উত্তর : কোন ব্যক্তি নিয়মিত ছালাত আদায় করে কিন্তু অলসতা, প্রবৃত্তির তাড়নায় মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত ছুটে যায় বা ক্বাযা করে আদায় করে, এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে আলেমদের মাঝে একটু মতানৈক্য আছে। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি ও শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন শারঈ কারণ ছাড়া সজ্ঞানে এক ওয়াক্তের ছালাত ছেড়ে দেয় এবং তার সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে সে কাফির’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৫/৪১ ও ৬/৪০, ৫০; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২৯/১৭৯ পৃ.)।
তবে কিছু কিছু বিদ্ধানের মতানুযায়ী কুফরীর বিধান ঐ ব্যক্তির উপর আপতিত হয়, যে সম্পূর্ণরূপে ছালাত ত্যাগ করে। কিন্তু যে মাঝে মধ্যে আদায় করে আবার মাঝে মধ্যে ছেড়ে দেয়, সে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত কাফির নয়, বরং সে মহাপাপী। চুরি করা, মদ পান করা এমনকি ব্যভিচার করার চাইতেও বড় গুনাহ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১৪৪২৬)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অনেক শহরে অসংখ্য এমন মানুষ আছে যারা পাঁচ ওয়াক্তের ছালাত নিয়মিতভাবে কঠোরতার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করে না। আবার তারা ছালাতকে সম্পূর্ণরূপে ছেড়েও দেয় না। বরং তারা কখনো কখনো পড়ে আবার কখনো কখনো ছেড়ে দেয়। এরাই তারা যাদের মধ্যে ঈমান ও নিফাক্ব দু’টিই বিদ্যমান। এদের উপর মীরাছের ও অন্যান্য বিষয়ের প্রকাশ্য ইসলামিক বিধি-বিধান জারি হবে’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৭/৬১৭ ও ২২/৪৯; শারহুল উমদাহ, ২/৯৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৮৫৬১৯)।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এটিই পরিস্ফুটিত হয় যে, সর্বদা সম্পূর্ণরূপে ছালাত ত্যাগ না করলে সে কাফির হয় না। যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে এক ওয়াক্তও আদায় করে না সে কাফির। কিন্তু যে এক-দুই ওয়াক্ত আদায় করে সে কাফির নয়। তার উপর ছালাত ত্যাগের বিধান সম্পূর্ণরূপে প্রযোজ্য নয়। কেননা নবী (ﷺ) বলেছেন, বান্দা (অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি) এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৮২, ১৪৮-১৪৯)। এখানে কিন্তু একথা বলা হয়নি যে, ‘এক ওয়াক্তের ছালাত ত্যাগ করলে’। আর যেখানে এক ওয়াক্তের কথা বলা হয়েছে, সেই হাদীছের সনদের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনেশুনে এক ওয়াক্তের ফরয ছালাত ত্যাগ করবে, তার থেকে (আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর) জিম্মাদার শেষ হয়ে যায়’।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এর সনদের বিশুদ্ধতায় সন্দেহ আছে’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ২/২৭ পৃ.)। শু‘আইব আল-আরনাউত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এর সনদ দুর্বল’ (তাখরীজুল মুসনাদ, হা/২২০৭৫)। আল্লামা আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হাদীছের হুকুম হাসান লি গাইরিহি’ (ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৭০; ইরওয়াউল গালীল, ৭/৮৯ পৃ.)। অন্যত্র আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সনদের রাবীগণ বিশ্বস্ত কিন্তু সনদের মধ্যে ইনক্বিত্বা‘ অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতা আছে’ (হিদায়াতুর রুওয়াত, হা/৫৭)। দ্বীনের মূলনীতি হল بقاء الإسلام ‘ইসলামের মধ্যে অবশিষ্ট থাকা’। সুতরাং আমরা কোন ব্যক্তিকে সুনিশ্চিত ও সন্দেহাতীত প্রমাণ ছাড়া ইসলাম থেকে বহিষ্কার করতে পারি না (আশ-শারহুল মুমতি‘, ২/২৬-২৮; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১২/৩১, ৩৮, ৫৫ পৃ.)।
ছালাত ত্যাগকারীকে ক্ববরে শাস্তি দেয়া হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৪৭, ১১৪৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৭৪)। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করুন। যে ব্যক্তি মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্তের ছালাত ছেড়ে দেয়, তার উচিত দ্রুত এর জন্য কঠোরভাবে তাওবাহ্ করা (সূরা আল-ফুরক্বান : ৬৮-৭০)। সুতরাং তার দায়িত্ব বেশি-বেশি তাওবাহ, ইস্তিগফার, আমালে ছালিহাহ, ছালাত আদায় ও ছাদাক্বাহ ইত্যাদি করতে থাকা।
প্রশ্নকারী : শহীদুল ইসলাম, ভারত।