শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন
উত্তর : প্রত্যেক ছালাতের ওয়াক্ত আরম্ভ হলেই আউওয়াল ওয়াক্ত শুরু হয়, যা মোট সময়ের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে (ছহীহ মুসলিম, হা/৬১৩-৬১৪; আবূ দাঊদ, হা/৩৯৩, ৩৯৫, ৪১৭; তিরমিযী, হা/১৪৯)। এ জন্য আউওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ২৭৮২; আবূ দাঊদ, হা/৪২৬; তিরমিযী, হা/১৭০)। এছাড়া যদি লোকেরা ছালাত দেরী করে পড়ে অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে না পড়ে, তাহলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী ছালাত আদায় করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৪৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৩১)। এ থেকে আউওয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। সে জন্য ছালাতের সময়সূচির তালিকা লক্ষ্য করবে।

পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের সময় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জোহরের ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে (মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে) হেলে পড়ে এবং মানুষের ছায়া তার দৈর্ঘের সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। আর আছরের ছালাতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তা থাকে। আছরের ছালাতের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত। মাগরিবের ছালাতের সময় থাকে সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তে উদ্ভাসিত লালিমা অন্তর্হিত না হওয়া পর্যন্ত। এশার ছালাতের সময় থাকে অর্ধরাত্রি অর্থাৎ মধ্যরাত পর্যন্ত। আর ফজরের ছালাতের সময় শুরু হয় ফজর বা উষার উদয় থেকে শুরু করে সূর্যোদয় পর্যন্ত (ছহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবূ দাঊদ, হা/৩৯৬; নাসাঈ, হা/৫২২)। প্রতিটি ছালাতের সময়সীমা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হল-

(১) যোহরের ওয়াক্ত : সূর্য যখন মধ্যাকাশ থেকে পশ্চিমাকাশের দিকে হেলে পড়বে তখন যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে। সূর্য হেলে পড়া তথা যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কি-না, তা বুঝে নেয়ার পদ্ধতি হল- একটি খুঁটি বা এ জাতীয় অন্য কিছু একটা উন্মুক্ত স্থানে পুঁতে রেখে খুঁটিটির প্রতি লক্ষ্য রাখা। পূর্বাকাশে যখন সূর্য উদিত হবে তখন খুঁটিটির ছায়া পশ্চিম দিকে পড়বে। সূর্য যত উপরে উঠবে ছায়ার দৈর্ঘ্য তত কমতে থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া কমতে থাকবে বুঝতে হবে যে, সূর্য তখনও ঢলে পড়েনি। এভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে কমা থেমে যাবে। তারপর খুঁটির পূর্বপাশে ছায়া পড়া শুরু হবে। যখন পূর্বপাশে খানিকটা ছায়া দেখা যাবে, তার মানে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে (আশ-শারহুল মুমতি‘, ২/৯৬ পৃ.)। আর যোহরের ওয়াক্তের শেষ সময় হল, সূর্য মধ্যাকাশ হতে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর থেকে কোন বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ তথা ১ গুণ হওয়া পর্যন্ত।

(২) আছরের ওয়াক্ত : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আছরের ছালাতের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত’। আমরা জেনেছি যে, যোহরের ওয়াক্ত শেষ হলে অর্থাৎ বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। আছরের শেষ সময় দু’রকমের। যথা : (ক) সাধারণ সময় (وقت إختيار) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী অনুযায়ী তা হল, আছরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ হওয়া পর্যন্ত। ঘড়ির কাটার হিসাবে ঋতুভেদে এ সময়টি বিভিন্ন হবে। (খ) যরূরী সময় (وقت إضطرار) : সেটা হল সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করা থেকে শুরু করে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্য অস্তমিত হবার আগে আছরের ছালাত অন্ততপক্ষে এক রাক‘আত আদায় করতে পারল, সে পুরো আছরই পেয়ে গেল’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৬০৮)।‌ উল্লেখ্য, (وقت إضطرار) বা যরূরী সময় হল, কেউ যদি অসুস্থ বা মহিলা হায়েয থেকে পবিত্র হয়, বেহুঁশ ব্যক্তির হুঁশ ফিরে এমন ব্যক্তির জন্য সূর্য ডুবার পূর্ব মুহূর্তে আছরের ছালাত আদায় করা বৈধ। এতে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। কেননা এটা যরূরী সময়।

(৩) মাগরিবের ওয়াক্ত : সূর্য ডুবার পর হতে মাগরিবের সময় শুরু হয়। পশ্চিমাকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত বিদ্যমান থাকে। সুতরাং লাল আভা যখন অদৃশ্য হয়ে যাবে তখন মাগরিবের সময় শেষ হয়ে যাবে এবং এশার সময় শুরু হবে। ঋতুভেদে মাগরিবের ওয়াক্ত ঘড়ির কাটায় বিভিন্ন হয়ে থাকে। (৪) এশার ওয়াক্ত : আকাশের লাল আভা অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত তা বিদ্যমান থাকে। উল্লেখ্য, সূর্যাস্ত থেকে ফজরের সময় শুরু হওয়া পর্যন্ত সময়টুকুর ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা মধ্যরাত্রি।

(৫) ফজরের ওয়াক্ত : ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় দ্বিতীয় ঊষা থেকে। আর দ্বিতীয় ঊষা হচ্ছে- পূর্বাকাশে বিচ্ছুরিত সাদা রেখা, যা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত থাকে। প্রথম ঊষা দ্বিতীয় ঊষার প্রায় একঘণ্টা পূর্বে বিলীন হয়ে যায়। এ দুই ঊষার মধ্যে পার্থক্য হল : (ক) প্রথম ঊষা লম্বালম্বিভাবে ফুটে উঠে, আড়াআড়িভাবে নয়। অর্থাৎ এটা পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে বিচ্ছুরিত হয়। আর দ্বিতীয় ঊষা উত্তর-দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে ফুটে উঠে। (খ) প্রথম ঊষা অন্ধকারের মধ্যে ফুটে উঠে। অর্থাৎ সামান্য সময়ের জন্য আলোর রেখা দেখা দিয়ে আবার অন্ধকারে ডুবে যায়। আর দ্বিতীয় ঊষার পর আলো বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। (গ) দ্বিতীয় ঊষা দিগন্তের সাথে যুক্ত থাকে এবং দিগন্ত ও এর মাঝে অন্ধকার থাকে না। পক্ষান্তরে প্রথম ঊষা দিগন্ত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং দিগন্ত ও এর মাঝে অন্ধকার বিদ্যমান থাকে (আশ-শারহুল মুমতি‘, ২/১০৭ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯৯৪০)।


প্রশ্নকারী : সাজিদ শাহরিয়ার, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা।





প্রশ্ন (১৯) : আরাফার ময়দানে অনেক হাজীকে নিম্নের দু‘আটি পড়তে দেখা যায়। এই দু‘আটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : যিলহজ্জ মাসে কয়দিন তাকবীর পাঠ করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : অনেকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মানুষকে গাধা, কুকুর ইত্যাদি বলে সম্বোধন করে থাকে। এ ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : মিসওয়াকের শুরু এবং শেষে পঠিতব্য কোন দু‘আ আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : প্রচলিত আছে যে, শিশুর বয়স ৫/৭ মাসে পড়লে কোন মসজিদে গিয়ে হুজুরের মাধ্যমে শিন্নি খাওয়াতে হবে এবং ঐ শিশুর সাথে আরেকটি শিশুর বন্ধু পাতাতে হবে। এমন প্রথা কি শরী‘আতসম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪০) : ফের্কাবন্দীর পরিণতি কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : মহিলারা যদি তারাবীহর ছালাতে ইমামতি করে, তাহলে সরবে ক্বিরাআত পড়তে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : বড় মেয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবক ছোট মেয়ের বিয়ে বন্ধ রাখতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : প্রচলিত আছে যে, বিবাহের পূর্বে হজ্জ করা উচিত। উক্ত কথার পক্ষে কোন দলীল আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২): নিছাব পরিমাণ হওয়ার সময় আমার কাছে সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ টাকা। বছর ফুর্তির সময় সেটা বেড়ে ২ লক্ষ টাকা হয়। তাহলে কোন্ অংকটির উপর যাকাত হিসাব করতে হবে? নিছাব পরিমাণ হওয়া থেকে, না-কি বছর পুর্তি থেকে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১০) : মৃত্যুর সময় কেউ শরী‘আতবিরোধী অছিয়ত করলে তা পূরণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : ফেরেশতাগণের অবস্থানস্থল কোথায়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ