বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন
উত্তর : ছালাত ক্বছর এবং জমা সফরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই যতদিন সফরে অবস্থান করবে, স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত ততদিন ছালাত ক্বছর ও জমা করবে (ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ্ দায়িমাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪০৬-৪০৭)।  নবী (ﷺ) এক অনির্দিষ্টকালের সফরে ১৯ দিন পর্যন্ত ক্বছর করেছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/১০৮০; তিরমিযী, হা/৫৪৯)। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) শাম দেশে যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে ২ বছর ছিলেন এবং ২ বছরই ছালাত ক্বছর করেছিলেন (মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালিক, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৮৮; ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৬)। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) পথে বরফ থাকার ফলে আজারবাইজানে ৬ মাস আটক ছিলেন এবং তাতে তিনি ক্বছর করেছিলেন (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩৩৯; বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৫২)।

ইমাম ইবনে হাযম্ (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম ইবনে ক্বুদামাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ), আল্লামাহ্ শানক্বিত্বী (রাহিমাহুল্লাহ), শায়খ ছালিহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী যে কোন ধরনের সফরে ক্বছর করা জায়েয, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে সফর বলা হবে, চাই সে সফর দীর্ঘায়িত হোক বা সংক্ষিপ্ত, এর কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। কেননা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে সফরের কোন নির্দিষ্ট দূরত্ব ও সময় নির্ধারণ করা হয়নি। তাই এ ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথার উপরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রচলিত প্রথায় একজন মানুষ যতদূর গমন করলে সফর হিসাবে বিবেচনা করা হয় সেটাই সফর হিসাবে বিবেচিত হবে। যার উপর ভিত্তি করে একজন মুসাফিরের জন্য দুই ছালাত জমা ও ক্বছর করবে (আল-মাহাল্লা, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৬-২১; বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬৮; আল-মাজমূঊ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩২৫; মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৪তম খণ্ড, পৃ. ১৫, ৩৫, ৪৮, ৪৯; আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিয়্যাহ, পৃ. ৪৩৪; আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৯০; যাদুল মা‘আদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৩; আস-সাইলুল জারার, পৃ. ১৮৮; আযওয়াউল বায়ান, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭৩; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৫১-৩৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১১)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে, তখন যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিররা তোমাদেরকে বিপন্ন করবে, সেক্ষেত্রে ছালাত ক্বছর করাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (সূরা আন-নিসা : ১০১)।

ঈসা বিন হাফস বিন ‘আসিম (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি সফরে দু’ রাক‘আতের অধিক আদায় করতেন না। আবূ বাকর, ‘উমার ও ‘উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-এর একই রীতি ছিল (ছহীহ বুখারী, হা/১১০২; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮৯)।

ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে সফরকে কোন নির্দিষ্ট দূরত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি। বরং সাধারণ সফরের কথা বলা হয়েছে (আল-মাজমূঊ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩২৬)। শায়খ ছালিহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কোথাও সফরের কোন নির্দিষ্ট পরিমাপ বা দূরত্ব উল্লেখিত হয়নি। এই জন্য সঠিক মতানুযায়ী, পরিভাষায় বা প্রচলিত অর্থে যাকে সফর বলা হয়, সেই সফরে ছালাত ক্বছর করা চলবে (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৯৭-৪৯৮)। ইমাম ইবনে ক্বুদামাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিন দিনের কম দূরত্বে ক্বছর করা যাবে না মর্মে কোন তথ্য প্রমাণিত নয় (আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৯)। অনুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতানুযায়ী সফরকে ৪৮ মাইল বা প্রায় ৮৮  কিলোমিটারের সঙ্গে শর্তযুক্ত করা অনুচিত (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৪তম খণ্ড, পৃ. ১০৬)।

শায়খ ছালিহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ছালাত ক্বছর করার দূরত্বকে কিছু আলিম প্রায় ৮৩ কিলোমিটারের সঙ্গে শর্তযুক্ত করেছেন। আবার কিছু আলিম বর্তমান অবস্থার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। সফরের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার না হলেও মানুষ যদি এটাকে সফর গণ্য করে তাহলে সেটা সফর। আর মানুষ যেটাকে সফর হিসাবে গণ্য করে না সেটা ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে হলেও সফর নয়। শেষের এই মতটি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বেছে নিয়েছেন। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা ছালাত ক্বছর করা বৈধ হওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারণ করেননি। একইভাবে নবী (ﷺ)ও কোন নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারণ করেননি। আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ رَسُولُ اللهِ  إِذَا خَرَجَ مَسِيْرَةَ ثَلَاثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلَاثَةِ فَرَاسِخَ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ

‘রাসূল (ﷺ) তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ (অর্থাৎ ৯ মাইল) দূরত্বের পথে বাহির হলে ছালাত দুই রাকা‘আত আদায় করতেন অর্থাৎ ক্বছর করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৯১; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃ. ৩৮১; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৩৮০৭৯)।


প্রশ্নকারী : শামীম, ঢাকা।





প্রশ্ন (১৮) : যাকাত বা ওশরের টাকা মাদরাসায় দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : কেউ যদি অজানা অবস্থায় শিরক করে, তাহলে তার আমল বাতিল হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : ক্বিয়ামতের মাঠে কুরবানীর পশুর লোম, শিং ও ক্ষুর  উপস্থিত হবে। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : মুসলিম রুক্বইয়্যাহকারী কি কোন অমুসলিম রোগীকে রুক্বইয়্যাহ করতে পারে এবং কোন বিধর্মীর কাছে থেকে কি রুক্বইয়্যাহ নেয়া যাবে, যদি তার পদ্ধতি সঠিক হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : ইমাম সূরা ফাতিহার শেষের আয়াত তিলাওয়াত করছেন। এমতাবস্থায় কেউ জামা‘আতে অংশগ্রহণ করলে সে কি ইমামের সঙ্গে ‘আমীন’ বলার পরে সূরা ফাতিহা পড়বে, না-কি প্রথমেই সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : ছালাত শেষে ইমাম যখন সালাম ফিরাবে, তখন মুছল্লীদেরকে কি উক্ত সালামের জবাব প্রদান করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬): যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদীছের মধ্যে এক ছা‘ খাদ্যদ্রব্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন হল- এক ছা‘ সমান কত কেজি? কেউ বলছেন ‘আড়াই কেজি’, আবার কেউ বলছেন '‘তিন কেজি’, কোনটি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : অনেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রাহিমাহুল্লাহ)-কে শয়তানের শিং বলে অভিহিত করে থাকে। এটা কি ঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : যাকাতের খাত কী কী? বিস্তারিত জানতে চাই। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : আপেল ভিনেগার যদি বাড়িতে আপেল দিয়ে তৈরি করা হয়। সেটা কি হালাল হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৬) : রাতে ঘুমানোর সময় ওযূ ছাড়াই আয়াতুল কুরছি, সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : এক ব্যক্তি প্রতি মাসে আমার বিকাশে হাজারে বিশ টাকাসহ টাকা পাঠায়। কিন্তু আমি প্রায় এজেন্ট নাম্বার দিয়ে টাকা ওঠালে আমার খরচ পড়ে চৌদ্দ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। বাকী ৫ টাকা ৫০ পয়সা আমার কাছে থেকে যায়। এই টাকাগুলো আমি খরচ করতে পারব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ