উত্তর : এ ধরণের খেলা দেখাতে বিবিধ সমস্যা রয়েছে। যেমন (১) অধিকাংশ ম্যাচ জুয়া এবং হারাম চুক্তির সাথে সম্পৃক্ত। (২) এর মধ্যে পর্দাহীনতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার রয়েছে। (৩) এর মধ্যে মহামূল্যবান সময়ের অনর্থক অপচয় রয়েছে। নিজের মস্তিষ্ককে এমন অনর্থক কাজে ব্যস্ত না রেখে, এমন কাজে ব্যস্ত রাখা উচিত যা উভয় জগতের জন্যই অধিক কল্যাণকর হবে। তাই কোন মুসলিম নারী-পুরুষের জন্যই নিজেকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখা জায়েয নয়। বরং নিজেকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখা অপরিহার্য যা উভয় জগতের জন্যই কল্যাণকর হবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৬৮৪৪)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘এমন ম্যাচ যেগুলো অর্থ অথবা পুরস্কারের জন্য খেলা হয়ে থাকে সেগুলো হারাম। কেননা এগুলো হারাম জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। শরী‘আত অনুমোদিত খেলা ছাড়া অন্য যে কোন খেলার জন্য বিনিময় বা পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েয নয়। আর ইসলাম অনুমোদিত খেলাগুলো হল: ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা, উটের দৌড় প্রতিযোগিতা এবং তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা। সুতরাং জেনেশুনে এই ধরনের পুরস্কার গ্রহণের খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা এবং দর্শন করা উভয়ই হারাম। কারণ এই ধরনের খেলায় উপস্থিত হওয়াটা তাকে সমর্থন করার শামিল’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৫/২৩৮ পৃ., ফৎওয়া নং-১৮৯৫১)। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এগুলো সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। সংকীর্ণ পোশাক পরিধান করে অথবা উরু উন্মুক্ত করে খেলাধুলা করা জায়েয নয়। অতএব তা দর্শন করাও নাজায়েয’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ৪/৪৩১ পৃ.)।
দ্বীন ইসলাম শরীর চর্চা ও সাময়িক বৈধ বিনোদনের জন্য শর্তসাপেক্ষে কিছু খেলাকে জায়েয করেছে৷ যেমন ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, وسائر اللعب، إذا لم يتضمن ضررا، ولا شغلا عن فرض، فالأصل إباحته ‘এমন প্রত্যেক খেলা, যা শারীরিকভাবে কোন ক্ষতিসাধন করে না এবং ধর্মীয় কাজেও কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, তা বৈধ’ (আল-মুগনী, ১৪/১৫৭ পৃ,)। এই অনুমতি শুধু সাময়িক বৈধ বিনোদনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি কেউ খেলা-ধুলাকেই জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানিয়ে নেয়, তখন তা হালাল বা বৈধ থেকে হারাম বা মাকরুহের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। নবী (ﷺ) বলেন,
وَكُلُّ شَيْءٍ يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ بَاطِلٌ، إِلَّا رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ، وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ، وَمُلَاعَبَتَهُ امْرَأَتَهُ...
‘এমন প্রত্যেক জিনিষ যা মানুষকে উদাসীন ও ধর্ম বিমুখ করে তোলে, তা পরিত্যাজ্য৷ শুধু তীরন্দাজী করা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেম বিনিময় করা ব্যতীত’ (আদ-দারিমী, হা/২৪৪৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৩০০, ১৭৩৩৭, সনদ হাসান)। ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এমন খেলা-ধুলা যা নিষিদ্ধের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নিষিদ্ধকরণের কোন কারণও সংঘঠিত হয়নি, তা মুবাহ্ বা অনুমোদনযোগ্য। কিন্তুু এটি নিন্দিত কাজ, আলেগণ এর উপর সন্তুষ্ট নন, বরং তাঁরা এটা অপসন্দ করেন যে, কোন ব্যক্তি সামাজিক, মানবিক ও সংস্কারমূলক কাজে নিয়োজিত না হয়ে তার মূল্যবান সময় এমন একটি কাজে ব্যয় করে যার মধ্যে ইহকাল ও পরকালের জন্য কোন কল্যাণ নেই’ (আল-মুওয়াফাক্বাত, ১/২০৪-২০৫ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : ইবনু ইদরীস, রাজশাহী।