উত্তর : প্রথমতঃ উক্ত ফাতাওয়া এবং আক্বীদা দু’টিই শরী‘আতের পরিপন্থী। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যেমন ইসরা বা নৈশভ্রমণ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ঠিক তেমনি মি‘রাজ বা ঊর্ধ্বগমন নবী (ﷺ)-এর মুতাওয়াতির সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তিনি আসমানে আরোহণ করেছিলেন এবং সাতটি স্তর অতিক্রম করে সপ্তমাকাশে পৌঁছে ছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর প্রতিপালকের সঙ্গে বার্তালাপ করেছিলেন এবং তখনই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয়েছিল। সুতরাং যে ব্যক্তি সুস্পষ্ট শারঈ দলীল দ্বারা প্রমাণিত জেনেও এই ঘটনাকে অস্বীকার করবে এবং তার উপর অটল থাকবে নিশ্চিতরূপে সে কাফির (ইবনু বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, যঃঃঢ়ং://নরহনধু.ড়ৎম.ংধ/ভধঃধিং/৯৭৯৩/%উ৮%)।
দ্বিতীয়তঃ কুরআন মান্যকারীদের উপর হাদীছ মানা অপরিহার্য। কারণ কুরআনের মধ্যেই হাদীছের প্রামাণিকতা বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, (১) ‘কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের অন্তরে কোন দ্বিধা থাকবে না এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়’ (সূরা আন-নিসা : ৬৫)। (২) ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর’ (সূরা আল-হাশর : ৭)। (৩) ‘তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো অহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়’ (সূরা আন-নাজম : ৩-৪)। (৪) ‘কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পরও যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে তাকে আমরা সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস!’ (সূরা আন-নিসা : ১১৫)। (৫) ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)। এদের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) অনেক পূর্বেই সতর্ক করে বলেছেন, ‘জেনে রাখ! আমাকে কুরআন এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখ! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই আঁকড়ে ধর, তাতে যা হালাল পাবে তাকে হালাল হিসাবে এবং যা হারাম পাবে তাকে হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। নবী করীম (ﷺ) বলেন, জেনে রাখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়...’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫; তিরমিযী, হা/২৬৬৩-২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৭৪, ১৭১৯৪, সনদ হাসান)।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّيْ ‘সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি ঔদাসীন্য ও বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৫৩৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ أَطَاعَنِيْ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ عَصَى اللهَ ‘যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা‘আলারই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহ তা‘আলারই নাফরমানী করল’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭, ৭১৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৫)।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হাদীছ অস্বীকারকারীরা কাফির। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যারা মনে করে যে, রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য করা অপরিহার্য নয়, তারা কাফির, তাদের হত্যা করা অপরিহার্য’ (আল-ওয়াসিয়্যাতুল তুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১/৩১৫ পৃ.)। ইমাম সুয়ূত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যারা নবী করীম (ﷺ)-এর হাদীছকে অস্বীকার করে তারা কাফির এবং তারা ইসলামের গণ্ডি ও চৌহদ্দি থেকে নিষ্কাশিত হয়ে ইয়াহুদী, খ্রিস্টান অথবা অন্য কোন বিধর্মী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে’ (মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজি বিসসুন্নাহ, পৃ. ১৪)। ইমাম ইবনু দাক্বীক্ব আল-ঈদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত হওয়ার পরেও যারা তা প্রত্যাখ্যান করে তারা স্পষ্ট কাফির’ (শারহুল ইলমাম, ২/১৭৭-১৭৮ পৃ.)। ইমাম ইবনু হায্ম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি বলে, আমরা শুধু কুরআনের বিধানই মানব, হাদীছ মানব না, তবে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির (আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম, ২/৮০ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে তারা কাফির ও স্বধর্মত্যাগী। কেননা সুন্নাতকে অস্বীকার করা কুরআনকে অস্বীকার করার নামান্তর। যে কিতাব ও সুন্নাতকে অথবা এর কোন একটিকে অস্বীকার করে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। অবশ্যই তাকে এ সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করা দরকার’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২/৪০৩ ও ৯/১৭৬-১৭৮ পৃ.)। (৬) সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘যারা সুন্নাত অনুযায়ী আমল করাকে অস্বীকার করে তারা কাফির’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ৩/১৯৪ ও ৫/১৯-২০ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : গোলাম, বরিশাল।