উত্তর : জীব-জন্তুর ছবি তোলা বা অঙ্কন করা হারাম। যখন জীব-জন্তুর ছবি তোলা হারাম, তখন ছবি নির্মাণ করার পর তা বিক্রয় করে অর্থোপার্জন করাও হারাম (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১/৭১০ পৃ.; ফাতাওয়া নং-৬৪০২)। একই প্রশ্ন শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘জীব-জন্তুর ছবি তোলা বা তৈরি করা নাজায়েয। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক কঠিন শাস্তি তাদের হবে, যারা ছবি নির্মাতা’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/২১০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৫৮)।
তবে প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে ছবি তোলা বৈধ। যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, ভোটার কার্ড, আইডেন্টিটি কার্ড, লাইসেন্স, ইত্যাদি বিশেষ প্রয়োজনীয় কারণে ছবি তোলা জায়েয। কেননা ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালাসমূহের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে অবৈধ জিনিস তৈরির অনুমতি প্রদান করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ‘কিন্তু যে নিরুপায় হয়ে অন্যায়কারী এবং সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে তা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে তার কোন পাপ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭৩; সূরা আন-আন‘আম : ১৪৫; সূরা আন-নাহল : ১১৫)। উল্লেখ্য, ঘনঘন প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনের বাহানায়, নিত্য নতুন স্টেটাস দেয়ার অজুহাতে ছবি তোলা হারাম। কেননা এগুলো বিশেষ প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত নয়।
দ্বিতীয়তঃ মানবজাতির সৃষ্টিগত শারীরিক অবয়বের সৌন্দর্যকে এডিটের মাধ্যমে বিকৃত করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ ও গর্হিত অপরাধ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন’ (সূরা আস-সাজদাহ :৭)। অর্থাৎ তিনি যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেটাই সর্বোত্তম ও সর্বাধিক সুন্দর। শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘চিরস্থায়ীভাবে মুখমণ্ডলের রঙকে পরিবর্তন করা জায়েয নয়। কেননা মানবজাতির সৃষ্টিগত শারীরিক অবয়বের সৌন্দর্যকে বিকৃত করে কৃত্রিমভাবে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটি শয়তানী কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত। অতএব আমাদের সকলের জন্যই এ সমস্ত শয়তানী কর্মপ্রবাহ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। কেননা শয়তান নিজে বলছে, وَ لَاٰمُرَنَّہُمۡ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلۡقَ اللّٰہِ ‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে’ (সূরা আন-নিসা : ১১৯)। যেহেতু আমরা আল্লাহর দাস। তাই শয়তানের গোলামী বন্ধ করতে হবে (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দার্ব, ১১/৭০-৭১ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আযীযুর রহমান, বিআরটিএ, মীরপুর, ঢাকা।