সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:২০ অপরাহ্ন
উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। ২০ রাক‘আত তারাবীহকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য বিদ‘আতীরা নয়া মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। ইতিপূর্বে উক্ত মিথ্যা দাবীর অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ একই ছালাত। এ জন্য মুহাদ্দিছগণ একই হাদীছ ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন, ‘তারাবীহ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০১৩, ১/২৬৯ পৃ., হা/১১৪৭, ১/১৫৪, হা/৩৫৬৯, ১/৫০৪)। রাসূলুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়েননি। প্রশ্নকারী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে রামাযানের রাত্রির ছালাত কেমন ছিল সে বিষয়েই জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর তারই উত্তরে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ১১ রাক‘আতের কথা বলেন। এছাড়া উক্ত উদ্ভট দাবীকে চূর্ণ করেছেন প্রখ্যাত হানাফী বিদ্বান আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন, فِيْهِ تَصْرِيْحٌ أَنَّهُ حَالُ رَمَضَانَ فَإنَّ السَّائِلَ سَأَلَ عَنْ حَالِ رَمَضَانَ وَغَيْرِه ‘এতে পরিষ্কার ব্যাখ্যা রয়েছে যে, এটা রামাযানেরই অবস্থা। কারণ প্রশ্নকারী রামাযানসহ অন্যান্য অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন’ (আল-আরফুশ শাযী শরহে তিরমিযী, ১/১৬৬ পৃ.)।

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৃতীয় দিন ২৭-এর রাত্রে সাহারীর সময় পর্যন্ত তারাবীহর ছালাত দীর্ঘ করেছিলেন, যাতে ছাহাবায়ে কেরাম সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে, فَقَامَ بِنَا حَتَّى خَشِيْنَا أَنْ تَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ ‘আমাদের নিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে ছালাত পড়লেন, যাতে আমরা সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম’ (আবূ দাঊদ, হা/১৩৭৫, ১/১৯৫; তিরমিযী, হা/৮০৬, ১/১৬৬; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১২৯৮, পৃঃ ১১৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৪৯, হা/১২২৪)। তাহলে এই রাতে তাহাজ্জুদ কখন পড়লেন?

অনুরূপ ছাহাবীদের যুগেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই ছালাত বলে গণ্য হত। কারণ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে হাদীছে ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ হাদীছের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘ক্বিরাআত লম্বা হওয়ার কারণে (পরিশ্রান্ত হয়ে) আমরা লাঠির উপর ভর দিতাম এবং ফজরের ছালাতের সময় হওয়ার উপক্রম হলে ছালাত শেষ করে চলে আসতাম’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, ৪/১৮৬ পৃঃ; মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/১১৫ পৃ.; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১৩০২, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৩/১৫২, হা/১২২৮)।

স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়তেন না। অন্য আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,

كَانَ النَّبِىُّ ৎ يُصَلِّىْ مَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشَرَةَ رَكْعَةً

‘নবী করীম (ﷺ) এশার ছালাত শেষ করার পর হতে ফজর পর্যন্ত মাত্র ১১ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮, ১/২৫৪)। উক্ত হাদীছ থেকে আরো স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এশার ছালাতের পর থেকে ফজর পর্যন্ত ১১ রাক‘আতের বেশি ছালাত কখনো পড়তেন না।

অনুরূপ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তারাবীহ্র জামা‘আত পুনরায় চালু করা সংক্রান্ত ছহীহ বুখারীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তাতে একই ছালাতের কথা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, وَالَّتِىْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنْ الَّتِىْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهُ ‘তবে তারা যা পড়ছে তার চেয়ে উত্তম সেটাই, যার জন্য তারা ঘুমাত অর্থাৎ শেষ রাত্রের ছালাত। তবে লোকেরা প্রথমাংশেই পড়ত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০১০; মিশকাত, হা/১৩০১, পৃঃ ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২২৭, ৩/১৫১-৫২)।

হানাফী মাযহাবের পূর্ববর্তী আলেমগণ কেউই উক্ত অপব্যাখ্যা করেননি। বরং তারা সকলেই তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই ছালাত গণ্য করেছেন। এমনকি ২০ রাক‘আতের বর্ণনাটিকে তাঁরা প্রত্যেকেই মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটির বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হেদায়ার ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম, আল্লামা যায়লাঈ, বদরুদ্দীন আয়নী, আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী প্রমুখ (বিস্তারিত দেখুন : ‘তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বই)। তাই আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলেন, تِلْكَ صَلَاةٌ وَاحِدَةٌ إِذَا تَقَدَّمَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّرَاوِيْحِ إِذَا تَأَخَّرَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّهَجُّدِ ‘এটা একই ছালাত; যখন রাতের প্রথমাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তারাবীহ। আর যখন শেষাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তাহাজ্জুদ’ (ফায়যুল বারী, ২য় খ-, পৃ. ৪২০)।

প্রশ্নকারী : মাযহারুল ইসলাম, মৌলভীবাজার।





প্রশ্ন (২৩) : প্রচলিত আছে যে, ‘জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বলেছেন, পৃথিবীতে বৃষ্টি হলে কত ফোটা পানি পড়ে, আমি তা গুণতে পারি, কিন্তু যৌবনের ইবাদতের ছওয়াব গুণে শেষ করতে পারি না’। উক্ত বর্ণনা কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : গাযওয়া হিন্দ‌‌ বা হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনা যায়। এগুলো কি হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : শীতের কারণে কাপড় অথবা চামড়ার মোজা ব্যবহার করা হয়। মোজার উপর কিভাবে কয়দিন যাবত মাসাহ করতে হবে? অনেক বলেন, চামড়ার মোজা ছাড়া মাসাহ করা যাবে না’। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : ছাহাবী ছা‘লাবা ভ সম্পর্কে যাকাত দিতে অস্বীকার করা এবং রাসূল ফ, আবুবকর, ওমর, ওছমান হ তারা কেউ তার যাকাত নেননি বলে যে ঘটনা প্রচলিত আছে, তা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল’-এর একটি প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে কোন এক কোম্পানি একটি ট্রেনিং করাতে যাচ্ছে, যার অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংক। এই ট্রেনিং থেকে অর্জিত অর্থ কি হালাল হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : সন্তান-সন্ততি এবং অর্থ-সম্পদ তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ (আনফাল ২৮; তাগাবুন ১৫)। এ কথার সঠিক ব্যাখ্যা কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : পরীক্ষার্থীদের জন্য বিদায় অনুষ্ঠান করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : ‘জুমু‘আহ মুবারক’- বলা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : ভুল তিলাওয়াতকারী ইমামের পিছনে জেনেশুনে নিয়মিত ছালাত আদায় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : হারাম পথে উপার্জিত সম্পদ দ্বারা হজ্জ করলে হজ্জ হবে কি? সন্তানের উপার্জিত হারাম অর্থ দিয়ে পিতা-মাতা হজ্জ করতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বস্তুটি সৃষ্টি করেছিলেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, কদ্‌র তথা তাক্বদীর সম্পর্কে লিখ। সুতরাং কলম- যা ছিল ও ভবিষ্যতে যা হবে, সবকিছুই লিখে ফেলল (আবূ দাঊদ, হা/৪৭০০; মিশকাত, হা/৯৪)। এ হাদীছ দ্বারা প্রথম সৃষ্টি কোন্টি, তা কিভাবে বুঝব? কারণ প্রথম সৃষ্টি তার আগে যা ছিল তা লিখেছে। সুতরাং প্রথম সৃষ্টি কোনটি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : ‘পিতা-মাতার দু‘আ আল্লাহ তা‘আলা ফিরিয়ে দেন না’ অর্থাৎ তাদের দু‘আ কবুলযোগ্য। প্রশ্ন হল- যাদের পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন- তাদের কবুলযোগ্য দু‘আ প্রাপ্তির জন্য করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ