উত্তর : সালাফগণ গানের মত সুর করে অধিক টেনে বক্তব্য দেয়াকে পসন্দ করতেন না। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন খুৎবা (ভাষণ) দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করত, কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ ও জোরালো হত এবং তাঁর ক্রোধ তীব্র আকার ধারণ করত, এমনকি মনে হত, তিনি যেন সেনাবাহিনীকে সতর্ক করছেন আর বলছেন, তোমরা ভোরে-ই আক্রান্ত হবে, তোমরা সন্ধ্যাতে-ই আক্রান্ত হবে... (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭; নাসাঈ, হা/১৫৭৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬৩০, ১৪৯৮৪)। ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমি পসন্দ করি, সম্ভব হলে বক্তা যেন উচ্চৈঃস্বরে বক্তব্য দেন, যাতে উপস্থিত শ্রোতারা এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত শুনতে পায়। আমি চাই তার কথাগুলো সহজ-সরল ও স্পষ্ট হোক, যা কোন জটিলতা ছাড়া-ই বোধগম্য হয়। বক্তব্য যেন দীর্ঘ প্রসারিত করে ও টেনে টেনে না দেয়া হয়। কেননা এরূপ টেনে বক্তব্য দেয়া অপসন্দনীয়। আবার বুঝতে অসুবিধা হওয়ার মত তাড়াহুড়াও যেন না করা হয়। বিশুদ্ধ ভাষায় সুস্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে। আমি পসন্দ করি, যেন তার কথাগুলো বিশুদ্ধ, প্রজ্ঞাপূর্ণ, অলঙ্কারপূর্ণ, সর্বব্যাপী, বহুমুখী, সমন্বিত, স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয়’। ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ)ও একই মন্তব্য করেছেন (কিতাবুল উম্ম, ১/২৩০, ৩৪৩ পৃ.; আল-মুগনী, ৩/১৮০ পৃ.; আল-মুহাযযাব, ১/৩৭০ পৃ.)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ আর-রামলী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সর্বাধিক উত্তম এটাই যে, বক্তব্যটি যেন সুস্পষ্ট, বিশুদ্ধ, তত্ত্বসমৃদ্ধ, অলঙ্কারপূর্ণ, সাজানো-গোছানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। যেন তা চিৎকার করে ও দীর্ঘ করে টেনে না দেয়া হয়। কেননা এমনটি করা অনুচিত। তার মধ্যে যেন অশ্লীল, অশ্রাব্য, উদ্ভাবিত, মিথ্যা ও বানোয়াট শব্দ প্রয়োগ না করা হয়। কারণ এগুলো সম্পূর্ণরূপে মানুষের অন্তরে অবতরণ করতে ও অবস্থান করতে সক্ষম হয় না এবং আত্মার মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে পারে না। ফলে বক্তৃতার আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হয়’ (কিতাবুল মাজমূঊ, ৪/৩৫৬-৩৫৮ ও ৪০০ পৃ.; নিহায়াতুল মুহতাজ, ২/৩২৬ পৃ.)।
ইমাম বাগাভী বলেন, ‘মাত্রাধিক শব্দকে টেনে এবং গানের সুরে শব্দকে তরঙ্গায়িত করে বক্তব্য দেয়া নিষেধ’ (আত-তাহযীব, ২/৩৪২ পৃ.)। শায়খ আলী মাহফূয ও শায়খ বাকর আবূ যায়দ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুর করে বক্তব্য দেয়া বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত’ (আল-ইবদা‘, পৃ. ৪৫; তাছহীহুদ দু‘আ, পৃ. ৪৫৫)। ইমাম ইবনুল জাওযী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) সুর করে বক্তব্য দেয়ার প্রসঙ্গে চিন্তা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘সমাবেশ ও ওয়ায-মাহফিলে যেগুলো ঘটছে, আমি তা নিয়ে চিন্তিত। যেগুলোকে সাধারণ মানুষ এবং নির্বোধ, মূর্খ ও অজ্ঞ আলিমরা নৈকট্য লাভের মাধ্যম বলে বিশ্বাস করে, অথচ সেগুলো অস্বীকৃত, প্রত্যাখ্যাত ও মন্দ কাজ। এটি কতটা আশ্চর্যের বিষয়! যে একজন আবৃত্তিকারী উৎফুল্ল হয়ে গানের সুর বের করে, একজন ধর্ম প্রচারক মাহফিলে লায়লী মাজনুর প্রেমের গান গায় আর শ্রোতাদের মধ্যে কেউ আবেগে উম্মাদ হয়ে হাততালি দেয়, আবার কেউ পোশাক ছিড়ে ফেলে। প্রকাশ থাকে যে, এই সুরগুলো মূলত গানের-ই সুর, যা আত্মাকে আনন্দিত ও উত্তেজিত করে এবং মানুষকে ভ্রষ্টতা ও দুর্নীতির দিকে ধাবিত করে। সুতরাং এই সমস্ত মাহফিলের সংস্পর্শে আসা একটি মারাত্মক ভুল’ (ছাইদুল খাত্বীর, পৃ. ১০৭)।
প্রশ্নকারী : মিলন, গাইবান্ধা।