উত্তর : ইসলামী শরী‘আর সুবিদিত ও স্থিরীকৃত বিষয় হলো: তাওহীদের বাণী তথা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-এর অর্থ জানে ও সে মোতাবেক আমল করে সেই এর প্রকৃত ধারক। এই বাণী আখিরাতে তাকে উপকৃত করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতবাসী হবে, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। শায়খ সুলাইমান ইবনু আব্দুল্লাহ্ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উবাদা ইবনু ছামেত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই; তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল; ঈসা আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল ও তাঁর বাণী; যা তিনি মারিয়ামের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ এবং জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য। আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তার আমল যেমনই হোক না কেন। হাদীছের উক্তি: ‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই বাণীর অর্থ জেনে ও এর দাবী মোতাবেক প্রকাশ্যে ও গোপনে কর্ম করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই বাণী উচ্চারণ করবে; যেমনটি নির্দেশ করছে আল্লাহ তাআলার বাণী: فَاعۡلَمۡ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰہُ ‘অতএব জেনে নিন, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, اِلَّا مَنۡ شَہِدَ بِالۡحَقِّ وَ ہُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ ‘তবে যারা জেনে সত্য সাক্ষ্য দেয় তাদের কথা আলাদা’ (সূরা আয-যুখরুফ: ৮৬)। তবে এর অর্থ না জেনে ও দাবী মোতাবেক আমল না করে এই বাণী মুখে উচ্চারণ করলে, আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে এটি কোন উপকারে দিবে না’ (তাইসীরুল আযীযিল হামিদ, পৃ. ৫১)।
তবে প্রত্যেক মুসলিমের উপর এই বাণীর অর্থ ও দাবী সামগ্রকিভাবে জানা ফরয। এটাই যথেষ্ট। নবী (ﷺ) থেকে এমনটি জানা যায় না যে, তিনি প্রত্যেক নও মুসলিমের জন্য এই শর্তগুলো কিতাবপুস্তকে যেভাবে বিস্তারিতভাবে সেইভাবে ব্যাখ্যা করতেন। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূল (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন সেটার প্রতি সাধারণ ও এজমালিভাবে (সামগ্রিকভাবে) ঈমান আনা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। এতেও কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূল (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা ফরযে কিফায়া। কেননা তা আল্লাহ তার রাসূল (ﷺ)-কে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন সেটা পৌঁছিয়ে দেয়ার মধ্যে পড়ে। কুরআন তাদাব্বুর (অনুধাবন), অনুধ্যান, বুঝা, কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান, যিকির মুখস্থকরণ, কল্যাণের দিকে আহ্বান, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, হেকমত-ওয়ায-উত্তম পন্থায় তর্কের মাধ্যমে প্রভুর দিকে ডাকা ইত্যাদি যা আল্লাহ উম্মাহ্র উপরে ফরয করেছেন সেটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এটি তাদের উপর ফরযে কিফায়া’ (দারউ তাআরুযিল আক্বলী ওয়াল নাকল, ১/৫১ পৃ.)।
শাইখ হাফেয আল-হাকামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ কেবল মৌখিকভাবে বলার দ্বারা ব্যক্তি উপকৃত হবে না; যতক্ষণ না এই সাতটি শর্ত পূর্ণ না করে। শর্তগুলো পূর্ণ করার অর্থ হলো: বান্দার মধ্যে এগুলো পাওয়া যাওয়া এবং বান্দা এগুলোর উপর অটল থাকা; এগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কিছু ব্যতিরেকে। এর উদ্দেশ্য এটা নয় যে, গুণে গুণে এ শর্তগুলোর শব্দাবলী মুখস্ত করা। কত সাধারণ মানুষের মাঝে এ শর্তগুলো পাওয়া যায় এবং এগুলো তিনি পূর্ণ করেন; কিন্তু তাকে যদি বলা হয়: শর্তগুলো বলেন তো; বলতে পারবেন না। আবার এ শর্তগুলোর শব্দাবলী মুখস্থকত হাফেয রয়েছে; কিন্তু সে এ শর্তগুলোর মধ্যে তীরের মত ছুটাছুটি করে। আপনি দেখবেন যে, সে এমন অনেক কিছুতে লিপ্ত হয় যা এই শর্তবলীর সাথে সাংঘর্ষিক। তাওফীক আল্লাহর হাতে এবং আল্লাহই সহায়’ (মা‘আরিজুল কাবুল, ২/৪১৮ পৃ.)।
শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সকল মুসলিমের উপর ফরয হলো: এই কালিমা বাস্তবায়ন করা; এর শর্তগুলো রক্ষা করার মাধ্যমে। যখনই কোন মুসলিমের মাঝে এই শর্তগুলোর মর্ম পাওয়া যাবে এবং এর উপর অবিচলতা পাওয়া যাবে তখনই সে মুসলিম; যার রক্ত ও সম্পদ হারাম; এমনকি সে যদি এই শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে না জেনে থাকে তবুও। কেননা উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। যদিও কোন মুমিন শর্তগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না জানে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়াস লিশ শাইখ ইবনি বায, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৫৮)।
প্রশ্নকারী : রুকনুযযামান, দামকুড়াহাট, রাজশাহী।