উত্তর : কবর থাকার কারণে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে না, বরং তা হারাম। সমগ্র উম্মতের সর্বসম্মতিক্রমে কবরের উপর মসজিদ ও ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা, পাকা করা, তার উপর লেখা, ছালাত আদায় করা, প্রদীপ জ্বালানো হারাম। মনে রাখতে হবে, কবরের উপরে নির্মিত মসজিদে ছালাত জায়েয হবে না, বরং এ জাতীয় নির্মাণ হারাম (ইক্বতিযাউছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম, ২/২৬৭; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৪/৩১৮, ২৭/৪৪৮ ও ৩১/১১)। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী (ﷺ)-এর যে রোগে মৃত্যু হয়েছিল, সে রোগাবস্থায় তিনি বলেছিলেন,
لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسْجِدًا قَالَتْ وَلَوْلَا ذَلِكَ لأَبْرَزُوْا قَبْرَهُ غَيْرَ أَنِّي أَخْشَى أَنْ يُتَّخَذَ مَسْجِدًا
‘ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, সে আশঙ্কা না থাকলে তাঁর (নবী (ﷺ)-এর) কবরকে উন্মুক্ত রাখা হত, কিন্তু আমি আশঙ্কা করি যে, (উন্মুক্ত রাখা হলে) একে মাসজিদে পরিণত করা হবে (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৩০, ১৩৯০)। অন্যত্র তিনি মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে বলেন,
أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوْا يَتَّخِذُوْنَ قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيْهِمْ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُوْرَ مَسَاجِدَ إِنِّىْ أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ
‘সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী এবং নেককার মুমিনগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করত! খবরদার! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ কর না। কেননা আমি তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৩২, ১০৭৫; ছহীহুল জামি‘, হা/২৪৪৫, ২৭৪৫)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
نَهَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ.
‘রাসূল (ﷺ) ক্ববর পাকা করতে, ক্ববরের উপর বসতে এবং ক্ববরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৭০)।
উল্লেখ্য, শারঈ কারণ ব্যতীত কবর খনন করে লাশ উঠানো বা গোরস্থান স্থানান্তর করা জায়েয নয়। তাতে লাশের অসম্মান করা হয়। রাসূল (ﷺ) বলেন, লাশের অস্থি ভাঙ্গা জীবিতের অস্থি ভাঙ্গার সমান (আবূ দাঊদ, হা/৩২০৭; মিশকাত, হা/১৭১৪, সনদ ছহীহ)। লাশ বহন সময়কালীন করণীয় সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যখন তোমরা লাশ উঠাবে তখন ধাক্কা-ধাক্কি এবং জোরে নাড়া-চাড়া কর না, বরং ধীরে ধীরে নিয়ে চলবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৭; মিশকাত, হা/৩২৩৭)। অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’ (ফাৎহুল বারী, ৯/১১৩ পৃ.)। এমতাবস্থায় করণীয় হল- পুরাতন ঐ কবরকে খনন করে অবশিষ্ট অংশগুলো সসম্মানে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা। কেননা প্রয়োজনে কবর খনন করে অত্যন্ত সম্মানের সাথে মৃত মানুষের লাশ বা অবশিষ্ট হাড়গোড় যা পাওয়া যায় সেগুলো অন্য কোথাও দাফন করা জায়েয (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৫১, ১৩৫৩)।
প্রশ্নকারী : বাকী বিল্লাহ খান পলাশ, ফরিদপুর।