উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে হিজাব বা পর্দার বিধান দিয়েছেন; পুরুষদেরকে নয়। তাই পুরুষেরা স্বাভাবিকভাবে মাঠে-ঘাটে কাজ করবে, বাইরে চলাফেরা করবে, উন্মুক্ত মাঠে আলেমগণ বক্তব্য দিবে, অনলাইন-অফলাইনে দ্বীন প্রচার করবে, মসজিদের ইমামতি করবে, যুদ্ধ-জিহাদ করবে, বিচার আচার করবে, সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে-এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বোধে নারীরা তাদেরকে দেখতে পারে। তবে যদি কোন পুরুষের চেহারা দেখে তার মধ্যে কুপ্রবৃত্তি জাগ্রত হয় বা ফিতনা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই দৃষ্টি নত করে নেয়া আবশ্যক। এমতবস্থায় তার চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনাও জায়েয নয়। এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে কোন মতবিরোধ নেই। কিন্তু এমনটি না হলে পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েয আছে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। একদল আলেমের মতে, নারীদের জন্য আলেমদের চেহারার দিকে তাকিয়ে বক্তৃতা শোনায় কোন দোষ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট নারী ছাহাবীগণ বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন, ইসলাম শিখতেন এবং প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। এক্ষেত্রে তারা তার চেহারার দিকে তাকাতেন। আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, মা জননী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ঈদের দিন রাসূল (ﷺ)-এর পেছনে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে হাবশী বা নিগ্রো পুরুষদের সমরাস্ত্রের খেলা দেখেছেন। যেমন: উরওয়া (রাহিমাহুল্লাহ) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণনা করেন যে,
كَانَ الْحَبَشُ يَلْعَبُوْنَ بِحِرَابِهِمْ فَسَتَرَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَأَنَا أَنْظُرُ فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتّٰى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوْا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيْثَةِ السِّنِّ تَسْمَعُ اللَّهْوَ
‘একদিন হাবশিরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন্ বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পসন্দ করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৯০)।
আর কিছু আলেমের মতে, সাধারণ অবস্থাতেও নারীদের জন্য পর পুরুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েয নেই। কেননা আল্লাহ যেভাবে পুরুষদেরকে আদেশ করেছেন নারীদের থেকে দৃষ্টি নত রাখতে ঠিক তেমনিভাবে নারীদেরকেও আদেশ করেছেন পুরুষদের দিকে দৃষ্টি নত রাখতে (সূরা আন-নূর: ৩১)। যাহোক, সতর্কতার স্বার্থে আলেমদের বক্তৃতা শোনার ক্ষেত্রে যদি তাদের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শুধু ভয়েস শ্রবণ করে উপকৃত হওয়া সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই যথেষ্ট। বিশেষ করে যুবতী নারীদের জন্য যুবক এবং সুদর্শন বক্তাদের দিকে না তাকানোর মধ্যেই মনের পবিত্রতা রয়েছে।
প্রশ্নকারী : উম্মে মাইমুনা, রাজশাহী।