উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যাদের জন্য ছিয়াম রাখা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য হল এর পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজন মিসকীনকে খাদ্য দ্রব্য প্রদান করা’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪) উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, যাদের জন্য ছিয়াম রাখা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য হল এর পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৩-১৮৪)। ‘এ আয়াতটি মানসূখ (রহিত) নয়, বরং আয়াতটি অতিশয় বৃদ্ধ নর ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যারা ছিয়াম পালনে অক্ষম। তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪৫০৫; নাসাঈ, হা/২৩১৭)। ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অতিশয় বৃদ্ধ নর ও নারীর জন্য ছিয়াম পালন যদি কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয় তবে তাঁরা ছিয়াম পালন না করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবেন। আর তাঁরা যদি মিসকীন খাওয়াতেও অক্ষম হন, তাহলে তাঁদের উপর কোন কিছুই বর্তাবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৬)। আর যে রোগীর আরোগ্য লাভের আশা করা যায় না, সেও ছিয়াম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে। কারণ সে রোগীও বৃদ্ধ লোকের পর্যায়ভুক্ত’ (আল-মুগনী, ৪/৩৯৬ পৃ.)।
শায়খ ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমাদের জানা উচিত যে, রোগী দুই প্রকার। যথা : (ক) এমন রোগী, যার রোগমুক্তির আশা করা যায়। যেমন, সাময়িক রোগ যা থেকে আরোগ্য লাভের আশা করা যায়। এ শ্রেণীর রোগীর হুকুম হল যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪)। এ শ্রেণীর রোগী সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে। এরপর সুস্থ হয়ে ছিয়াম পালন করবে। আর যদি সুস্থ হওয়ার আগেই সে মারা যায়, তবে তার উপর কোন কিছু বর্তাবে না। অর্থাৎ তার পক্ষ থেকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তার উপর অন্য দিনগুলোতে ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করা ফরয করেছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ পাওয়ার আগেই সে মারা গেছে। (খ) এমন রোগী যার রোগ স্থায়ী। যেমন ক্যান্সার, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিকস বা এধরনের অন্যান্য স্থায়ী রোগ যা থেকে রোগীর আরোগ্য লাভের আশা করা যায় না। এ শ্রেণীর রোগী রামাযান মাসে ছিয়াম পালন বর্জন করতে পারবে এবং প্রতিদিনের ছিয়ামের বদলে একজন মিসকীন খাওয়ানো তার উপর আবশ্যক হবে। ঠিক যেমন অতিশয় বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা যারা ছিয়াম পালনে সক্ষম নয় তারা করে থাকেন- ছিয়াম না রেখে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়ান। এর সপক্ষে কুরআনের দলীল হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘আর যাদের জন্য ছিয়াম রাখা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য হল এর পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪; ফাতাওয়াউছ ছিয়াম, পৃ. ১১১)।
উল্লেখ্য যে, খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে অর্থ প্রদান করলে ফিদিয়া আদায় হবে না। মিসকীনকে স্থানীয় খাদ্য দ্রব্য খাদ্য খাওয়াতে বা প্রদান করতে হবে। প্রতিদিনের ছিয়ামের পরিবর্তে স্থানীয় এলাকায় প্রচলিত খাদ্য দ্রব্যের অর্ধ ছা‘ প্রদান করতে হবে। অর্ধ ছা‘ এর পরিমাণ প্রায় দেড় কেজি। অতএব স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়েই ফিদিয়া দিতে হবে, অর্থ দিয়ে নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যাদের জন্য ছিয়াম রাখা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য হল এর পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজন মিসকীনকে খাদ্য দ্রব্য প্রদান করা’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪)। উক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে খাদ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে (আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান, ৩/১৪০ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৬৮৮৬)।
প্রশ্নকারী : তাহমীদ, ঢাকা।