উত্তর : ছালাত ত্যাগকারীর বিধান সম্পর্কে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বক্তব্য হল, ছালাত ত্যাগকারী নিশ্চিতরূপে কাফির ও মুশরিক। চার মাযহাবের আলিমগণ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য করলেও ছালাত ত্যাগকারীর বিধান সম্পর্কে একমত যে, তারা সর্বসম্মতিক্রমে কাফির (ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ২৭তম খণ্ড, পৃ. ৫৩-৫৪; আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৫৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ ছালাত ব্যতীত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফরী মনে করতেন না। (অর্থাৎ ছালাত ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন (তিরমিযী, হা/২৬২২; সনদ ছহীহ)। অন্যত্র নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মুমিন বান্দা ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করল, সে অবশ্যই শিরক করল’ (ইবনু মাজাহ, হা/১০৮০, ৮৯২; সনদ ছহীহ)। আরো বলেছেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হল ছালাত। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করল, সে কুফরী করল (তিরমিযী, হা/২৬২১, সনদ ছহীহ)। এছাড়া জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা (ছহীহ মুসলিম, হা/৮২)।
শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে একই প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি স্ত্রীর মত স্বামীও ছালাত ত্যাগকারী হয় সেক্ষেত্রে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। যেহেতু তারা দু’জনেই কাফির। তাই অন্যান্য কাফির ও মুশরিক দম্পতির মত তারাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারবে। কিন্তু যদি তাদের একজন ছালাত আদায় করে আর অপরজন না করে এমতাবস্থায় তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা সঠিক হবে না। বরং তার স্ত্রীকে এক ত্বালাক্ব দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা অপরিহার্য। অথবা কোন ইসলামিক বিচারকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করিয়ে নিবে। কেননা ছালাত ত্যাগকারী স্ত্রী কোন মুসলিম স্বামীর জন্য বৈধ নয়। কিন্তু যদি স্ত্রী তওবাহ করে এবং ছালাত আদায় করতে আরম্ভ করে, সেক্ষেত্রে স্বামী তাকে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিতে পারে। তবে তওবাহ ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে (ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩২৮-৩৩১ ও ২০তম খণ্ড, পৃ. ৩৪১; ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৮তম খণ্ড, পৃ. ১০৯)।
শায়খ ছালিহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রী ছালাত ত্যাগকারী হলে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যদি সে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই তওবাহ করে এবং ছালাত আদায় করতে আরম্ভ করে, তাহলে স্বামী তাকে সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে পারবে। আর যদি ইদ্দতের সময়কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তওবাহ করে সেক্ষেত্রে কিছু উলামা বলেছেন, নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে। আবার কিছু উলামা বলেছেন, নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেয়। তবে তওবাহ অপরিহার্য’ (উছায়মীন, মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১২তম খণ্ড, পৃ. ৯৩-৯৪)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ মানিক, মহেশপুর, ঝিনাইদহ।