সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন
উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। ২০ রাক‘আত তারাবীহকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য মাত্র কিছুদিন পূর্ব থেকে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী আলেম উক্ত অপব্যাখ্যা শুরু করেছেন। ইতিপূর্বে উক্ত মিথ্যা দাবীর অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ একই ছালাত। এ জন্য মুহাদ্দিছগণ একই হাদীছ ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন, ‘তারাবীহ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০১৩, ১/২৬৯ পৃ., হা/১১৪৭, ১/১৫৪, হা/৩৫৬৯, ১/৫০৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়েননি। প্রশ্নকারী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে রামাযানের রাত্রির ছালাত কেমন ছিল সে বিষয়েই জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর তারই উত্তরে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ১১ রাক‘আতের কথা বলেন।

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় দিন ২৭-এর রাত্রে সাহারীর সময় পর্যন্ত তারাবীহর ছালাত দীর্ঘ করেছিলেন, যাতে ছাহাবায়ে কেরাম সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে, فَقَامَ بِنَا حَتَّى خَشِيْنَا أَنْ تَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ ‘আমাদের নিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে ছালাত পড়লেন, যাতে আমরা সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম’ (আবু দাঊদ, হা/১৩৭৫, ১/১৯৫; তিরমিযী, হা/৮০৬, ১/১৬৬; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১২৯৮, পৃঃ ১১৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৪৯, হা/১২২৪)। তাহলে এই রাতে তাহাজ্জুদ কখন পড়লেন?

অনুরূপ ছাহাবীদের যুগেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই ছালাত বলে গণ্য হত। কারণ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে হাদীছে ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ হাদীছের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘ক্বিরাআত লম্বা হওয়ার কারণে (পরিশ্রান্ত হয়ে) আমরা লাঠির উপর ভর দিতাম এবং ফজরের ছালাতের সময় হওয়ার উপক্রম হলে ছালাত শেষ করে চলে আসতাম’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, ৪/১৮৬ পৃ.; মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/১১৫ পৃ.; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১৩০২, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৫২, হা/১২২৮)।

স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়তেন না। অন্য আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,

كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ مَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشَرَةَ رَكْعَةً

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার ছালাত শেষ করার পর হতে ফজর পর্যন্ত মাত্র ১১ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৭৩৬; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৫৮, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীছ থেকে আরো স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার ছালাতের পর থেকে ফজর পর্যন্ত ১১ রাক‘আতের বেশী ছালাত কখনো পড়তেন না।

অনুরূপ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তারাবীহর জামা‘আত পুনরায় চালু করা সংক্রান্ত ছহীহ বুখারীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তাতে একই ছালাতের কথা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, وَالَّتِىْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنْ الَّتِىْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهُ ‘তবে তারা যা পড়ছে তার চেয়ে উত্তম সেটাই, যার জন্য তারা ঘুমাত অর্থাৎ শেষ রাত্রের ছালাত। তবে লোকেরা প্রথমাংশেই পড়ত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০১০; মিশকাত, হা/১৩০১, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২২৭, ৩/১৫১-৫২)।

হানাফী মাযহাবের পূর্ববর্তী আলেমগণ কেউই উক্ত অপব্যাখ্যা করেননি। বরং তারা সকলেই তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই ছালাত গণ্য করেছেন। এমনকি ২০ রাক‘আতের বর্ণনাটিকে তাঁরা প্রত্যেকেই মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটির বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হেদায়ার ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম, আল্লামা যায়লাঈ, বদরুদ্দীন আয়নী, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী প্রমুখ (বিস্তারিত দেখুন : ‘তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বই)। তাই আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলেন, تِلْكَ صَلَاةٌ وَاحِدَةٌ إِذَا تَقَدَّمَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّرَاوِيْحِ إِذَا تَأَخَّرَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّهَجُّدِ ‘এটা একই ছালাত; যখন রাতের প্রথমাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তারাবীহ। আর যখন শেষাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তাহাজ্জুদ’ (ফায়যুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪২০)।


প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, রাজশাহী।




প্রশ্ন (৩৩) : ‘যখন কোন সদাচরণকারী সন্তান যদি তার পিতা-মাতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার ‘আমলনামায় একটি ‘কবুল হজ্জ’ তথা কবুলযোগ্য হজ্জের ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন’। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, যদি সে দৈনিক একশ’বার তাকায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ মহান এবং অতি পবিত্র’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৪৭৫; মিশকাত হা/৪৯৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৭২৭)। উক্ত বর্ণনা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : অফিস চলাকালীন জামা‘আত ছুটে গেলে, পরবর্তীতে ছোট ছোট জামা‘আত হয়। এমন সময় যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে প্যান্ট ঝুলিয়ে পরে কিন্তু ছালাতে গুটিয়ে নেয়, এমন ব্যক্তি ইমামতিতে দাঁড়িয়ে গেলে সে জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা কি ঠিক হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : যিলহজ্জ মাসের প্রতিটি দিনের ছিয়াম এক বছরের ছিয়ামের সমতুল্য। এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লায়লাতুল ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। উক্ত মর্মে হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৪) : বিনা ওযূতে আযান দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : বিধর্মীদের দোকান থেকে বিশেষ করে হিন্দুদের দোকান থেকে মিষ্টি বা মিষ্টান্ন জাতীয় পণ্য ক্রয় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : এক ব্যক্তি তার স্ত্রী ও দুই কন্যা রেখে মারা গেছেন। কোন পুত্র সন্তান নেই। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ওয়ারিছ হিসাবে কারা কতটুকু অংশ পাবে? মৃত ব্যক্তির ভাই বা বোন কি কোন অংশ পাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : মৃত বা জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী ওমরাহ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : সূদী ব্যাংক প্রদত্ত ‘শিক্ষা বৃত্তি’ নেয়া কি জায়েয হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : মসজিদের নীচতলায় পুরুষ এবং দোতলায় মহিলারা ওয়াক্তিয়া ও জুমু‘আর ছালাত আদায় করে থাকে। এভাবে ছালাত আদায় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪২) : সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য ভ্রু প্লাক (pluck) করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : নবী (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ্‌র জন্য যবহ করে তার ওপর লা‘নত হোক’ এ কথার উদ্দেশ্য কী? কোন মেহমানের জন্য যবহ করা কি গায়রুল্লাহ‌র জন্য যব্হ-এর মধ্যে পড়বে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : যে সব হাদীছে ভারত বা হিন্দে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ