উত্তর : ব্যাংক যদি সম্পূর্ণ ইসলামিক হয়, সূদী ব্যাংকের সাথে যদি তার কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকে এবং শরী‘আতের মূলনীতির ভিত্তিতেই যদি বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে সেখানে অর্থ জমা করা জায়েয। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি এমনই ফাৎওয়া দিয়েছেন (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৫-৩৬৬)। ‘ইসলাম ওয়েব’-এর আলিমগণ বলেন, সূদমুক্ত ইসলামী ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে আপত্তিকর নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাংক ইসলামী শরী‘আতের মূলনীতি অনুযায়ী উক্ত বিনিয়োগকৃত অর্থের উপর কাজ করবে বা তাকে বৈধ ও হালাল ব্যবসায় লাগাবে এবং বিনিয়োগকারীকে মূলধনের গ্যারান্টি দিবে না (অর্থাৎ লাভ-লোকসান ও ক্ষতির)। অতঃপর লাভ হলে তা চুক্তি অনুপাতে উভয়ের মধ্যে বণ্টন করে নিবে। চুক্তিপত্রে লাভের শতাংশ উল্লেখ থাকা অপরিহার্য। উপরিউক্ত শর্তানুযায়ী বিনিয়োগ করা এবং লভ্যাংশ গ্রহণ করা বৈধ’ (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৭৮৬৪৭)।
শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, ‘কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ইসলামী ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ করা জায়েয : (১) ব্যাংক যেন বিনিয়োগকৃত অর্থ বৈধ কাজে লাগায়। যেমন উন্নত প্রকল্প স্থাপন, বিল্ডিং নির্মাণ ইত্যাদি। ব্যাংক কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করবে, সেই দিকগুলো যদি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করে, তাহলে এ বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এতে অংশগ্রহণ করা জায়েয হবে না। (২) মূলধনের গ্যারান্টি দেয়া যাবে না। লোকসান বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংক মূলধন ফেরত দিতে বাধ্য হবে না। কারণ এটি বাইয়ে মুযারিবাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আর বাইয়ে মুযারিবাতে বিনিয়োগকারীই লোকসানের ভার নেবে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ৩৩৪)। আর যদি মূলধন গ্যারান্টিযুক্ত হয়, তাহলে সেটি আসলে একটি ঋণের চুক্তি হিসাবে গণ্য হবে এবং এর থেকে আনিত লভ্যাংশ সূদ হিসাবে বিবেচিত হবে। কারণ ব্যবসা লাভ-ক্ষতি উভয়ের সঙ্গে জড়িত। কখনো আংশিক ক্ষতি, আবার কখনো সম্পূর্ণটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া মানে শুধু লভ্যাংশের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট সূদ। (৩) প্রথম থেকেই উভয়ের সম্মতিক্রমে চুক্তিপত্রে লাভের শতাংশ উল্লেখ থাকতে হবে। সূদী ব্যাংকের মত মাসিক বা বাৎসরিক নির্দিষ্ট শতকরা হারে যেন না হয় (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৫১৩৬৬)।
দেশের কোন ব্যাংকই সূদমুক্ত নয়। ইসলামী ব্যাংকগুলো সূদমুক্ত মর্মে প্রচার করলেও শতভাগ সূদমুক্ত নয়। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্তের সাথে চুক্তিবদ্ধ, যা একশ’ভাগ সূদের সাথে জড়িত। তাছাড়া বিনিয়োগকৃত খাতগুলোও গ্রাহকদের কাছে অস্পষ্ট এবং গোপনীয়। অথবা বিনিয়োগও হচ্ছে সূদের ভিত্তিতে। যেমন ব্যাংক মধ্যস্বত্বভোগী বা তৃতীয় পক্ষ হিসাবে কোন কোম্পানি থেকে নির্দিষ্ট মূল্যে পণ্য ক্রয় করে কাস্টমারকে দিল এবং তার থেকে কিস্তিতে বেশী মূল্য নিল। এই কৌশল হারাম। তাই এ ধরনের লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশায় বিনিয়োগ করা সন্দেহজনক। সেজন্য প্রদত্ত লভ্যাংশ ভক্ষণ করা যাবে না। যেহেতু এগুলো পুরোপুরি সূদমুক্ত নয়, তাই কোন মুসলিমের জন্য এরূপ সন্দেহযুক্ত উপার্জন ভক্ষণ করা উচিত নয়। ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালাসমূহের মধ্যে রয়েছে, إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাসআলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায়’। অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে। নবী (ﷺ) বলেন,
إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ
‘নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়। অনেক মানুষই সেগুলোর বাস্তবতা জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে, সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে’ (বুখারী, হা/৫২, ২০৫১; মুসলিম, হা/১৫৯৯)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেন,
دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ
‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল স্বস্তি এবং মিথ্যা হল সন্দেহপূর্ণ’ ((তিরমিযী, হা/২৫১৮; নাসাঈ; হা/৫৭১১, সনদ ছহীহ))। অতএব সচেতন পরহেযগার ব্যক্তির জন্য এ থেকে বিরত থেকে উক্ত অর্থ হালাল ব্যবসায় বিনিয়োগ করাই সর্বাধিক উত্তম।
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, শিবগঞ্জ, বগুড়া।