উত্তর : ছেলে যদি মাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে থাকে তাহলে দাইয়ূছের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এক্ষেত্রে পরিবারের অভিভাবক দাইয়ূছের অন্তর্ভুক্ত হবে। নবী (ﷺ) বলেন, اَلدَّيُّوْثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ ‘দাইয়ূছ’ বলতে বুঝায় ঐ ব্যক্তিকে, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে মেনে নেয়’ (নাসাঈ, হা/২৫৬২; ছহীহুত তারগীব, হা/২৫১২)। তিনি অন্য বর্ণনায় বলেন, الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلٰى أَهْلِهِ ‘দাইয়ূছ’ বলতে বুঝায় ঐ ব্যক্তিকে, যে তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল (অর্থাৎ কে এলো আর গেল) এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ করে না’ (বায়হাক্বী, হা/১০৮০০; ছহীহুত তারগীব, হা/২০১৭, ২৩৬৭)। ‘দাইয়ূছ’ (دَيُّوث) শব্দের আভিধানিক অর্থ হল হিতাহিত জ্ঞানশূন্য, কলুষিত ও কদর্য বিবেকসম্পন্ন, আত্মমর্যাদাহীন, ব্যভিচারের দূত, নারী-পুরুষের অবৈধ মিলনের দূত ইত্যাদি। আর ‘দাইয়ূছ’ শব্দের পারিভাষিক অর্থ হল, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যিনা-ব্যাভিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্মকে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে (আল-মাউসূআতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৯৬)।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, والديوث : الذي لا غيرة له ‘দাইয়ূছ’ বলতে বুঝায়, যার আত্মসম্মানবোধ নেই (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩২তম খণ্ড, পৃ. ১৪১)। অথচ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, الْمُؤْمِنُ يَغَارُ وَاللهُ أَشَدُّ غَيْرًا ‘মুমিন আত্মমর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬১, ৬৮৯২)।
মোদ্দাকথা হল, যে ব্যক্তি তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদেরকে যিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অশ্লীল, গর্হিত-ঘৃণিত, বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনা, অশালীন আচার-আচরণ, ইসলামী শারী‘আহ ও সমাজ বিরোধী কার্যক্রম এবং শাস্তিযোগ্য পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে না, বাধা প্রদান করে না, বরং সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং বোবা শয়তানের ন্যায় বধির ও অন্ধের মত চোখ বুজে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করে আর তাদের অবাধ বিচরণে ও তাদের হীন চরিতার্থ করণার্থে সার্বিকভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে (মির‘আতুল মাফাতীহ্, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৩৯৯; লিক্বাউল বাব আল-মাফতুহ্, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৮; ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৫১১০৪)। এই প্রকৃতির মানুষ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে, কিন্তু তা দিয়ে দর্শন করে না এবং তাদের কর্ণ আছে, কিন্তু তা দিয়ে শ্রবণ করে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়, বরং তা অপেক্ষাও অধিক নিকৃষ্ট! তারাই হল উদাসীন’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৭৯)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যথা ১. দাইয়ূছ, ২. পুরুষের বেশধারী নারী, ৩. মাদকাসক্ত ব্যক্তি। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ‘দাইয়ূছ' কে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘দাইয়ূছ’ বলতে বুঝায় ঐ ব্যক্তিকে, যে তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল (অর্থাৎ কে এলো আর গেল) এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না (বায়হাক্বী, হা/১০৮০০; ছহীহুত তারগীব, হা/২০১৭, ২৩৬৭)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। যথাঃ ১. মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ৩. এমন ‘দাইয়ূছ’ ব্যক্তি, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে মেনে নেয় (নাসাঈ, হা/২৫৬২; মুসনাদ আহমাদ, হা/৫৩৭২, ৬১১৩; ছহীহুল জামি‘, হা/৩০৫২; ছহীহুত তারগীব, হা/২৫১২)।
প্রশ্নকারী : আরাফাত ইসলাম, মিরপুর, ঢাকা।