উত্তর : শরী‘আতে মুসলিম পুরুষের জন্য আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও খ্রিষ্টান নারীকে বিবাহ করার ব্যাপারে কিছু শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি রয়েছে। যেমন,
ক). প্রকৃতপক্ষেই আহলে কিতাব হতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, পাশ্চাত্যে অনেক নারী বংশগতভাবে ইহুদী বা খ্রিষ্টান হলেও তারা বিশ্বাসের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ নাস্তিক। তাই এধরনের নারীদেরকে বিবাহ করার বৈধতা নেই। কেননা তারা প্রকৃত পক্ষে আহলে কিতাব নয়। খোদ ইসরাইলে ৫২% জনগণ নাস্তিক। অথচ এটা একমাত্র কট্টর ইহুদী রাষ্ট্র। তাহলে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা কী হবে তা সহজেই অনুমেয় (ছহীহফাতুর রায় আস-সাদেরাহ, ২৪/৯/১৯৯৫ ইং, পৃ. ৫৩)।
খ). নেক্কার হতে হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
.وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡہُنَّ اُجُوۡرَہُنَّ مُحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ وَ لَا مُتَّخِذِیۡۤ اَخۡدَان
‘এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সতী-সাধ্বী নারীরাও, যখন তোমরা তাদেরকে তাদের বিনিময় (মোহর) দিবে তাদেরকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করার জন্য, কাম বাসনা চরিতার্থ করা কিংবা গোপন প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৫)। অথচ বর্তমান যুগের আহলি কিতাব নারীদের চরিত্র সর্বজনবিদিত। সুতরাং এমন আহলি কিতাব নারীকে বিবাহ করা জায়েয নেই। আহমদ ইবনু ইয়াহইয়া বলেন,
إن هذا الزواج من الكتابيات محدد بمن كان لهم ذمة و عهد ، ومعلوم أن أهل الكتاب اليوم لا ذمة لهم ولا عهد ولا يدفعون جزية ولا يلتزمون بشيء من الأوامر الشرعية التي يوجبها عليهم عهد الذمة، ليكون لهم ما للمسلمين وعليهم ما على المسلمين
‘আহলি কিতাব নারীদের সাথে বিবাহের বিষয়টি সীমাবদ্ধ সেসব নারীর ক্ষেত্রে, যারা মুসলিম শাসকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থান করে। একথা সর্বজনবিদিত যে, বর্তমান মুসলিম শাসকদের সাথে তাদের কোন চুক্তি ও অঙ্গিকার নেই। না তারা জিযয়া প্রদান করে, আর না শারঈ এমন কোন বিধান নিজেদের উপর আবশ্যক করে, যা চুক্তির কারণে তাদের উপর আবশ্যক এবং তা করলে তারা মুসলিমদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পেত বা দায়-দায়িত্ব বহনে তাদের অনুগামী হত’ (আল-মিইয়ারুল মাগরিবি ওয়াল জামেঊল মাগরিব আন ফাতাওয়া আহলি ইফরীক্বিয়্যাহ ওয়াল আন্দালুসি ওয়াল মাগরিব, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪৯-২৫০)।
গ). আহলে কিতাব নারীকে বিবাহ করার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সে মুসলিম রাষ্ট্রের অনুগত নাগরিক (ذمي) হতে হবে। তাই অমুসলিম বা সেক্যুলার দেশের কোন আহলে কিতাব নারীকে বিবাহ করা মাকরূহে তাহরীমী তথা নাজায়েয। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
.لَا يَحِلُّ نِكَاحُ نِسَاءِ أَهْلِ الْكِتَابِ إذَا كَانُوْا حَرْبًا
‘যদি আহলে কিতাব নারীগণ অমুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থান করে তবে তাদের বিবাহ করা হালাল নয়’ (মুছান্নাফ ইবন আবী শায়বা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৫৯, হা/১৬৪৩১)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে,
.كُرِهَ أَنْ يُتَزَوَّجَ نِسَاءُ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا فِي عَهْدٍ
‘তিনি আহলে কিতাব নারীদের বিবাহ করাকে অপসন্দ করতেন। তবে (যদি মুসলিম শাসকের সাথে) চুক্তিবদ্ধ হয়ে (মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থান করে), তাহলে ভিন্ন কথা’ (মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২৯৪, হাদীছ নং- ৯৬৫৮)।
প্রশ্নকারী : আনোয়ার হোসেন জসিম, নেত্রকোনা