উত্তর : স্ত্রীর বাসস্থান, ভরণ পোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, চিকিৎসা ও অন্যান্য সকল দায়-দায়িত্ব এবং খরচ বহন করা স্বামীর উপর অপরিহার্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বাসস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে বসবাস কর, তাদেরকেও (অর্থাৎ স্ত্রীদেরকে) সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে, তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সংকটে ফেলার জন্য’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৬)। অনুরূপভাবে খাদ্য, পানীয় ও পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَہٗ رِزۡقُہُنَّ وَ کِسۡوَتُہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণ ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৩)। এ আয়াত দ্বারা এ কথাও বোঝা যাচ্ছে যে, শিশুকে স্তন্যদান করা মাতার দায়িত্ব, আর মাতার ভরণ-পোষণ ও জীবন-ধারণের অন্যান্য যাবতীয় খরচ বহন করার দায়িত্ব পিতার। এ দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর মাতা স্বামীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে বা ত্বালাক্ব পরবর্তী ইদ্দতের মধ্যে থাকে। ত্বালাক্ব ও ইদ্দত অতিক্রান্ত হয়ে গেলে স্ত্রী হিসাবে ভরণ পোষণের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় সত্য, কিন্তু শিশুকে স্তন্যদানের পরিবর্তে মাতাকে পারিশ্রমিক দিতে হবে (তাফসীরে কুরতুবী, সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপসন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার করবে। অতঃপর তিনি বলেন, وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ‘আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের অধিকার রয়েছে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; আবূ দাঊদ, হা/১৯০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭৪; ছহীহুল জামি‘, হা/২০৬৮)। অন্য হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেন, তুমি যখন আহার করবে তখন স্ত্রীকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। আর মুখমণ্ডলে প্রহার করবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে (আবূ দাঊদ, হা/২১৪২; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৫০)। সুতরাং সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও কোন স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি এসব দায়িত্ব পালন না করে তবে স্বামী অবশ্যই গুনাহগার হবে (বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৪৪; আল-হাবিউল কাবীর, ১১/৪২৮ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৮৪৬৮৮, ১০৬৮০)।
প্রশ্নকারী : মামুন কাবীর, মৌলভীবাজার।