শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন
উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। ২০ রাক‘আত তারাবীহকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য বিদ‘আতীরা নয়া মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। ইতিপূর্বে উক্ত মিথ্যা দাবীর অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ একই ছালাত। এ জন্য মুহাদ্দিছগণ একই হাদীছ ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন, ‘তারাবীহ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০১৩, ১/২৬৯ পৃ., হা/১১৪৭, ১/১৫৪, হা/৩৫৬৯, ১/৫০৪)। রাসূলুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়েননি। প্রশ্নকারী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে রামাযানের রাত্রির ছালাত কেমন ছিল সে বিষয়েই জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর তারই উত্তরে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ১১ রাক‘আতের কথা বলেন। এছাড়া উক্ত উদ্ভট দাবীকে চূর্ণ করেছেন প্রখ্যাত হানাফী বিদ্বান আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন, فِيْهِ تَصْرِيْحٌ أَنَّهُ حَالُ رَمَضَانَ فَإنَّ السَّائِلَ سَأَلَ عَنْ حَالِ رَمَضَانَ وَغَيْرِه ‘এতে পরিষ্কার ব্যাখ্যা রয়েছে যে, এটা রামাযানেরই অবস্থা। কারণ প্রশ্নকারী রামাযানসহ অন্যান্য অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন’ (আল-আরফুশ শাযী শরহে তিরমিযী, ১/১৬৬ পৃ.)।

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৃতীয় দিন ২৭-এর রাত্রে সাহারীর সময় পর্যন্ত তারাবীহর ছালাত দীর্ঘ করেছিলেন, যাতে ছাহাবায়ে কেরাম সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে, فَقَامَ بِنَا حَتَّى خَشِيْنَا أَنْ تَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ ‘আমাদের নিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে ছালাত পড়লেন, যাতে আমরা সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম’ (আবূ দাঊদ, হা/১৩৭৫, ১/১৯৫; তিরমিযী, হা/৮০৬, ১/১৬৬; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১২৯৮, পৃঃ ১১৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৪৯, হা/১২২৪)। তাহলে এই রাতে তাহাজ্জুদ কখন পড়লেন?

অনুরূপ ছাহাবীদের যুগেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই ছালাত বলে গণ্য হত। কারণ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে হাদীছে ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ হাদীছের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘ক্বিরাআত লম্বা হওয়ার কারণে (পরিশ্রান্ত হয়ে) আমরা লাঠির উপর ভর দিতাম এবং ফজরের ছালাতের সময় হওয়ার উপক্রম হলে ছালাত শেষ করে চলে আসতাম’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, ৪/১৮৬ পৃঃ; মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/১১৫ পৃ.; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১৩০২, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৩/১৫২, হা/১২২৮)।

স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়তেন না। অন্য আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,

كَانَ النَّبِىُّ ৎ يُصَلِّىْ مَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشَرَةَ رَكْعَةً

‘নবী করীম (ﷺ) এশার ছালাত শেষ করার পর হতে ফজর পর্যন্ত মাত্র ১১ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮, ১/২৫৪)। উক্ত হাদীছ থেকে আরো স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এশার ছালাতের পর থেকে ফজর পর্যন্ত ১১ রাক‘আতের বেশি ছালাত কখনো পড়তেন না।

অনুরূপ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তারাবীহ্র জামা‘আত পুনরায় চালু করা সংক্রান্ত ছহীহ বুখারীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তাতে একই ছালাতের কথা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, وَالَّتِىْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنْ الَّتِىْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهُ ‘তবে তারা যা পড়ছে তার চেয়ে উত্তম সেটাই, যার জন্য তারা ঘুমাত অর্থাৎ শেষ রাত্রের ছালাত। তবে লোকেরা প্রথমাংশেই পড়ত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০১০; মিশকাত, হা/১৩০১, পৃঃ ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২২৭, ৩/১৫১-৫২)।

হানাফী মাযহাবের পূর্ববর্তী আলেমগণ কেউই উক্ত অপব্যাখ্যা করেননি। বরং তারা সকলেই তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই ছালাত গণ্য করেছেন। এমনকি ২০ রাক‘আতের বর্ণনাটিকে তাঁরা প্রত্যেকেই মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটির বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হেদায়ার ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম, আল্লামা যায়লাঈ, বদরুদ্দীন আয়নী, আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী প্রমুখ (বিস্তারিত দেখুন : ‘তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বই)। তাই আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলেন, تِلْكَ صَلَاةٌ وَاحِدَةٌ إِذَا تَقَدَّمَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّرَاوِيْحِ إِذَا تَأَخَّرَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّهَجُّدِ ‘এটা একই ছালাত; যখন রাতের প্রথমাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তারাবীহ। আর যখন শেষাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তাহাজ্জুদ’ (ফায়যুল বারী, ২য় খ-, পৃ. ৪২০)।

প্রশ্নকারী : মাযহারুল ইসলাম, মৌলভীবাজার।





প্রশ্ন (৫) : যিলহজ্জ মাসের প্রতিটি দিনের ছিয়াম এক বছরের ছিয়ামের সমতুল্য। এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লায়লাতুল ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য। উক্ত মর্মে হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : কুরবানী করার সময় কোন্ দু‘আ পড়তে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : মাদরাসায় যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি? মাদরাসার ভবন নির্মাণ বা জমি কেনার কাজে ব্যবহার করলে বৈধ হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : জুতা পরা ও খুলার সময় কোন্ পা আগে দিতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : ইসলামে মধ্যমপন্থা অবলম্বন বলতে কী বুঝায়? অনেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম মনে করেন মধ্যমপন্থা মানে যে সমাজ যে রকম, সেখানে সেভাবে নিজেকে মানিয়ে নেয়া। যেমন- প্রয়োজন অনুযায়ী পারিবারিক সমাবেশে গায়রে মাহরাম কাজিনদের সাথে খোশগল্প করা, মসজিদে গেলে পাঞ্জাবি-পায়জামা (ছেলেদের ক্ষেত্রে) অথবা খিমার, নিকাব (মেয়েদের ক্ষেত্রে) অন্যদিকে অনুষ্ঠানে গেলে যথাক্রমে গেঞ্জি-টাইট প্যান্ট (ছেলে) অথবা শুধু হিজাব (মেয়ে) পরা, ইত্যাদি। অন্যদিকে যারা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সঠিকভাবে চোখের হেফাযত করে, ফেৎনা থেকে বাঁচার জন্য পর্দার বিধান মেনে চলে তাদেরকে অনেকে অসামাজিক, বিভ্রান্ত, কট্টরপন্থী ইত্যাদি টাইটেলে আখ্যা দিয়ে থাকে। তাদের উক্ত  দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : ওযূর সময় কি সালাম দেয়া ও নেয়া যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট দিয়ে কোন ইহুদী বা খ্রিস্টান বা মুসলিমের লাশ অতিক্রম করবে, তখন তোমরা তার জন্য দাঁড়াবে। এটা তার সম্মানে নয়, তোমরা মূলত ফেরেশতাদের সম্মানার্থে দাঁড়াও’ (মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৫০৯) মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : কাঁকড়া খাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : কুরআনে বলা আছে, যারা জাহান্নামে যাবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু ছহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, আল্লাহ এক সময় মুসলিম জাহান্নামীদেরকে মাফ করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাহলে কি এই হাদীছটি কুরআনের ঐ আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : ছালাত কি ব্যক্তিগত ইবাদত? কারণ অনেককে ছালাতের জন্য ডাকলে তারা বলে, নামাজ পড়া না পড়া আমার ব্যাপার। এ ধরনের কথা বলা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৮) : প্রচলিত আছে যে, সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ উপলক্ষে জন্মের সপ্তম দিন অথবা অন্য কোন দিনে গ্রামের মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে খাবার অনুষ্ঠান করা যায়। যাকে ‘সাথলা’ নামকরণ করা হয়। প্রশ্ন হল, উক্ত অনুষ্ঠান করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : জানাযার ছালাতে দাঁড়ানোর সময় পায়ে পায়ে মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ