উত্তর : যে কোন প্রকারের প্রাণীর চিত্র অঙ্কন করা হারাম। হতে পারে তা ভাস্কর্য অথবা দেওয়াল চিত্র বা অম্লান চিত্র অথবা ক্যানভাস বা কাপড়ের উপরে চিত্র অথবা কাগজের উপরে অথবা ফ্যাব্রিকের উপরে, আর তা পালক দ্বারা নির্মিত হতে পারে অথবা কলম দ্বারা অথবা কোন যন্ত্রপাতি দ্বারা (যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল)। আর চিত্র তার বাস্তবরূপে হতে পারে অথবা কাল্পনিক, ক্ষুদ্রতর হতে পারে অথবা বৃহত্তর, সুন্দর হতে পারে অথবা বিকৃত, অথবা কঙ্কালের প্রতিনিধিত্বকারী কিছু দাগ হতে পারে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১/৪৭৯ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, জীব-জন্তুর ছবি তোলা বা তৈরি করা নাজায়েয। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ ‘ক্বিয়ামাত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক কঠিন শাস্তি তাদের হবে, যারা ছবি নির্মাতা’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/২১০৯; মুসনাদ আহমাদ, হা/ ৩৫৫৮)। তিনি আরো বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَصْنَعُوْنَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ
‘নিশ্চয় যারা এ জাতীয় ছবি তৈরী করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি প্রদান করা হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছিলে তাতে প্রাণ সঞ্চার কর’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৫১,৭৫৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/ ২১০৮)। তিনি আরো বলেন, وَآكِلِ الرِّبَا وَمُوكِلِهِ وَلَعَنَ الْمُصَوِّرَ ‘তিনি সূদ খেতে ও খাওয়াতে নিষেধ করেছেন এবং ছবি অঙ্কণকারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০৮৬; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ১৯/৭৭ পৃ.)। আর এ কথা সর্বজনবিদিত যে, কার্টুন এক প্রকারের চিত্র যা অঙ্কন করতে হয়। সুতরাং কার্টুন দেখার অর্থ হল, একে পরোক্ষভাবে সাহায্য করা। অথচ এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নেককাজ ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সাহায্য কর এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। আর আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাতে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২ পৃ.; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ, শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘কার্টুন সিনেমা ক্রয়-বিক্রয় করা এবং দেখা উভয়ই অবৈধ। কেননা তা হারাম চিত্র বা ছবি দ্বারা নির্মিত। ইসলামিক এবং অনৈসলামিক উভয় কার্টুনই ক্ষতিকারক। কেননা এর মধ্যে বহুবিধ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যথা : (ক) এগুলোর সিংহভাগই মিথ্যা ও বানোয়াট হয়ে থাকে। (খ) যে চরিত্রগুলো চিত্রায়িত করা হয় তা কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। (গ) এগুলোর মাধ্যমে নবীগণ ও ছাহাবীরা হাসির পাত্রে পরিণত হতে পারে বা হয়। বিশেষ করে কার্টুনে, যা নবী ও ছাহাবীদের শানে ঘোরতর অপরাধ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১/৩২৩ পৃ.; ফাতাওয়া আল-জামিঊল কাবীর, হাইআতু কিবারিল উলামা, ৩/৩২৮ পৃ.; লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ্, লিক্বা নং-৭১, প্রশ্ন নং-২; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১০৩৫২)।
প্রশ্নকারী : আযীযুল হাকীম, বগুড়া।