উত্তর : যারা বাহ্যিকভাবে ইসলামের দাবীদার, আসলে তারা ইসলাম বিরোধী। জনসম্মুখে তারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করে, আর গোপনে আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে ফুফরী করে এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করে, এরাই প্রকৃত মুনাফিক্ব। তাদের এ জন্যই মুনাফিক্ব বলা হয় যে, তারা মুখে ইসলামকে প্রকাশ করে আর অন্তরে কুফরীকে গোপনে লালন-পালন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা মুখে বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী’, কিন্তু তারা বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ এবং মুমিনদেরকে তারা প্রতারিত করে। বস্তুত তারা নিজেরাই নিজেদেরকে প্রতারিত করছে, অথচ তারা তা বুঝে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বৃদ্ধি করেছেন ও তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাচারী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮-১০)।
আলিমগণের পরিভাষায় এই প্রকারের নিফাক্বকে ‘নিফাকুল ই‘তিক্বাদী’ বা আক্বীদাগত মুনাফিক্ব বলা হয়। অর্থাৎ তারা মুখে ইসলামকে প্রকাশ করলেও বিশ্বাসে ও চিন্তা-চেতনায় কুফরী বিদ্যমান। অন্য পরিভাষায় এদের ‘নিফাকুল আকবার’ বা বড় মুনাফিক্ব বলা হয়। এরাই প্রকৃত মুনাফিক্ব এবং এরা দ্বীন থেকে বহিষ্কৃত’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৪/২৩০ পৃ.; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-১০৪৪৪০)।
দ্বিতীয়তঃ ছহীহ বুখারীর ৩৩ ও ৩৪ নং হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছগণ বলেন, এগুলো মূলত ‘নিফাকুল আমলী বা কার্যকলাপে মুনাফিক’-এর বৈশিষ্ট্য। এই প্রকারের বৈশিষ্ট্যগত বা কার্যকলাপে মুনাফিক্ব বর্তমান যুগেও বিদ্যমান আছে। আর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ছিল ইসলামকে অস্বীকার করার মুনাফিক্বী (অর্থাৎ ‘নিফাকুল ই‘তিক্বাদী বা আক্বীদাগত মুনাফিক্বী’ যারা মনেপ্রাণে ইসলাম বিদ্ধেষী ছিল, কিন্তু মুখে নিজেকে মুসলিম হিসাবে প্রচার করত) (তিরমিযী, হা/২৬৩২, সনদ ছহীহ)।
শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, কালিমায়ে তাওহীদের উপর সাক্ষ্য প্রদানকারী কোন মুসলিম যদি মুনাফিক্বের স্বভাবসমূহের মধ্যে কোন একটির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়, তবে সে এমন একটি দোষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হল যাকে আল্লাহ তা‘আলা তিরস্কার করেছেন। সে যে পরিমাণ মুনাফিক্বী কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে সেই অনুপাতে তার উপর মুনাফিক্বের বিধান প্রতিষ্ঠিত হবে। পক্ষান্তরে মিথ্যা অথবা খিয়ানতের মত দোষের সঙ্গে সম্পৃক্ত মুসলিম সম্পূর্ণরূপে ঈমানহারা হয়ে যায় না। কেননা ঈমানের মর্যাদা নিফাক্বের তুলনায় অনেক বেশি। তবে তাকে এমন নিকৃষ্ট আচরণের জন্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এজন্যই আলেমগণ এই ধ্বংসাত্মক ক্ষতির নামকরণ করেছেন ‘নিফাকুল আমলী বা কার্যকলাপে মুনাফিক্ব’ নামে। অন্য পরিভাষায় এটিকে নিফাকুল আছগার বা ছোট নিফাক্ব বলা হয়। তাঁদের উদ্দেশ্য, উক্ত স্বভাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি অবশ্যই গুনাহগার ও শাস্তিযোগ্য অপরাধী। তবুও কিন্তু সে ঐ মুনাফিক্বের মত নয়, যে মুখে ইসলামকে প্রকাশ করে, আর অন্তরে কুফরীকে গোপনে লালন-পালন করে। যে মনেপ্রাণে ইসলাম বিদ্ধেষী, কিন্তু বাহ্যিকভাবে নিজেকে মুসলিম হিসাবে প্রচার করে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৫৭০০; জামিঊল ঊলূম ওয়াল হিকাম, ১/৪২৯-৪৩২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : নূর আলম, ফরিদপুর।