বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। ২০ রাক‘আত তারাবীহকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য বিদ‘আতীরা নয়া মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে। ইতিপূর্বে উক্ত মিথ্যা দাবীর অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ একই ছালাত। এ জন্য মুহাদ্দিছগণ একই হাদীছ ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন, ‘তারাবীহ’ অধ্যায়েও বর্ণনা করেছেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০১৩, ১/২৬৯ পৃ., হা/১১৪৭, ১/১৫৪, হা/৩৫৬৯, ১/৫০৪)। রাসূলুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়েননি। প্রশ্নকারী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে রামাযানের রাত্রির ছালাত কেমন ছিল সে বিষয়েই জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর তারই উত্তরে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ১১ রাক‘আতের কথা বলেন। এছাড়া উক্ত উদ্ভট দাবীকে চূর্ণ করেছেন প্রখ্যাত হানাফী বিদ্বান আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন, فِيْهِ تَصْرِيْحٌ أَنَّهُ حَالُ رَمَضَانَ فَإنَّ السَّائِلَ سَأَلَ عَنْ حَالِ رَمَضَانَ وَغَيْرِه ‘এতে পরিষ্কার ব্যাখ্যা রয়েছে যে, এটা রামাযানেরই অবস্থা। কারণ প্রশ্নকারী রামাযানসহ অন্যান্য অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন’ (আল-আরফুশ শাযী শরহে তিরমিযী, ১/১৬৬ পৃ.)।

অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৃতীয় দিন ২৭-এর রাত্রে সাহারীর সময় পর্যন্ত তারাবীহর ছালাত দীর্ঘ করেছিলেন, যাতে ছাহাবায়ে কেরাম সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে, فَقَامَ بِنَا حَتَّى خَشِيْنَا أَنْ تَفُوْتَنَا الْفَلَاحُ ‘আমাদের নিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় ধরে ছালাত পড়লেন, যাতে আমরা সাহারী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম’ (আবূ দাঊদ, হা/১৩৭৫, ১/১৯৫; তিরমিযী, হা/৮০৬, ১/১৬৬; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১২৯৮, পৃঃ ১১৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ৩/১৪৯, হা/১২২৪)। তাহলে এই রাতে তাহাজ্জুদ কখন পড়লেন?

অনুরূপ ছাহাবীদের যুগেও তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই ছালাত বলে গণ্য হত। কারণ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যে হাদীছে ১১ রাক‘আত তারাবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, ঐ হাদীছের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘ক্বিরাআত লম্বা হওয়ার কারণে (পরিশ্রান্ত হয়ে) আমরা লাঠির উপর ভর দিতাম এবং ফজরের ছালাতের সময় হওয়ার উপক্রম হলে ছালাত শেষ করে চলে আসতাম’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, ৪/১৮৬ পৃঃ; মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/১১৫ পৃ.; সনদ ছহীহ, মিশকাত, হা/১৩০২, পৃ. ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৩/১৫২, হা/১২২৮)।

স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়তেন না। অন্য আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,

كَانَ النَّبِىُّ ৎ يُصَلِّىْ مَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ إِحْدَى عَشَرَةَ رَكْعَةً

‘নবী করীম (ﷺ) এশার ছালাত শেষ করার পর হতে ফজর পর্যন্ত মাত্র ১১ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮, ১/২৫৪)। উক্ত হাদীছ থেকে আরো স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এশার ছালাতের পর থেকে ফজর পর্যন্ত ১১ রাক‘আতের বেশি ছালাত কখনো পড়তেন না।

অনুরূপ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর তারাবীহ্র জামা‘আত পুনরায় চালু করা সংক্রান্ত ছহীহ বুখারীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তাতে একই ছালাতের কথা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, وَالَّتِىْ يَنَامُوْنَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنْ الَّتِىْ يَقُوْمُوْنَ يُرِيْدُ آخِرَ اللَّيْلِ وَكَانَ النَّاسُ يَقُوْمُوْنَ أَوَّلَهُ ‘তবে তারা যা পড়ছে তার চেয়ে উত্তম সেটাই, যার জন্য তারা ঘুমাত অর্থাৎ শেষ রাত্রের ছালাত। তবে লোকেরা প্রথমাংশেই পড়ত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০১০; মিশকাত, হা/১৩০১, পৃঃ ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১২২৭, ৩/১৫১-৫২)।

হানাফী মাযহাবের পূর্ববর্তী আলেমগণ কেউই উক্ত অপব্যাখ্যা করেননি। বরং তারা সকলেই তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই ছালাত গণ্য করেছেন। এমনকি ২০ রাক‘আতের বর্ণনাটিকে তাঁরা প্রত্যেকেই মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছটির বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন হেদায়ার ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম, আল্লামা যায়লাঈ, বদরুদ্দীন আয়নী, আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী প্রমুখ (বিস্তারিত দেখুন : ‘তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বই)। তাই আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলেন, تِلْكَ صَلَاةٌ وَاحِدَةٌ إِذَا تَقَدَّمَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّرَاوِيْحِ إِذَا تَأَخَّرَتْ سُمِّيَتْ بِاِسْمِ التَّهَجُّدِ ‘এটা একই ছালাত; যখন রাতের প্রথমাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তারাবীহ। আর যখন শেষাংশে পড়া হবে, তখন তার নাম হবে তাহাজ্জুদ’ (ফায়যুল বারী, ২য় খ-, পৃ. ৪২০)।

প্রশ্নকারী : মাযহারুল ইসলাম, মৌলভীবাজার।





প্রশ্ন (২৪) : কুরআনে বলা আছে, যারা জাহান্নামে যাবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু ছহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, আল্লাহ এক সময় মুসলিম জাহান্নামীদেরকে মাফ করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাহলে কি এই হাদীছটি কুরআনের ঐ আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : জামা‘আতে ছালাত আদায়ের সময় ইমাম ও মুক্তাদী কখন কাতারে দাঁড়াবে এবং ইক্বামত কখন দিতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : খেলার মাঠে আল্লাহর শোকর আদায় করে খেলোয়াড়রা যে সিজদাহ করে সেটা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫) : অনেক সময় আমরা মসজিদে দুখূলুল মসজিদ বা অন্য কোন সুন্নাত ছালাত আরম্ভ করি এমতাবস্থায় ইক্বামত দিয়ে দেয়। তখন আমরা সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামা‘আতে শামিল হয়ে যাই। ফরয ছালাতের পরে সেই ছুটে যাওয়া সুন্নাত কি আবার পড়তে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৭) : সুতায় দু‘আ পড়ে অনেকে গিট দেয় এবং গলায় দেয়। এটা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ছালাত বিলম্বে আদায় করার সময় যদি কোন মহিলা ঋতুবতী হয়ে যায়, তাহলে ঐ ছালাত কখন আদায় করবে? পবিত্র হওয়ার পর কি ঐ ছালাত ক্বাযা করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : ‘ফাজায়েলে আমল’ নামক বইয়ের ৪৭৭ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ‘শিশুদেরকে সর্বপ্রথম ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ বাক্য শিক্ষা দাও এবং মৃত্যুর সময়ও ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ তালক্বীন করাও। কারণ যার প্রথম এবং শেষ বাক্য ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ হবে, সে এক হাজার বছর বেঁচে থাকলেও একটি পাপ সম্পর্কেও তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না’। উক্ত বর্ণনাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : নেকির আশায় হাতের আঙ্গুলে গুণে গুণে দু‘আ ও যিকির করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) কোন্ কোন্ শস্যের যাকাত প্রদান করা ফরয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে এক মহিলা গর্ভবতী হয় এবং অবৈধ বাচ্চা হয়, যার বাবার পরিচয় নেই। এদিকে অবৈধ সন্তান নাকি ইসলাম বিদ্বেষী হয়। আবার বাচ্চাকে হত্যা করাও যাবে না। এমতাবস্থায় করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : কিছু আতর আছে, যা অনেক দামী। প্রশ্ন হল- দামী আতর কিনলে কি তা অপচয় হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : একজন মেয়ে বিয়ে হওয়ার পরে তার স্বামীর হুকুম মানবে, না পিতার হুমুক মানবে? যদি পিতার অবাধ্য হয় তাহলে কি সে গুনাহগার হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ