শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন
উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। ২০ রাক‘আত তারাবীহকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য মাত্র কিছুদিন পূর্ব থেকে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী আলেম উক্ত অপব্যাখ্যা শুরু করেছেন। ইতিপূর্বে উক্ত মিথ্যা দাবীর অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ একই ছালাত। এ জন্য মুহাদ্দিছগণ একই হাদীছ ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন, ‘তারাবীহ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০১৩, ১/২৬৯ পৃ., হা/১১৪৭, ১/১৫৪, হা/৩৫৬৯, ১/৫০৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়েননি। প্রশ্নকারী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে রামাযানের রাত্রির ছালাত কেমন ছিল সে বিষয়েই জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর তারই উত্তরে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ১১ রাক‘আতের কথা বলেন।

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃতীয় দিন ২৭-এর রাত্রে সাহারীর সময় পর্যন্ত তারাবীহর ছালাত দীর্ঘ করেছিলেন, যাতে ছাহাবায়ে কেরাম সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে, فَقَامَ بِنَا حَتَّى خَشِيْنَا أَنْ تَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ ‘আমাদের নিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে ছালাত পড়লেন, যাতে আমরা সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম’ (আবু দাঊদ, হা/১৩৭৫, ১/১৯৫; তিরমিযী, হা/৮০৬, ১/১৬৬; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১২৯৮, পৃঃ ১১৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৪৯, হা/১২২৪)। তাহলে এই রাতে তাহাজ্জুদ কখন পড়লেন?

অনুরূপ ছাহাবীদের যুগেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই ছালাত বলে গণ্য হত। কারণ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে হাদীছে ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ হাদীছের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘ক্বিরাআত লম্বা হওয়ার কারণে (পরিশ্রান্ত হয়ে) আমরা লাঠির উপর ভর দিতাম এবং ফজরের ছালাতের সময় হওয়ার উপক্রম হলে ছালাত শেষ করে চলে আসতাম’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, ৪/১৮৬ পৃ.; মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/১১৫ পৃ.; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১৩০২, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৫২, হা/১২২৮)।

স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়তেন না। অন্য আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,

كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّىْ مَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشَرَةَ رَكْعَةً

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার ছালাত শেষ করার পর হতে ফজর পর্যন্ত মাত্র ১১ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৭৩৬; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৫৮, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীছ থেকে আরো স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার ছালাতের পর থেকে ফজর পর্যন্ত ১১ রাক‘আতের বেশী ছালাত কখনো পড়তেন না।

অনুরূপ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তারাবীহর জামা‘আত পুনরায় চালু করা সংক্রান্ত ছহীহ বুখারীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তাতে একই ছালাতের কথা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, وَالَّتِىْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنْ الَّتِىْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهُ ‘তবে তারা যা পড়ছে তার চেয়ে উত্তম সেটাই, যার জন্য তারা ঘুমাত অর্থাৎ শেষ রাত্রের ছালাত। তবে লোকেরা প্রথমাংশেই পড়ত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০১০; মিশকাত, হা/১৩০১, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২২৭, ৩/১৫১-৫২)।

হানাফী মাযহাবের পূর্ববর্তী আলেমগণ কেউই উক্ত অপব্যাখ্যা করেননি। বরং তারা সকলেই তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই ছালাত গণ্য করেছেন। এমনকি ২০ রাক‘আতের বর্ণনাটিকে তাঁরা প্রত্যেকেই মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটির বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হেদায়ার ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম, আল্লামা যায়লাঈ, বদরুদ্দীন আয়নী, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী প্রমুখ (বিস্তারিত দেখুন : ‘তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বই)। তাই আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলেন, تِلْكَ صَلَاةٌ وَاحِدَةٌ إِذَا تَقَدَّمَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّرَاوِيْحِ إِذَا تَأَخَّرَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّهَجُّدِ ‘এটা একই ছালাত; যখন রাতের প্রথমাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তারাবীহ। আর যখন শেষাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তাহাজ্জুদ’ (ফায়যুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪২০)।


প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, রাজশাহী।




প্রশ্ন (১৭) : জনৈক আলেম ফৎওয়া দিয়েছেন যে, হানাফী এলাকাতে আছরের ছালাত শেষ ওয়াক্তে হওয়ায় এবং সেই এলাকায় আহলেহাদীছ মসজিদ না থাকলে বাড়িতে ছালাত আদায় করা যাবে। প্রশ্ন হল, এটা কি শরী‘আতসম্মত? আওয়াল ওয়াক্তে একাকী ফরয ছালাত পড়া উত্তম হবে, না-কি শেষ ওয়াক্ত হলেও জামা‘আতে ছালাত আদায় করা উত্তম হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : ছালাতে হাত বাঁধার বিশুদ্ধ নিয়ম কোনটি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে খ্রিস্টানদের ক্রুশ চিহ্নযুক্ত ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক, সেগুলো পড়ালেখা করা যাবে কি? এক্ষেত্রে  পিতা-মাতার আদেশ অমান্য করলে অবাধ্যতা হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : জনৈক আলেম তার বক্তব্যে বলেন, কোন সদাচরণকারী সন্তান যদি তার পিতা-মাতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার ‘আমল-নামায় একটি ‘কবুল হজ্জ’ তথা কবুলযোগ্য হজ্জের ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। এমনকি দৈনিক একশ’বার তাকালেও। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক! - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : ছালাতে সিজদায় বাংলাতে দু‘আ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : হিজড়া ব্যক্তি মসজিদে টাকা দান করলে সেই টাকা নেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দাবি করে যে, হিন্দু ধর্ম সনাতন ধর্ম’। তাদের উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : এক ব্যক্তি জীবনে অনেকবার একটি পাপ করেছে এবং সে পাপ আর করবে না বলে বহুবার কসমও করেছে। কিন্তু বারবার সে কসম ভঙ্গ করে ফেলেছে। এখন অসুস্থ হয়ে পাপ ছেড়ে দিয়েছে। পরে সে জানতে পেরেছে যে, শপথের কাফ্ফারা দিতে হয়। এখন সে কীভাবে কাফ্ফারা দিবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৬) : গ্রামে বা মহল্লায় জুমু‘আর ছালাত হবে না সন্দেহ করে অনেক মুছল্লী জুমু‘আর ছালাতের পর চার রাক‘আত যোহর ছালাত আদায় করে থাকে। এটা কি শরী‘আতসম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোন কাজ করতে পারে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৮) : ইলম অর্জন, তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজে সফরে যাওয়ার জন্য পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া যাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : হস্তমৈথুনকে কেন ছিয়াম ভঙ্গের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়? অথচ বেপর্দা ও অন্যান্য গুনাহকে ছিয়াম ভঙ্গের কারণ হিসাবে গণ্য করা হয় না। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ