। সুতরাং তিনি তা তাদের জন্য কার্যকরী করলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭২; আবূ দাঊদ, হা/২২০০)। উল্লেখ্য, ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে শুরু করে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগ পর্যন্ত তিন ত্বালাক্বকে এক ত্বালাক্ব গণনা করা হত। অতঃপর মানুষের মধ্যে ত্বালাক্ব প্রদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধমকিস্বরূপ এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন ত্বালাক্বকে তিন ত্বালাক্ব হিসাবেই গণ্য করার নির্দেশ জারি করা হয়। যা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও সাময়িক বিষয় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ২০/১৬৩-১৬৪ পৃ.; তাহ্তাবী হাশিয়াহ্ দুবরে মুখতার, ৬/১১৫; জামিউর রূমুজ, ১/৫০২ পৃ.; মাজমাঊল আনহর শারহে মুনতাফাল আবহার, ২/৬ পৃ.; দুররল মুনতাফা ফী শারহিল মুলতাক্বা, ২/৬ পৃ.)। সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে বলতে শুনেছেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করলে তা কসম সাব্যস্ত হবে, তার কাফ্ফারা আদায় করবে। তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূল (ﷺ)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭৩; ছহীহ বুখারী, হা/৫২৬৬)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আবূ রুকানাহ তাঁর স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন ত্বালাক্ব প্রদান করেন। অতঃপর তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। সুতরাং নবী (ﷺ) তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন, এটা এক ত্বালাক্ব’ (আবূ দাঊদ, হা/২১৯৬; মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ২২/১৩১, ২১/২৭৪ ও ৩৯৯ পৃ.; আওনুল মা‘বূদ, ৬/১৩৮ পৃ.; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৭৮; মাজমূঊল ফাতাওয়া লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ৩৩/৮৫ পৃ.)।
সালাফে ছালিহীন, হাম্বালী মাযহাব, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম, ইমাম ছানা‘আনী, ইমাম শাওকানী, শায়খ ইবনু বায ও শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘এক মজলিসে বা এক সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব দিলে মূলত তা এক ত্বালাক্ব হিসাবেই গণ্য হবে’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩৩/৭-১২ পৃ.; ই‘লামুল মাওক্বিঈন, ৩/৩৪ পৃ.; আল-ফুরূঊ, ৯/১৯; আল-ইনছাফ, ৮/৩৩৪; সুবুলুস সালাম, ২/২৫৬; নাইনুল আওত্বার, ৬/২৯০; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২১/৩০৫; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব ইবনু বায, ২১/৪৭৭; তাফসীরুল উছাইমীন, ৩/১১৫ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল আযীয সিকদার, রাজশাহী।